বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার ১০ ছাত্রলীগ নেতা হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) হত্যার দায় স্বীকার করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম।
রবিবার (৬ অক্টোবর) রাতে ছাত্র শিবির সন্দেহে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। রাত ৮টা থেকে আবরার নিখোঁজ ছিল বলে সহপাঠীরা জানায়। অন্যদিকে অভিযোগ উঠেছে, রাত ৮টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আবরার ফাহাদকে নির্যাতন করা হয় ২০১১ নম্বর রুমে। এই রুমেই ফাহাদকে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে। রুমটি থেকে লাঠি, ক্রিকেট খেলার স্টাম্প, চাপাতিসহ নানা আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশ।
এ দিকে রবিবার মধ্যরাতে বুয়েটের সাধারণ ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবরারকে শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়। সোমবার (৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় সোমবার রাতে নিহত ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আটক ১০ জনকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় বলে জানিয়েছেন লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম।
গ্রেফতাররা হচ্ছেন-বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুস্তাকিম ফুয়াদ, উপ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিওন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, গ্রন্থনা ও গবেষণা সম্পাদক ইশতিয়াক মুন্না, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুনতাসির আলম জেমি (২১), মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির (২১), ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ (২১), মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মেহেদী হাসান রবিন (২২)।
এদিকে নিহত ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরে বাংলা হলের নিচতলায় ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই মোড়ে। রবিবার রাতে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী।
আবরার ফাহাদের হত্যার ঘটনার পিছনের মূল কারণ তার ফেসবুক স্ট্যাটাস বলে তার সহপাঠীরাসহ বুয়েট ক্যাম্পাসের অনেকেই দাবি করেছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাম্প্রতিক কিছু চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে আবরারের কিছু স্ট্যাটাস এই হত্যার কারণ বলে সোমবার দিনভর বুয়েটের ক্যাম্পাসে আলোচনা হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা চলছে।
Leave a Reply