শিরোনাম :
সাতক্ষীরায় বিজিবির অভিযানে সাড়ে ৩ লক্ষাধিক টাকার ভারতীয় মাদকসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ সাবেক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অভিযোগে জেলা বিএনপির কাছে লিখিত আবেদন রেমিট্যান্সে রেকর্ড, ২৬ দিনে এলো প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে আদালতের রায় ঈদের ছুটি দীর্ঘ হলেও অর্থনীতিতে স্থবিরতা আসবে না: অর্থ উপদেষ্টা বিকাশ-নগদ-রকেটে দৈনিক ৫০ হাজার টাকা লেনদেন করা যাবে রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনে ভেটো দিয়েছে ১২ দলীয় জোট ভক্তদের ধন্যবাদ জানিয়ে হামজা বললেন, ‘জুনে আবার দেখা হবে’ পর্যটক বরণে প্রস্তুত সাজেকসহ রাঙামাটির পর্যটনকেন্দ্রগুলো ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদনে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়ী করার অভিযোগ সত্য নয়’

উপজেলা নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা-সহিংসতার শঙ্কা আ.লীগের

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৪
  • ২২৭
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ ও শ্যামনগরসহ প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায় ভোট ৮ মে

মে মাসে শুরু হচ্ছে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। চার ধাপে দেশের ৪৮১টি উপজেলার নির্বাচন শেষ হবে জুনে। এরই মধ্যে দুই ধাপের ভোটের তফসিলও ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই ভোট এবার দলীয় প্রতীকে না করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের মধ্যে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। ফলে তৃণমূলে দলীয় বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতার আশঙ্কা করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এ ব্যাপারে বক্তৃতা-বিবৃতির পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে কঠোর বার্তাও দিচ্ছে দলটি।

 

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের অর্ধডজন নেতা বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় নেতাদের জন্য উন্মুক্ত থাকার পরও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনেও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। তবে চার ধাপে দেশের ৪৮১টি উপজেলার আসন্ন ভোটে বেশ কয়েকটি কারণে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে সর্তকবার্তা দেওয়া হয়েছে।

 

নেতাদের মতে, শঙ্কার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে— উপজেলা নির্বাচনে নিজের অনুসারী বা কাছের প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপ, আগের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা জয়ী হওয়ার পর এবার সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যাওয়াদের আবার এবার প্রার্থী হওয়া, স্বতন্ত্র হিসেবে সবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা, তৃণমূল পর্যায়ে দলের ভেতরে নানা গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা, ত্যাগী নেতাদের বিপরীতে টাকাওয়ালা বা পেশিশক্তিওয়ালা নেতাদের দৌরাত্ম্য, স্থানীয় বিভিন্ন গ্রুপের নির্বাচনে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা, ভোটের প্রচার-প্রচারণায় বেশি সময় পাওয়ায় সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কা এবং তৃণমূলে দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের শঙ্কা।

 

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, স্থানীয় সরকারের আগের নির্বাচনে এসব কারণে রক্ত ঝরার তিক্ত অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে এবার এবার দলীয় প্রতীকে করা হচ্ছে না। কিন্তু তারপরও শঙ্কা কাটছে না। সে কারণে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আগেভাগেই কঠোর হয়েছে দল। এবার বিশৃঙ্খলা কিংবা সহিংসতায় জড়ালে আইনি ব্যবস্থা এবং সাংগঠনিক শাস্তির মুখোমুখি করা হবে বলেও সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, জাতীয় নির্বাচন উন্মুক্ত রাখার সুফল যেমন রয়েছে, কিছু কুফলও আছে। এতে দলের শৃঙ্খলায় সমস্যা তৈরি করছে, দলীয় নির্দেশনা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেখা দিচ্ছে, প্রার্থী হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। জাতীয় নির্বাচনের পরের এই উপজেলা নির্বাচনে এরইমধ্যে সেটি স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। সে জন্য বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হচ্ছে। দলের সাধারণ সম্পাদক তার বক্তব্যে বার বার সতর্ক করছেন।

 

