বৈশ্বিক তাপমাত্রা রেকর্ডের ইতিহাসে এবার সবচেয়ে উষ্ণতম এপ্রিল দেখলো বিশ্ব। একইসঙ্গে তাপমাত্রা রেকর্ড তালিকায় ২০২৪ সালের প্রতিটি মাস আগের বছরগুলোর একই মাসের তুলনায় গ্রহের সবচেয়ে উষ্ণতম হিসেবে রেকর্ড গড়েছে। বুধবার (৮ মে) এই তথ্য জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু পরিবর্তন মনিটরিং পরিষেবা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে।
একটি মাসিক বুলেটিনে কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (সি৩এস) বলেছে, ২০২৩ সালের জুনের পর থেকে প্রতিটি মাস আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গ্রহের সবচেয়ে উষ্ণতম ছিল।
সি৩এস-এর ডাটাসেটে থাকা ১৯৪০ সালের অন্যান্য ডাটার সঙ্গে ক্রসচেক করে গত মাসটিকে প্রাক-শিল্প সময়ের থেকে সবচেয়ে উষ্ণ এপ্রিল বলে ঘোষণা করেন বিজ্ঞানীরা।
চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১.৬১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে, যা ১৮৫০-১৯৯০ সালের প্রাক-শিল্প সময় থেকে রেকর্ড করা ১২ মাসে গড় তাপমাত্রার রেকর্ডের চেয়েও বেশি।
জলবায়ুর এই পরিবর্তনের প্রধান কারণ হিসেবে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে নির্গমন হওয়া গ্রিনহাউজ গ্যাসকে দায়ী করেছেন বিজ্ঞানীরা। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জলবায়ুর এল-নিনোর ঘটনার প্রভাবেও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়েছে। জলবায়ুর এই ঘটনা পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের ভূপৃষ্ঠের পানিকে অস্বাভাবিকভাবে উষ্ণ করে তোলে।
নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটির জলবায়ু বিজ্ঞানী হেইলি ফাউলার বলেছেন, একাধিক গবেষণা তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে জাতিসংঘের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বনেতারা বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন, সেটি বিপজ্জনকভাবে ছাড়িয়ে যাওয়ার কাছাকাছি রয়েছে বিশ্ব।
এই জলবায়ু বিজ্ঞানী বলেছেন, ‘কোনও মুহূর্তে এসে আমরা ঘোষণা করতে পারি যে তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার যুদ্ধে হেরে আমরা গেছি? আমার ব্যক্তিগত মতামত, ইতোমধ্যে সেই যুদ্ধটিতে আমরা হেরেছি। আমাদের সত্যিই এখন খুব গুরুত্বসহ তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা এবং যত দ্রুত সম্ভব কার্বন নির্গমন কমাতে হবে।’
প্রযুক্তিগতভাবে যদিও বৈশ্বিক তাপমাত্রা এখনও ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়নি। তবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা এই লক্ষ্যমাত্রার নিচে রাখা বাস্তবসম্মতভাবে আর সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন কিছু বিজ্ঞানী। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশ্বমোড়লদের দ্রুত কার্বন নির্গমন কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
Leave a Reply