সাতক্ষীরার আগরদাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আনারুল ইসলামকে তার বাড়ি থেকে অপহরণ ও গুম করে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযোগে সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, তৎকালীন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সদর সার্কেল কাজী মনিরুজ্জামান, সদর থানার ওসি মোঃ ইনামুল হক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সদ্য সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধ আদালতে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।
বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুরে সাতক্ষীরার আমলি আদালত-১ এ মামলাটি দায়ের করেন সদর উপজেলার কাশেমপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান সানার পুত্র ও নিহত আনারুল ইসলামের ভাই জিয়ারুল ইসলাম।
আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নয়ন বড়াল মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য সাতক্ষীরা সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। ২০১৩ সালের ৩০ডিসেম্বর নিজ বাড়ি কাশেমপুর থেকে আনারুলকে অপহরণ করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর সদর উপজেলার আগরদাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আনারুল ইসলামকে তার নিজ বাড়ি কাশেমপুর থেকে সকাল ৯টার দিকে দুটি মাইক্রোবাসে অপহরণ ও গুম করে নিয়ে যায় তৎকালীন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, সদর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, সদর থানার ওসি মোঃ ইনামুল হক, এস আই হেকমত আলীসহ অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জন।
তারা তাকে প্রথমে সদর থানা নিয়ে তার দুই হাত ও দুই পা পিটিয়ে ভেঙ্গে দেয়। এরপর গভীর রাতে থানা থেকে চোঁখ বেধে সদর উপজেলার শিকড়ি নামক স্থানে ফাঁকা মাঠে নিয়ে তৎকালীন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, সদর সার্কেল কাজী মনিরুজ্জামানসহ তার সাথে অন্যান্য সদস্যরা তার বুকের ডান দিকে দুটি ও বাম দিকে দুটি এবং ঘাড়ে ও মাথায় আরো দুটি গুলি করে তাকে হত্যা করে।
একপর্যায়ে নিহতের ভাই এ মামলার বাদী জিয়ারুল ও তার স্বজনরা জানতে পারেন তারা তাকে হত্যা করে সদর হাসপাতালে রেখেছে। পরদিন ৩১ ডিসেম্বর নিহতের স্বজনরা দুপুর দেড়টার দিকে উক্ত আসামীদের কাছ থেকে তার মরদেহ গ্রহণ করেন এবং জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করেন।
মামলায় আরো উল্লেখ করা হয় তৎকালীন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, সদর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান ও সদর থানার ওসি মোঃ ইনামুল হক বাকী ১৫ আসামীর ইন্ধনে, প্ররোচনায় ও সক্রিয় সহযোগিতায় এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছেন।
এ মামলার এজাহার নামীয় অন্যান্য আসামিরা হলেন, সাবেক জিপি এড. গাজী লুৎফর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবু আহমেদ, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান বাবু, আওয়ামী লীগ নেতা শওকত আলী, যুবলীগ নেতা আব্দুল মান্নান, তার ভাই আব্দুল হান্নান, আওয়ামী লীগ নেতা হবিবার রহমান, মাহাবুবুর রহমান, হাশেম আলী, তহিদুল ইসলাম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম মোর্শেদ, রবিউল ইসলাম ও ইয়াহিয়া গাজী। এ মামলায় অজ্ঞতানামা আরো ৪ থেকে ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বাদী পক্ষের আইনজীবি এড. আনিসুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ মামলার বাদীসহ নিহতের আত্মীয় স্বজন মামলা দায়েরের জন্য সদর থানায় কয়েকদফা গিয়েও মামলা গ্রহণ না করায় এবং পুলিশসহ আসামীগণের হুমকির কারনে এতদিন আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তণ হওয়ায় মামলাটি দায়ের দায়ের করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এমামলা দায়েরের সময় তার সহযোগি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন, এড. এবিএম সেলিম, এড. আকবর আলীসহ অন্যান্যরা।
Leave a Reply