রবিবার (৭ এপ্রিল) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা নির্বাচনে বিভিন্ন জায়গায় নেতাদের নিকটাত্মীয়দের মনোনীত করার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন উন্মুক্ত মানে উন্মুক্ত পরিবেশে নির্বাচন করার ইচ্ছা বা বাসনা অনেকেরই থাকতে পারে। আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, এমপি সাহেবরা বা মন্ত্রী মহোদয়রা কোথাও কোনও প্রভাব বিস্তার করবেন না। প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে। প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কেউ হস্তক্ষেপ করলে তা যেন সফল করতে না পারে। আর প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর কেউ দলীয় নির্দেশ অমান্য করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

উপজেলায় নিকটাত্মীদের মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে উপজেলা আওয়ামী লীগের অভিযোগ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা এগুলো জানি। তদন্ত করে খোঁজখবর নিচ্ছি। যুবলীগের কমিটি দিতে হলে যুবলীগের অনুমোদন লাগবে। আওয়ামী লীগের কমিটির অনুমোদন আওয়ামী লীগ দেবে। কেউ দলীয় নির্দেশ অমান্য করলে সেটার খেসারত দিতে হবে। তিনি যে-ই হোন।

 

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে যা যা করার তা করা হচ্ছে। আমরা একটি ভালো নির্বাচন চাই। এবার তো দলীয় প্রতীকে এই নির্বাচন হচ্ছে না। কোথাও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে অথবা সহিংসতায় জড়ালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, সে যেই হোক না কেন।

 

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে মন্ত্রীসহ দলীয় এমপি ও নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে সতর্ক বার্তা দিয়ে সাংগঠনিক নিদের্শনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ২ এপ্রিল দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়, উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। এখানে মন্ত্রী-এমপিদের কোনও প্রকার হস্তক্ষেপ করার কোনও সুযোগ থাকবে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার কাজে নিয়োজিত প্রশাসনও শতভাগ নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে। কেউ কোনও ধরনের অবৈধ হস্তক্ষেপ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অংশ নিলেও দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জনগণের মতামতের সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটবে এবং ভোটাররা নির্বিঘ্নে নিজেদের ভোট প্রদান করবে। নির্বাচনে কোনও প্রকার অবৈধ হস্তক্ষেপ এবং নির্বাচনের নিরপেক্ষতা বিনষ্ট করার কর্মকাণ্ডে জড়িত না থাকার জন্য মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি ও নেতাকর্মীদের প্রতি সাংগঠনিক নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে।

 

এ ছাড়া গত ৩১ মার্চ তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের নেতাদের সঙ্গে এবং ৪ এপ্রিল খুলনা বিভাগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। উভয় সভায়ই উপজেলা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করা, এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের হস্তক্ষেপ না করাসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগের নেতাদেরও ঢাকায় ডেকে একইভাবে নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

 

চট্টগ্রামের নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা শেষে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার বিষয়ে সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রশাসন কোনও হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। আমরা এমপি-মন্ত্রী সাহেবরা যদি হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকি তাহলে বিনা প্রতীকে নির্বাচন করার যে উদ্দেশ্য নেত্রী স্থির করেছেন তা সার্থক হবে। কেউ ক্ষমতার দাপট ও ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না। যার নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে করবেন। সে স্বাধীনতা আছে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। জনগণ যাকে ইচ্ছা নির্বাচিত করবে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন, যদি কোনও অনিয়ম মনে করে তারা ব্যবস্থা নেবে।

 

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, চার ধাপে অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা নির্বাচন। কাজেই আমাদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। ভালোভাবেই চলছে সবকিছু। এর মধ্যে দায়িত্বশীলদের এমন কিছু কথাবার্তা দলকে সংকটে ফেলে। ফ্রি স্টাইলে যা কিছু বলবেন- এটা তো আওয়ামী লীগ নয়। দলের গঠনতন্ত্র নিয়ম কানুন আছে। এগুলোর অ্যাকশন আমরা নেবো। ইতোমধ্যে কিছু অ্যাকশন নেওয়াও হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১
Design and Developed by IT Craft in association with INTENT