১১০তম আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও সংগঠনের ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি। রবিবার (৮ মার্চ) দুপুরে যশোর জেলা কার্যালয়ে এ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জেলা আহ্বায়ক ফরিদা পারভীনের সভাপতিত্বে সভায় আলোচনা করেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের জেলা সভাপতি আব্দুল হক, সহ-সাধারণ সম্পাদক কামরুল হক লিকু, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক সমীরণ বিশ্বাস, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের জেলা প্রচার সম্পাদক আইয়ুব হোসেন, সদস্য ওয়াসিম হোসেন এবং গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জেলা যুগ্ম-আহ্বায়ক পারভীন সুলতানা ও সদস্য বৃষ্টি সরকার প্রমুখ।
সভায় আলোচকবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের উৎপাদনের সকল ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অথচ তাদের নেই অধিকার ও মর্যাদা। গার্মেন্টস, চা-বাগান, নির্মাণ, অফিস-আদালত, কৃষি ক্ষেত্রসহ সকল কাজে নারীরা হাঁড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে অথচ তারা ন্যায্য মজুরী পায় না। জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, তাদের জীবন-জীবিকার সমস্যা আপামর জনগণের সমস্যার সাথে জড়িত।
তারা আরো বলেন, আমরা সাধারণত নারী দিবসে সামনে আনতে দেখি- নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের বিষয়গুলি। এ অবস্থা থেকে আমাদের মত নয়াউপনিবেশিক দেশ আর উন্নত বিশ্ব, কারোরই নিস্তার নেই। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি লাখে ৫ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন; ভারতে ২ জন; আমেরিকায় ২৭ জন এবং ব্রিটেনে ২৯ জন। গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ও ভারতে সংখ্যাটা কম হওয়ার কারণ হল সামাজিক অবস্থা। একজন ধর্ষণের শিকার নারী নির্দোষ হলেও আমাদের সমাজ তার প্রতি সহানুভূতিশীল না হয়ে অনেকটাই ‘ঘৃণার’ চোখে দেখে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই এবং অনেকেই তা প্রকাশে বিরত থাকেন।
আলোচকবৃন্দ আরো বলেন, বাংলাদেশের নারীদের সমস্যা তথা শ্রমিক-কৃষক-জনগণের সমস্যা-সংকট, শোষণ-লুন্ঠন, দুঃখ-কষ্ট, নিপীড়ন-নির্যাতনের কারণ হচ্ছে প্রচলিত নয়াউপনিবেশিক আধাসামন্তবাদী আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা। নারীরা শুধু শাসক-শোষক দ্বারাই নির্যাতিত হয় না- প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় তারা ঘরে-বাইরে, রাস্তা-ঘাটে যাতায়াতে, কর্মক্ষেত্রে সর্বত্রই পুরুষ দ্বারা নির্যাতিত ও নিপীড়িত হচ্ছে। পুরুষতান্ত্রিক প্রচলিত ব্যবস্থায় নারীকে ভোগ্যবস্তু হিসেবে গণ্য করা হয়। নারীদের এই ভয়াবহ অসম্মানজনক পরিস্থিতির জন্য দায়ী প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা। অথচ সাম্রাজ্যবাদ ও এনজিও-রা এই সত্যকে আড়াল করে নারী-পুরুষের বিভেদমূলক নারীবাদীতাকে সামনে এনে নারী সমাজকে বিভ্রান্ত করছে। বাংলাদেশের নারী সমাজকে এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নারী মুক্তির লক্ষ্যে আন্দোলন-সংগ্রাম অগ্রসর করতে হবে।
Leave a Reply