অসাম্প্রদায়িক চেতনায় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেটের সময় : সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৯
  • ১৮২

বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এসব নাগরিক ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করছে। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ একসঙ্গে শান্তিতে বসবাস করছেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়াই বড় অর্জন। বাংলাদেশ এভাবে এগিয়ে যাবে, এটা আমরা বিশ্বাস করি।’ সোমবার (৭ অক্টোবর) শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে রামকৃষ্ণ মঠ, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, ঢাকা পূজামণ্ডপ ও রামকৃষ্ণ মিশনের পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় সনাতন ধর্মালম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আমাদের উৎসবগুলোয় সবাই আমরা এক হয়ে উদযাপন করি। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন, আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে চলতে শিখেছি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার। বাংলাদেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এক হয়ে আমরা পথ চলি।’

বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে চমৎকার একটি পরিবেশ হয় যখন, ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়, হিন্দু সম্প্রদায়ের যুব সমাজ সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে। আবার যখন পূজা-পার্বণ হয়, মুসলমান সমাজের যুবকরা সেখানে উপস্থিত থাকেন, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করতে পারি। এটাই হচ্ছে সব ধর্মের মূলকথা—শান্তি, মানবতা। এই শান্তি, মানবতার লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘প্রত্যেকের ধর্মকে আমরা সম্মান করি। আমরা চাই, আমাদের দেশে শান্তি বজায় থাকুক। এদেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, মাদক, দুর্নীতিসহ রাষ্ট্র ও সমাজ বিনষ্টকারী ঘটনা ও উপাদান যেন না থাকে, সরকার সে চেষ্টা করে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে শান্তি বজায় থাকবে। বাংলাদেশের সমৃদ্ধি হবে। বাংলাদেশের উন্নতি হবে। বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে এটাই আমরা চাই।’

রামকৃষ্ণ মিশনে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকার প্রধান স্বামী পুণ্যাত্মানন্দজী মহারাজ।

পরে ঢাকেশ্বরী মন্দির ও পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের সময়ও বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এই দুই স্থানে মহান মুক্তিযুদ্ধে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের সব ধর্মের মানুষ, অর্থাৎ হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান- সব ধর্ম এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে বুকের রক্ত বিলিয়ে দিয়ে এই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে।’ তিনি বলেন, ‘সেই স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা সবসময় চেয়েছি, প্রতিটি ধর্মের মানুষ তার নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে, সম্মানের সঙ্গে পালন করতে পারবে। সেই পরিবেশটা সৃষ্টি করা। আমরা তা করতে পেরেছি। অন্তত এটুকু বলতে পারি, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তখনই সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।’

সম্প্রীতি-সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পূজায় আপনারা প্রার্থনা করবেন, যেন বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে। এই যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে যার যার ধর্ম পালন করার চমৎকার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পেরেছি, এটি যেন চিরদিন অব্যাহত থাকে। আর সবার জীবন-মান যেন উন্নত হয়।’

দিল্লি সফরে থাকার সময় সেখান থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ যৌথভাবে রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্রাবাস এবং একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর দেশের মানুষ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা প্রায় হারিয়ে ফেলেছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে জাতির পিতার আর্দশ চেতনা ধারণ করে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি অসাম্প্রদায়িক চেতনায়। যেখানে সব ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে পারবে। সবাই উৎসব উদযাপন করতে পারবে। সে কারণে আমরা এই স্লোগানটা নিয়ে এসেছি, ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’

পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি, মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার প্রমুখ।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১
Design and Developed by IT Craft in association with INTENT