আগামীকাল ২৮ ডিসেম্বর (সোমবার) এদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম প্রবীণ নেতা বাংলাদেশের কৃষক আন্দোলন তথা ঐতিহাসিক তে-ভাগা আন্দোলনে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনগণের মুক্তির লক্ষে নিঃস্বার্থ, নিবেদিত প্রাণ, ত্যাগী, অভিজ্ঞ নেতা কমরেড হেমন্ত সরকার-এর ২২তম মৃত্যবার্ষিকী।
তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের পক্ষ থেকে ঐ দিন সকাল ১০ টায় নড়াইল জেলার সদর থানার বড়েন্দার গ্রামস্থ সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করবেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তোজাম্মেল হোসেন।
উল্লেখ্য, প্রয়াত কমরেড হেমন্ত সরকার ১৯৯৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর ৮২ বছর বয়সে নড়াইলে মৃত্যুবরণ করেন।
কমরেড হেমন্ত সরকারের বিপ্লবী জীবনের দিকে তাকালে দেখা যায় ১৯১৬ সালে নড়াইল জেলার সদর থানার বড়েন্দার গ্রামে এক গরীব কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শ্রমিকশ্রেণীর বিপ্লবী রাজনীতি ও কমিউনিস্ট পার্টির সাথে সম্পর্কিত হন ১৯৪০-এর দিকে এবং ১৯৪২ সালে পার্টি সভ্যপদ লাভ করেন।
ঐতিহাসিক তে-ভাগা আন্দোলনে তিনি দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা রাখেন। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে গ্রেপ্তার হয়ে পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বন্দী জীবন কাটান। ৬০ এর দশকে বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনে ক্রুশ্চেভ সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে তিনি দৃঢ় ভূমিকা রাখেন। এ প্রোপটে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি (এম-এল) এর যশোর জেলা পার্টি পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখেন এবং যশোর জেলা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭০ সালে সশস্ত্র সংগ্রামের লাইন গৃহীত হলে তিনি তা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখেন এবং ১৯৭১ সালে পার্টি পরিচালিত বিপ্লবী যুদ্ধে তিনি নেতৃত্বদানকারী ভূমিকা পালন করেন। উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী অবস্থানের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কমরেড আবদুল হকের নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের প্লেনামে তিনি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৫ সালে ৫ম কংগ্রেসে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পুনঃনির্বাচিত হন।
তিনি ১৯৮০ সালে সংশোধনবাদী তিন-বিশ্ব তত্ত্ব বিরোধী সংগ্রামে দৃঢ় ভূমিকা পালন করেন এবং ১৯৮৩ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি (এম-এল) এর ৬ষ্ঠ কংগ্রেসে কন্ট্রোল কমিশনের সভ্য নির্বাচিত হন এবং কন্ট্রোল কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
এর পর পরই ১৯৮৪ সালে তিনি পুণরায় গ্রেপ্তার হন। ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত ৭ম কংগ্রেসে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পূণঃনির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত ৮ম কংগ্রেসে তিনি কন্ট্রোল কমিশনের সভ্য নির্বাচিত হন এবং কন্ট্রোল কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
নবম কংগ্রেসের প্রায় পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। নবম কংগ্রেসে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা ও অন্যান্য কারণে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের সংগঠনে থাকেন না এবং পার্টির সভ্য হিসেবে মৃত্যুবরণ করেন। সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ বিরোধী জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব জয়যুক্ত করার জন্য ব্রিটিশ আমল থেকে তাঁর সংগ্রামী ভূমিকা, অধ্যবসায়, ত্যাগ-তিতিক্ষার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক অবদান থেকে সকল প্রগতিশীল বিপ্লবী, গণতান্ত্রিক ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী নেতা-কর্মীদের গভীরভাবে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
Leave a Reply