গুলশানের ফিরোজায় কেমন আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এমন প্রশ্ন দলীয় নেতাকর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদেরও। সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পাওয়া দলীয় প্রধান নেই কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে। করোনা সংক্রমণের শঙ্কায় দু-চারজন স্বজন আর দুএকজন নেতা ছাড়া কারও সাথে সাক্ষাতের সুযোগও হচ্ছে না তার। করোনা ভাইরাসে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় শুধু ব্যক্তিগত চিকিৎসক নিয়মিত তার দেখাশোনা করছেন।
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস ও সরকারের নানান বিধি নিষেধ থাকার কারণে বিদেশ গিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না বিএনপির এই দলীয় প্রধান। এমনকি করোনার কারণে দেশের কোন হাসপাতালেও করানো যাচ্ছে না তার চিকিৎসা। এমতাবস্থায় একাকীত্ব কর্মহীন নিঃসঙ্গ জীবন কাটছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। এখনো চলাফেরায় অন্যের সাহায্য নিতে হয়। জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা কমেনি। বাসায় দুজন নার্স স্থায়ীভাবে রাখা হয়েছে। তারা বাসায় থেকেই বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন এবং ফিজিওথেরাপি দিচ্ছেন। এ ছাড়া তাঁর মেরুদণ্ড বাম হাত ও ঘাড়ের দিকে শক্ত হয়ে যায়। দুই হাঁটু প্রতিস্থাপন করা আছে। তিনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খান। বাম চোখেও একটু সমস্যা রয়েছে তাঁর।
লন্ডন থেকে পুত্রবধূ তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবায়দা রহমান বেগম জিয়ার চিকিৎসার সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন বলে জানা গেছে।
গুলশানের বাসায় সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজের মাধ্যমেই দিন শুরু হয় তার। ফজরের নামাজ পড়ে কোরআন তেলাওয়াত করেন তিনি। দিনের বড় সময় বই ও পত্র-পত্রিকা পড়ে কাটাচ্ছেন। এছাড়া টেলিভিশনের মাধ্যমে খবর দেখছেন, শুয়ে-বসেই নিজের মতো করে দেশের খোঁজখবর নিচ্ছেন।
এ ছাড়া লন্ডনে থাকা বড় ছেলে তারেক রহমান, দুই পুত্রবধু ও নতি-নাতনীদের সঙ্গে ফোনে কথাবার্তা বলেও সময় কাটান তিনি। এ ছাড়া মাঝে-মধ্যে বড় ভাই মরহুম সাইদ এস্কান্দারের পরিবার, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের পরিবার, সেজো বোন সেলিনা ইসলাম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও বাসায় কথাবার্তা বলে সময় কাটে বেগম জিয়ার।
জানা গেছে, বেগম জিয়ার ছেলে এবং পুত্রবধূ লন্ডনে থাকার সুবাদে লন্ডনের সময়ের সাথে মিল রেখে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হয় সেজন্য একটু বেশি রাত করে ঘুমাতে হয় তার। প্রায় প্রতিদিনই বিকেল বা সন্ধ্যায় ফিরোজায় যান বোন সেলিমা ইসলাম, ভাই শামীম এস্কান্দার ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা। মাঝেমধ্যে যান ভাতিজা শাফিন এস্কান্দার ও তার স্ত্রী অরনী এস্কান্দার, ভাতিজা অভিক এস্কান্দার ও ভাগ্নে শাহরিয়া হক। তবে কোনো আত্মীয়-স্বজন গুলশানে ফিরোজায় রাতযাপন করেন না।
বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী ও যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বিডি২৪লাইভকে বলেন, বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল, কোন পরিবর্তন নেই। করোনার কারণে মৌলিক কোন চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তাই তার শারীরিক কোন উন্নত হচ্ছে না।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজায় কারাজীবন শুরু করেন খালেদা জিয়া। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও তাঁর সাজার রায় হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আরও ৩৪টি মামলা রয়েছে। ২৫ মাসেরও বেশি সময় কারাবন্দী থাকার পর চলতি বছরের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া করোনাকালে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘মানবিক বিবেচনায়’ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান। এরপর আরও এক দফায় তাঁর জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। তারপর থেকে তিনি গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ রয়েছেন।
Leave a Reply