বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) ঢাকা মহানগর হাকিম মোয়াজ্জেম হোসেনের কাছে ৫ দিনের রিমান্ড শেষে তিনি এ স্বীকারোক্তি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
স্বীকারোক্তিতে তিনি জানিয়েছেন, ফাহাদকে মো. অনিক সরকার যেভাবে মারছিলেন তা দেখে ওই কক্ষে থাকা ছাত্রলীগের অন্য নেতাকর্মীরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন।
সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে রবিন ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনার সঙ্গে তার নিজের জড়িত থাকাসহ জড়িত অন্য আসামিদের নাম প্রকাশ করেছেন। রবিন বলেছেন, ৪ অক্টোবর শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে নির্দেশনা আসে- ‘ফাহাদ শিবির করে, তাকে ধরতে হবে।’ এরপর মেসেঞ্জার গ্রুপে অন্য ছাত্রলীগ নেতারা সাড়া দেন। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা লেখেন ‘ওকে বাড়ি থেকে ফিরতে দেন।’
রবিন জবানবন্দিতে আরও বলেন, তার নির্দেশেই ৬ অক্টোবর রাত ৮টার কিছু পর ফাহাদকে ২০১১ নম্বর কক্ষে ধরে আনা হয়। কিছুক্ষণ পর তিনি (রবিন) ওই রুমে গিয়ে দেখেন ফাহাদের দুটি মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ চেক করছেন ছাত্রলীগ নেতা মুজতবা রাফিদ, তানভীর ও মুনতাসির আল জেমি।
এ সময় তিনি (রবিন) ছাত্রলীগ নেতাদের বলেন, কারা কারা বুয়েটে শিবির করে তা বের করতে। এ সময় তিনি ফাহাদকে কয়েকটি চড়থাপ্পড় মারেন।
রবিন আরও বলেছেন, যে কক্ষে ফাহাদকে ধরে আনা হয় সেখানে কোনো ক্রিকেট স্টাম্প ছিল না। পরে বাইরে থেকে সামসুল আরেফিন রাফাত স্টাম্প এনে সকালের হাতে তুলে দেন। সকাল স্টাম্প দিয়ে কয়েকটি আঘাত করেন ফাহাদকে। অন্যরাও মারতে থাকেন। নির্যাতনের সময় সবচেয়ে বেশি মারধর করেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মো. অনিক সরকার। তিনি ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে আবরারের হাঁটু, পা, পায়ের তালুতে পেটান। সকালও ফাহাদের হাঁটু ও পায়ে আঘাত করেন।
রবিন বলেছেন, তাদের ধারণাতেও ছিল না নির্যাতনে ফাহাদ মারা যাবেন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে ফাহাদ অনিক ও সকালের পা জড়িয়ে ধরে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন।
রবিন জবানবন্দিতে আরও বলেছেন, অনিক সরকার ক্রিকেটের স্টাম্প দিয়ে শতাধিক আঘাত করেন। তিনি এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। তার মারধর দেখে রুমে থাকা ছাত্রলীগ নেতারা ভয় পেয়ে যান। রাত আনুমানিক ১২টার দিকে অনিক মারধর থামিয়ে বাইরে চলে যান। ফাহাদ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে গোসল করিয়ে হাতে-পায়ে মলম লাগিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় বারবার বমি করছিলেন তিনি। এক পর্যায়ে তাকে ২০০৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে শুইয়ে দেওয়া হয়। এ সময় অমিত সাহা এসএমএস দিয়ে ফাহাদকে পিটিয়ে তথ্য বের করতে বলেন।
গত ৮ অক্টোবর রবিনসহ ১০ আসামির ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এ নিয়ে মামলাটিতে ৫ আসামি দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিলেন। অন্য ৪ জন হলেন- বুয়েট ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ইফতি মোশাররেফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন ও শিক্ষার্থী মুজাহিদুর রহমান।
এছাড়া রিমান্ড শেষে কারাগারে রয়েছেন- বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহতামিম ফুয়াদ, কর্মী মুনতাসির আল জেমি, গ্রন্থ ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও মিজানুর রহমান।
রিমান্ডে রয়েছেন বুয়েট ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা, বুয়েটের শিক্ষার্থী শামীম বিল্লাহ, আবু হুরায়রা মুয়াজ, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, সামছুল আরেফিন রাফাত ও হোসেন মোহাম্মাদ তোহা।
নিহত ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) ছাত্র ছিলেন। তিনি থাকতেন বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলার ১০১১ নম্বর কক্ষে। গত ৬ অক্টোবর একই হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে তাকে নির্যাতনে হত্যা করে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। পরে তার বাবা বরকতউল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন।
Leave a Reply