মূল্যস্ফীতি, বৈশ্বিক আর্থিক বাজারে বিদ্যমান উচ্চ সুদের হার, বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার লক্ষ্য নিয়েই আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপনকালে তিনি জানান, উন্নত, টেকসই ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে দেওয়া অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করা এবারের বাজেটের খাতভিত্তিক এবং মধ্যমেয়াদি নীতি কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে অন্যান্য দেশের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশেও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে এবং এর অংশ হিসেবে সুদের হার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নীতি সুদহার ৮ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে এবং এই হারের করিডোরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং ল্যান্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) ১০ শতাংশে ও নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) ৭ শতাংশে উন্নীত করে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলভিত্তিক সুদের হার নির্ধারণের ব্যবস্থা বিলোপ করে সুদের হার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। ব্যাংক খাতে ঋণের চাহিদা ও ঋণযোগ্য তহবিলের যোগানসাপেক্ষে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণের সুদ হার নির্ধারিত হবে।’
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির আওতায় নেওয়া পদক্ষেপগুলোর সাফল্য নিশ্চিত করতে এর পাশাপাশি রাজস্ব নীতিতেও সহায়ক নীতিকৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিতে ফ্যামিলি কার্ড, ওএমএস ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। আশা করছি, আমাদের গৃহীত এসব নীতি-কৌশলের ফলে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে।’
অর্থমন্ত্রী জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের অর্থনীতি বর্তমানে কিছুটা চাপের সম্মুখীন হলেও প্রাজ্ঞ ও সঠিক নীতিকৌশল বাস্তবায়নের ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতিধারা অব্যাহত রয়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছর হতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ, যা বিশ্বের সব দেশের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ।
মূল্যস্ফীতি আমাদের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হওয়ায় এটি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে চাহিদার কমানো এবং সরবরাহ বাড়ানোর দিকে গত দুটি বাজেটে সরকার সর্বাত্মক মনোযোগ দিয়েছিল বলে জানান অর্থমন্ত্রী। এ পরিপ্রেক্ষিতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সুফল পাওয়ার জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণের পাশাপাশি সহায়ক রাজস্বনীতি, অর্থাৎ ব্যয় কমানো, কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় নিরুৎসাহিত করাসহ বিভিন্ন কৃচ্ছ্রসাধণ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তারপরও মূলত আমদানিজনিত মূল্যবৃদ্ধি এবং দেশের অভ্যন্তরে সরবরাহ শৃঙ্খলে ত্রুটিজনিত কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি অনমনীয়ভাবে ৯ শতাংশের উপরে অবস্থান করছে। সেকারণে আগামী অর্থবছরের বাজেটে আমরা ফিসক্যাল কনসোলিডেশন তথা বাজেট ঘাটতি হ্রাস এবং সীমিত কলেবরে হলেও বাজেট কৃচ্ছ্রসাধন অব্যাহত রাখবো। তবে দীর্ঘমেয়াদে এ পন্থা অবলম্বন করা হলে প্রবৃদ্ধির গতি স্লথ হয়ে যেতে পারে, সে কারণে আমাদের লক্ষ্য থাকবে আগামী অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে সরকারি ব্যয় ধীরে ধীরে বাড়ানো। এটি সম্ভব হবে যদি রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়ানো যায়। সেই লক্ষ্যে আমরা কর অব্যাহতি ধাপে ধাপে তুলে নেওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর দিকে নজর দেবো।’
Leave a Reply