বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষটি ছিল বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের টর্চার সেল। যেই রুমে ডেকে নিয়ে রবিবার (৬ অক্টোবর) রাতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে। তাকে এই রুমে ডেকে নিয়ে নির্যাতনের পরিকল্পনার ছক করা হয় আরও আগেই।
বুয়েট ছাত্রলীগের সিক্রেট মেসেঞ্জার গ্রুপে হয় এমন পরিকল্পনা। এ বিষয়ে এবার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। ঘটনার একদিন আগে শনিবার (৫ অক্টোবর) দুপুর পৌনে ১টায় সিক্সটিন ব্যাচকে মেনশন করে সেই সিক্রেট গ্রুপে মেহেদী হাসান রবিন লেখেন, সেভেন্টিনের আবরার ফাহাদকে মেরে হল থেকে বের করে দিবি দ্রুত। ২ দিন টাইম দিলাম।
এই নির্দেশনার পরদিন রবিবার রাত ৭টা ৫২ মিনিটে সবাইকে হলের নিচে নামার নির্দেশ দেন মনিরুজ্জামান মনির। রাত ৮টা ১৩ মিনিটে আবরারকে নিজ কক্ষ থেকে ডেকে করিডোর দিয়ে দোতলার সিঁড়ির দিকে নিয়ে যান সাদাত, তানিম, বিল্লাহসহ কয়েকজন। এরপর রাত ১টা ২৬ মিনিটে ইফতি মোশাররফ সকাল ম্যাসেঞ্জারে লেখেন, মরে যাচ্ছে, মাইর বেশি হয়ে গেছে।
এদিকে আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রকাশিত সিসি টিভি ফুটেজে দেখা যায়, ওইদিন রাত ১২টা ২৩ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডে আশিকুল ইসলাম বিটু ২০১১ নম্বর রুমের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন। এর প্রায় ৭ মিনিট পর তিনি বেড়িয়ে যান।
শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর হলে ওইদিন রাতে কি ঘটেছিল এর লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী বিটু বলেন, মনির জেমি আর তানিমকে ফোন দিয়ে বলে আবরারকে ডেকে আনো ২০১১ নম্বর রুমে। পরে দেখলাম ২জন ওর দুটা ফোন ও ল্যাপটপ চেক করছে। কোথায় আবরার লাইক দেয় বা কমেন্ট করে অথবা কাদের সাথে ম্যাসেঞ্জারে কথা বলে এগুলো নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। এরপরে আমি রুম থেকে বের হয়ে যাই। পরে ১২টা ৩০ এর দিকে আমি আবার রুমে আসি আমার ল্যাপটপ ও বই নিতে। আমি রুমের ভিতরে ঢুকে দেখলাম যে আবরার একদম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে। সেখানে আবরার এর ব্যাচেরও ৭-৮ জন ছিল। পরে রুম থেকে বের হয়ে সকালকে প্রশ্ন করি, এমন কিভাবে হলো? তখন মুনির উত্তর দিলো বললো যে অনিক ভাই মাতাল অবস্থায় একটু বেশি মারছে। তখন ওখানে থাকা আমার জন্য সুরক্ষিত না ভেবে তখনই আমি ওখান থেকে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে আসি।
তবে আবরারকে নির্যাতনের খবর কাউকে জানাননি কেনো এমন প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর দিতে না পারলেও বিটু দাবি করেন, এমন অনেক সময়ই হলে হয়, তবে আবরার যে মারা গেছে তাও না। তখনো ওকে মেডিকেলে নিয়ে গেলে হয়তো বাচানো যেত।
অন্যদিকে আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলার এজাহারে না থাকলেও অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার আইন বিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহার বিরুদ্ধে। এই নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনাও হয়। কেননা ২০১১ নম্বর কক্ষের একজন আবাসিক ছাত্র ছিলেন তিনি। এ বিষয়ে বুয়েটের এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, অমিত সাহার নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল ২০১১ নম্বর কক্ষটি। ঘটনার সময় তার নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কর্মীরা আবরারকে বেদম মারধর করেন। পরে তিনিসহ অন্যরা বেরিয়ে যান। ওই কক্ষ থেকে পুলিশ রক্তমাখা স্টিক, ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করে। এই রুমে শুধু আবরারকেই নয়, আরো অনেককেই এনে নির্যাতন করা হতো। যার কক্ষে এ ঘটনা ঘটল তাকে আসামি না করা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
এবার ছাত্রলীগের সিক্রেট মেসেঞ্জার গ্রুপে মিলেছে অমিত সাহার সক্রিয় থাকার তথ্য। নিজ রুমে এমন হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই তিনি ছিলেন আত্মগোপনে। গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে তিনি দাবি করেন, ২০১১ নম্বর রুমে অমিত থাকে এমন তথ্য উঠে আসাতেই আমি আলোচনায় এসেছি।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে অমিত সাহাকে রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।
Leave a Reply