কর্মসূচিহীন ছন্নছাড়া বিএনপি, চূড়ান্ত হয়নি কর্মকৌশল

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪
  • ১১২
কর্মসূচিহীন ছন্নছাড়া বিএনপি, চূড়ান্ত হয়নি কর্মকৌশল

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দুই মাসের বেশি সময় পার হলেও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। নির্বাচনের পরে জামিনে দলের মহাসচিবসহ অধিকাংশ নেতা কারাগার থেকে বেরিয়ে এলেও ছন্নছাড়াভাব রয়ে গেছে দলটির মধ্যে। নেতাকর্মীরা অনেকে এখনও নির্বাচনকেন্দ্রিক আশাভঙ্গের হতাশা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি।

 

বিএনপির নেতারা বলেছেন, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে আয়োজিত মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পর বিএনপিতে যে ছন্নছাড়া পরিস্থিতি বিরাজ করেছিল, সেটি এখনও রয়ে গেছে। নির্বাচনের পরে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে এলেও এখন আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি দলটি। ফলে, সরকারের পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচনের মূল যে দাবি, সেখান থেকে মনোযোগ কমে গিয়ে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি পালন করে সময় পার করছে বিএনপি।

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমরা আন্দোলন কিংবা দাবি আদায়— কোনোটা থেকেই সরে আসিনি। আমাদের আন্দোলন চলমান। রমজান মাস সংযমের মাস। এ ছাড়া, আমাদের নেতাকর্মীরাও দীর্ঘদিন কারাভোগের পর বেরিয়ে এসেছেন। অনেকে অসুস্থ, তারা চিকিৎসাধীন আছেন। সবমিলিয়ে এখন একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় পার হচ্ছে। সঠিক সময়ে আবার সবকিছু শুরু হবে।’

 

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, গত বছরের ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ এবং ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা বিশ্বের ভাবনা ও প্রতিফলন— এ দুটি বিষয় পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করেই বিএনপিকে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে হবে। এটা করতে দলের স্থায়ী কমিটি একাধিকবার বৈঠকও করেছে। কিন্তু কোনো কিছু চূড়ান্ত করা যায়নি। এখন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে ওমরাহ পালনের জন্য আবার সৌদি আরব যাওয়ার কথা রয়েছে। তাই ঈদের আগে কার্যকর কিছু হচ্ছে না।

 

দলটির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা বলছেন, আগামীতে যদি আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয় তাহলে ২৮ অক্টোবরের ‘ফ্লপ’ হওয়া সমাবেশের কারণ আগে বিশ্লেষণ করতে হবে। কেন লাখো নেতাকর্মী থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টিয়ারগ্যাসের সামনে আমরা এক ঘণ্টাও টিকতে পারিনি? এখানে কি যোগ্য নেতৃত্বের অভাব ছিল, নাকি সরকারের কৌশল বুঝতে না পেরে আমরা পরাজিত হয়েছি। এটা আগে বের করতে হবে। কারণ, আগামীতে আন্দোলন কর্মসূচিতে তো নতুন কেউ আসবে না। বর্তমান নেতাকর্মীদের নিয়েই করতে হবে। আবার সরকারও আগের ভাবমূর্তিতে আছে। সুতরাং কী কারণে বিএনপি বারবার ব্যর্থ হচ্ছে সেটা খুঁজে বের করা জরুরি।

তারা আরও বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে পার্শ্ববর্তী দেশ যেভাবে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে, পশ্চিমা বিশ্ব বিএনপিকে সেভাবে দেবে না। তারপরও তাদের নিয়ে কোন প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাওয়া যায় সেটি ভাবতে হবে।

 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে, নাম না প্রকাশের শর্তে বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ১৫-১৬ বছরের বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে আমরা। ফলে বিএনপির অধিকাংশ নেতা ও কর্মী হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। সেখান থেকে তাদের জাগিয়ে তুলতে হলে নতুন নেতৃত্ব ও নতুন কর্মপরিকল্পনা দরকার। দেশের নেতাদের পরিস্থিতি অনুযায়ী স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিতে হবে। তা না হলে লাখ-লাখ নেতাকর্মী নিয়ে নিরাপদ ও নিরামিষ সমাবেশ করা যাবে, রাজপথ নিয়ন্ত্রণে নেওয়া যাবে না। ২৮ অক্টোবরের মতো সঠিক নির্দেশনার অভাবে নেতাকর্মীরা রাজপথ থেকে পালিয়ে যাবে।

 

