মহামারি করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) বিশ্বব্যাপী সাড়ে ১৪ হাজারের অধিক লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির থাবা থেকে বাঁচতে অবশেষে চার সপ্তাহের জন্য লকডাউনের পথে হাঁটছে ওশেনিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র নিউজিল্যান্ড।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার (২৩ মার্চ) দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আহডার্ন ঘোষণার মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকায় আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে টানা চার সপ্তাহের জন্য লকডাউনে যাবে নিউজিল্যান্ড। এবার লকডাউনের আওতায় থাকবে স্কুল, অফিসসহ জরুরি নয় এমন সব ধরনের সেবা প্রতিষ্ঠান।
সংবাদ সম্মেলনে আহডার্ন বলেছিলেন, আমরা পুরো জাতি স্বেচ্ছায় বন্দিত্বে (আইসোলেশন) যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কেননা এমন পদক্ষেপ না নিলে দ্রুত লাখো নিউজিল্যান্ডবাসীর মৃত্যু হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, লকডাউনের সময় সুপারমার্কেট খোলা থাকবে, চিকিৎসকরাও কর্মরত থাকবেন। এমনকি ফার্মেসি, সার্ভিস স্টেশনসহ জরুরি ব্যাংকিং সেবাও স্বাভাবিক থাকবে। তবে বেশি প্রয়োজন ছাড়া সুপারমার্কেটগুলোতে না যাওয়াই ভালো।
নিউজিল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটিতে এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতী করোনার থাবায় কোনো প্রাণহানি না ঘটলেও ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১০২ জন। এমন প্রেক্ষাপটে বাধ্য হয়ে বিদেশিদের জন্য নিজেদের সীমান্ত বন্ধের পাশাপাশি গোটা দেশকে লকডাউনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, উৎপত্তিস্থল চীনের সীমা অতিক্রম করে এর মধ্যে বিশ্বের অন্তত ১৯২টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। বিশ্বব্যাপী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৩ লাখ ৩৭ হাজার মানুষ। আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যাও এরই মধ্যে ১৪ হাজার ৬৪৭ জনে পৌঁছেছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাস মানুষ ও প্রাণীদের ফুসফুসে সংক্রমণ করতে পারে। ভাইরাসজনিত ঠান্ডা বা ফ্লুর মতো হাঁচি-কাশির মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস। ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হওয়ার প্রধান লক্ষণগুলো হলো- শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশি, নিউমোনিয়া ইত্যাদি। তাছাড়া শরীরের এক বা একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিষ্ক্রিয় হয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে।
বর্তমানে সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো ভাইরাসটি নতুন হওয়ায় এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। ভাইরাসটির সংক্রমণ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় সংক্রমিত ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকা। তাই মানুষের শরীরে এমন উপসর্গ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
Leave a Reply