শিরোনাম :
সাতক্ষীরায় বিজিবির অভিযানে সাড়ে ৩ লক্ষাধিক টাকার ভারতীয় মাদকসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ সাবেক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অভিযোগে জেলা বিএনপির কাছে লিখিত আবেদন রেমিট্যান্সে রেকর্ড, ২৬ দিনে এলো প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে আদালতের রায় ঈদের ছুটি দীর্ঘ হলেও অর্থনীতিতে স্থবিরতা আসবে না: অর্থ উপদেষ্টা বিকাশ-নগদ-রকেটে দৈনিক ৫০ হাজার টাকা লেনদেন করা যাবে রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনে ভেটো দিয়েছে ১২ দলীয় জোট ভক্তদের ধন্যবাদ জানিয়ে হামজা বললেন, ‘জুনে আবার দেখা হবে’ পর্যটক বরণে প্রস্তুত সাজেকসহ রাঙামাটির পর্যটনকেন্দ্রগুলো ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদনে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়ী করার অভিযোগ সত্য নয়’

এক নজরে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. এমএ করিমের জিবনী

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২১
  • ৩৯৫
ডা. এমএ করিমের জিবনী

ডা. এম এ করিম এদেশের একজন প্রতিথযশা চিকিৎসক। শুধু চিকিৎসাশাস্ত্রকেই তিনি আত্তিকরণ করেননি। একই সঙ্গে এই অসম সমাজের উৎপীড়ত ও নিপীড়িত যে জনমানুষ তাদের সুখ-দুঃখ, বেদনা-বঞ্চনাকে নিজের বলে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছেন। জনগণের স্বাস্থ্যসেবা এবং গণমুক্তির দর্শন ও সংগ্রামকে জীবনের ব্রত হিসাবে নিয়েছেন সেই তরুণ বয়স থেকেই। তাই তাঁর পেশা- পরিচয় ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে তার সমাজ বিপ্লবীর পরিচয়।

 

১৯২৪ সালের ১৫ জুলাই চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার উচ্চঙ্গা গ্রামে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নানা ছিলেন চাঁদপুরের বিশিষ্ট আইনজীবি, বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। তাঁর বাবার নাম আবদুল হাকিম, মায়ের নাম মেহের নিগার। তিনি ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৩ সালে তৎকালীন মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুলে ডাক্তারি পড়ার জন্য ভর্তি হন। এ সময় পৃথিবীব্যাপী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও অবিভক্ত বাংলায় চলছিল পঞ্চাশের মন্বন্তর যে দুর্ভিক্ষে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ লোক মারা যায়। সে সময়ে দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষদের সহায়তার জন্য কমিউনিস্ট পার্টির বিভিন্ন স্তরের কর্মীরা প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল।

 

কমিউনিস্টদের নিঃস্বার্থ কর্মতৎপরতা তরুণ করিমকে আকৃষ্ট করে। তাঁর ঘনিষ্টতা হয় তৎকালীন ছাত্রনেতা মোহাম্মদ তোয়াহার সাথে। করিম ও দূর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ান। একই সঙ্গে নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকেন জনগণের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের জন্য সংগ্রামী মানুষ হিসেবে। পরবর্তী জীবনে রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে গিয়ে পরিচিত হন কমরউদ্দিন আহমেদ, শামসুল হক, অলি আহাদ, তাজউদ্দিন আহমদ, শেখ মুজিব, ব্যারিস্টার শওকত আলী প্রমুখ তরুণ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে।

 

১৯৫০ সালে জগন্নাথ কলেজে অধ্যয়নকালে ঐ কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভিপি থাকাকালীন একই সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাপীড়িত জনসাধারণের সাহায্যার্থে জগন্নাথ কলেজে ত্রাণ শিবির খোলেন এবং দাঙ্গা প্রতিরোধে সক্রিয় অংশ নেন।

 

এর আগে ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় বিহারের মুঙ্গের, পাটনা প্রভৃতি জায়গায় দাঙ্গাপীড়িত মানুষদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য পূর্ব বাংলা থেকে বিহারে গিয়েছিলেন মেডিকেল টিম নিয়ে। মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি প্রভৃতি দল গঠনের উদ্যোক্তাদের একজন হিসেবে কাজ করে যান।

 

তিনি মওলানা ভাসানীর সফরসঙ্গী হিসেবে চীন ও জাপান ভ্রমণ করেন। এ সময়ে মওলানা ভাসানী ও তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান কমরেড মাও সেতুং এবং প্রধানমন্ত্রী কমরেড চৌ এন লাই- এর সাথে সাক্ষাৎ করেন।

 

ঐতিহাসিক কাগমারি সম্মেলনে খ্যাতিমান কমিউনিস্ট নেতা কমরেড আবদুল হকের সাথে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্কের গভীরতা বাড়তে থাকে আইয়ুবের মার্শাল ল’র সময় থেকে। আবদুল হক ছিলেন তাঁর আদর্শ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।

 

কমিউনিস্ট নেতা কমরেড হেমন্ত সরকার, কমরেড অজয় ভট্টাচার্য প্রমুখ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এছাড়াও সীমান্ত গান্ধী খান আবদুল গাফফার খান, মিঞা ইফতেখার উদ্দিন এবং আরিফ ইফতেখারের সাথেও তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

 

১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। গত শতকের ৫০ দশকের গোড়ার দিকে ঢাকার ১১৯ নবাবপুর রোডে প্রতিষ্ঠা করেন “কিশোর মেডিকেল হল” – যা ছিল সে সময়ে আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টির অঘোষিত কার্যালয়।

 

১৯৬২ সালে বিনা পরোয়ানায় পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। এ সময় ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে বিনা বিচারে পাঁচ মাস তাঁকে আটকে রাখা হয়। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে এদেশের প্রতিটি গণআন্দোলনে গণসংগ্রামে ডা. করিম রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় থেকেছেন। ‘৪৩ এর দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে, ‘৪৭ উত্তরকালে দাঙ্গা প্রতিরোধে, আইয়ুবের মার্শাল ল’র বিরুদ্ধে এবং বাংলাদেশ উত্তরকালে ‘৮০ দশক থেকে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় থেকেছেন।

 

তিনি জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নির্ভীক মুখপত্র সাপ্তাহিক সেবা’র সম্পাদক। তিনি এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকার বেশ কিছু দেশও সফর করেন।

 

ডা. এম এ করিমের পরিচয় বহুমাত্রিক তিনি বাগ্মী, নির্ভীক এবং আপসহীন, অহমিকাহীণ ও আত্মপ্রচার বিমুখ। তিনি আপন বিশ্বাসে অটল৷ ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় তাঁর নানা স্মৃতির সংকলন ‘ঢাকা সেন্ট্রাল জেল: নানা রঙের দিনগুলি’। তবে স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ হলেও আমাদের দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অনেক অজানা কাহিনী এখানে বিবৃত হয়েছে তার লেখা আর একটি বই ‘কাসিমবাজার থেকে আগরতলা’।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১
Design and Developed by IT Craft in association with INTENT