আগামীতে যদি আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয় তাহলে ২৮ অক্টোবরের ‘ফ্লপ’ হওয়া সমাবেশের কারণ আগে বিশ্লেষণ করতে হবে। কেন লাখো নেতাকর্মী থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টিয়ারগ্যাসের সামনে আমরা এক ঘণ্টাও টিকতে পারিনি? এখানে কি যোগ্য নেতৃত্বের অভাব ছিল, নাকি সরকারের কৌশল বুঝতে না পেরে আমরা পরাজিত হয়েছি। এটা আগে বের করতে হবে। কারণ, আগামীতে আন্দোলন কর্মসূচিতে তো নতুন কেউ আসবে না। বর্তমান নেতাকর্মীদের নিয়েই করতে হবে। আবার সরকারও আগের ভাবমূর্তিতে আছে। সুতরাং কী কারণে বিএনপি বারবার ব্যর্থ হচ্ছে সেটা খুঁজে বের করা জরুরি

আরেক নেতা বলেন, আসলে নির্বাচনের আগে পশ্চিমা বিশ্ব কী চেয়েছে, সেটা কি বিএনপি আদৌ বুঝতে পেরেছিল কি-না, সেটা আগে খুঁজে বের করতে হবে। আমার মনে হয় বিএনপি সেটা বুঝতে পারেনি। পারলে বিএনপির এ অবস্থা হওয়ার কথা নয়।

 

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা বলেন, দলের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্তের আগে আমাদের সঙ্গে যুক্ত যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জোট ও দলগুলো থেকে মতামত নেওয়া হবে। কিন্তু এখানে সমস্যা সৃষ্টি করে জামায়াত। কারণ, অন্যান্য দল থেকে সামনের দিনে আন্দোলন ও কর্মপরিকল্পনা নিয়ে যে ধরনের মতামত ও পরামর্শ আসে, জামায়াতের পক্ষ থেকে সবসময় তার বিপরীতটা আসে। দলের শীর্ষনেতাদের ওপর জামায়াতের প্রভাব থাকায় অনেক সময় দেখা যায় তাদের পরামর্শই বেশি গুরুত্ব পায়।

 

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘সবার মধ্যে যোগাযোগ আছে। একে-অপরের ইফতার পার্টিতে আসা-যাওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া, বিগত দিনের আন্দোলন নিয়ে সবাই একটা পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করছে। বিএনপিও নিশ্চয়ই সেটা করবে। তারপর তারা গণতন্ত্র মঞ্চ ও রাজপথের অপরাপর দলগুলোর সঙ্গেও বসবে।’

 

গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ এক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, গত কয়েকদিনে অফিসিয়ালি বিএনপির সঙ্গে কোনো বৈঠক বা আলোচনা হয়নি। ইনফরমালি কথাবার্তা হয়েছে, হচ্ছে। এখন আগে তারা নিজেরাই বসবে। তাদের সেই বসাটাও ঈদের আগে হচ্ছে বলে মনে হয় না। কারণ, মির্জা ফখরুল চিকিৎসা শেষে ফিরে ওমরাহ পালন করতে যাবেন। রোজা-ইফতারি নিয়েও ব্যস্ত থাকবে তারা। সুতরাং ঈদের আগে কার্যকর কিছু হবে বলে মনে হয় না। বিএনপির অপ্রস্তুতির কারণে এমনটি হচ্ছে বলে অভিযোগ তার।

 

মঞ্চের আরেকজন নেতা বলেন, সামনের দিনে যুগপৎ আন্দোলন করতে হলে বিএনপিকে তাদের নির্দেশ দেওয়ার মনোভাবে পরিবর্তন আনতে হবে। অর্থাৎ তারা কর্মসূচির ঘোষণা দিল, আর আমরা নির্দেশনা মেনে নির্বাচনের আগের মতো তা পালনে ঝাঁপিয়ে পড়ব, এটা আর হবে না। অন্ততপক্ষে গণতন্ত্র মঞ্চ এটা আর করবে না।

 

সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক হতে হবে— উল্লেখ করে মঞ্চের ওই নেতা আরও বলেন, বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের যে লিয়াজোঁ কমিটি আছে, সেখান থেকে সবকিছুর সিদ্ধান্ত আসতে হবে। লিয়াজোঁ কমিটিকে আরও কার্যকর করতে হবে। গণতন্ত্র মঞ্চের শরিকদের মধ্যেও এমন মনোভাব রয়েছে। বিষয়টি ইতোমধ্যে বিএনপিকে জানানো হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১
Design and Developed by IT Craft in association with INTENT