শিরোনাম :
দেবহাটায় প্রথম ফাজিল স্নাতকের অনুমোদন পেল সখিপুর আলিম মাদ্রাসা শেখ হাসিনা মাফিয়া রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করে হাবিবকে ৭০ বছরের সাজা দিয়েছিল : রিজভী আল্লাহর দেওয়া বিধানের মধ্যেই মানুষের কল্যান নিহিত : ইজ্জত উল্লাহ চাঞ্চল্যকর কৃষক হত্যা মামলার প্রধান আসামী লাল্টু গ্রেপ্তার সাতক্ষীরার তলুইগাছা সীমান্ত থেকে একটি ওয়ান শুটারগান ও চার রাউন্ড গুলি জব্দ সাতক্ষীরায় বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হাবিবের নেতৃত্বে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন দখল! দেবহাটায় ২১ মণ্ডপে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি সম্পন্ন দেবহাটায় বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত উজানে ভারী বৃষ্টি, দেশের প্রায় সব নদীর পানি বাড়ছে

একজন মানবিক প্রভাষকের গল্প : ‘আগে মানবতা পরে অন্য কথা’

মো. মুশফিকুর রহমান
  • আপডেটের সময় : রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৯
  • ৫১৬
প্রভাষক ইদ্রিস আলী

দরিদ্রতাকে জয় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করা সেই ছেলেটি আজ মানবিক প্রভাষক নামে পরিচিত। বলছি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক ইদ্রিস আলীর কথা।

সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের যে কোনো সমস্যায় তিনি এগিয়ে যান তার সর্বস্ব নিয়ে। অভাবগ্রস্ত কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যবস্থা, শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য লেখাপড়ার ব্যবস্থা, এতিমদের লেখাপড়ার খরচ বহন থেকে শুরু করে অসুস্থদের চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজের মধ্যেই নিজের প্রশান্তি খুঁজে নিয়েছেন তিনি।

এলাকার মানুষদের কাছে প্রভাষক বা শিক্ষক নয়, মানবিক মানুষ হিসেবেই পরিচিত তিনি। চোখের সামনে কোনো মানবিক বিপর্যয় দেখলেই ছুটে যান সেখানে।

ইদ্রিস আলী ১৯৯১ সালের ২৭মে সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের সুভদ্রাকাটী গ্রাম একটি নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর থেকেই শুরু হয় সংগ্রামী জীবনের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পরেও অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারছিলেন না। এরপর বহু কষ্টে সেখানে ভর্তির পর কঠোর পরিশ্রম করে নিজের পড়া-লেখার খরচ নিজেই চালিয়েছেন। ঠিক তখন থেকেই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কিছু করতে হবে। সেই প্রতিজ্ঞা থেকেই আজ একের পর এক ভালো কাজ করে চলেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে ৩৫তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার হয়ে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। ‘আগে মানবতা পরে অন্য কথা’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে এগিয়ে চলেছে তার মানবিকতার গল্প।

মানবিক কাজের মহান লক্ষ্যে ২০১৮ সালের মে মাসে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী সাইফুল্লাহ কবিরসহ বেশ কয়েকজনকে নিয়ে অসহায় মানুষদের জন্য কিছু একটা করার উদ্দেশ্যে গড়ে তোলেন ‘হিউম্যানিটি ফার্স্ট’ নামক সামাজিক সংগঠন।

এরপর থেকে শুরু হয় সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের সাহায্যের কার্যক্রম। এর মধ্যে রয়েছে- হাসপাতালে অসুস্থ রোগীর জন্য রক্তের ব্যবস্থা করা, গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো, অসহায় ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাসহ অসংখ্য ভালো কাজ। ইদ্রিস আলী এই সব কাজকে এক একটি প্রজেক্ট হিসেবে দেখেন।

 

মানবিক শিক্ষক খ্যাত প্রভাষক ইদ্রিস আলীর সঙ্গে আলাপ কালে তিনি বলেন, মানবিক কাজের মধ্যে অন্যরকম প্রশান্তি আছে। যখন কোনো আসহায় মানুষকে সাহায্যের মাধ্যমে তার মুখে হাসি ফোটাতে পারি তখন হৃদয়টা প্রশান্তিতে ভরে যায়। এ প্রশান্তি আর কোথাও পাইনা।

তিনি আরও বলেন, মানবসেবার মধ্য দিয়ে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনই আমাদের মূল লক্ষ্য। কর্মক্ষেত্রে সফল হওয়ার আগে একজন ভালো মানুষ হতে হবে তবেই পূর্ণতা আসবে জীবনের।

সফলতার গল্প শুনিয়ে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ২৫ জনের মতো রোগীকে আমরা সাহায্য করতে পেরেছি। এর মধ্যে ২৩ জন সুস্থ হয়ে উঠেছে। বাকি দুইজন মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় আট লাখ টাকা চিকিৎসার পেছনে ব্যয় করেছি। যে টাকাগুলো বিভিন্নভাবে হৃদয়বান মানুষরা সহযোগিতা করেছেন।

মানবিক এসব কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ কোথা থেকে আসে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাওকে সহযোগিতা করার পূর্বে আমরা প্রথমে তার সম্পর্কে বিস্তর খোঁজ-খবর নেই। এরপর আমাদের সংগঠনের সবাই মিলে পরামর্শ করে যে যেমন পারি অর্থ জোগাড় করি। জনগণকে সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেই। এভাবেই আমাদের অর্থের যোগাড় হয়। এক্ষেত্রে প্রবাসীরা বড় ভূমিকা রাখে।

 

আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের এসব মানবিক কাজে সমাজের বিত্তবানরা খুব বেশি সহযোগিতা করেন না বরং মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তরাই সাহায্য করেন। সবাই যদি নিজের জায়গা থেকে এগিয়ে আসে তবে এক সময় সমাজে পিছিয়ে পড়া বলতে কেউ থাকবে না।

ইদ্রিস আলীর মানবিকতার গল্প এখন সকলের মুখে-মুখে। আর এ জন্য তিনি সকলের প্রিয় মানুষ হয়ে উঠেছেন। কলেজের শিক্ষার্থীরাও তাকে ভালোবাসে। তার এমন মানবিক কাজে খুশি কলেজের অন্য প্রভাষকরাও। তারাও ইদ্রিস আলীর এমন মানবিক কাজে উৎসাহ দেন।

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আলমুস্তানসির বিল্লাহ বলেন, ইদ্রিস আলীর এমন মানবিক দিকগুলোকে আমরা ভালো চোখেই দেখি। এটা নিঃসন্দেহে ভালো কাজ। কলেজের শিক্ষার্থীরাও তাকে সহযোগিতা করে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

One response to “একজন মানবিক প্রভাষকের গল্প : ‘আগে মানবতা পরে অন্য কথা’”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১
Design and Developed by IT Craft in association with INTENT