শিরোনাম :
সাতক্ষীরায় বিজিবির অভিযানে সাড়ে ৩ লক্ষাধিক টাকার ভারতীয় মাদকসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ সাবেক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অভিযোগে জেলা বিএনপির কাছে লিখিত আবেদন রেমিট্যান্সে রেকর্ড, ২৬ দিনে এলো প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে আদালতের রায় ঈদের ছুটি দীর্ঘ হলেও অর্থনীতিতে স্থবিরতা আসবে না: অর্থ উপদেষ্টা বিকাশ-নগদ-রকেটে দৈনিক ৫০ হাজার টাকা লেনদেন করা যাবে রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনে ভেটো দিয়েছে ১২ দলীয় জোট ভক্তদের ধন্যবাদ জানিয়ে হামজা বললেন, ‘জুনে আবার দেখা হবে’ পর্যটক বরণে প্রস্তুত সাজেকসহ রাঙামাটির পর্যটনকেন্দ্রগুলো ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদনে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়ী করার অভিযোগ সত্য নয়’

গরমে পুড়ছে খুলনা বিভাগ

সারাদেশ ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪
  • ১৬৮

খুলনা অঞ্চলে তীব্র তাপদাহ অব্যাহত রয়েছে। মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পুড়ছে গোটা খুলনা বিভাগ। টানা তিন দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে এ বিভাগের চুয়াডাঙ্গা জেলায়। বৃহস্পতিবারও সর্বোচ্চ ৪১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায়। আর খুলনা জেলায় ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় এ দিন।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ওপর দিয়ে গত তিন দিন ধরে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গত তিন দিন ধরে চুয়াডাঙ্গা জেলাতেই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। আর তা থাকছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। এর মধ্যে ১৯ এপ্রিল ওঠে ৪১.৩, ১৮ এপ্রিল ছিল ৪০.৪ ও ১৭ এপ্রিল ছিল ৪০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। ১৯ এপ্রিল খুলনায় তাপমাত্রা ওঠে ৪০.৫, ১৮ ও ১৯ এপ্রিল ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বৃহস্পতিবার যশোরে ৪১ দশমিক ২, মোংলায় ৪১, সাতক্ষীরায় ৪০ ও কুষ্টিয়ার কুমারখালিতে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

টানা তাপদাহে অতিষ্ঠ এখানকার জনপদ। অসহ্য গরমে ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে প্রাণীকুল। তীব্র তাপে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ ঘর থেকে বেরিয়েও কাজ করতে পারছেন না। দিনের বেশিরভাগ সময় সূর্যের তাপে গরম অনুভূত হচ্ছে। তীব্র প্রখরতায় উত্তাপ ছড়াচ্ছে চারপাশে। নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। বাইরে নির্মাণশ্রমিক, কৃষিশ্রমিক, ইজিবাইকচালক ও রিকশা ভ্যানচালকদের গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে। হা-হুতাশ করতে দেখা গেছে তাদেরকে।

খুলনার রিকশা চালক আব্দুল মজিদ বলেন, সকালে রিকশা নিয়ে বের হয়ে বেলা ১০টা পর্যন্ত তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে ছিল। এরপর তাপ বাড়তে থাকে। গা পুড়তে শুরু করে।

ঠেলাগাড়িতে কাঠ বিক্রেতা গোলাম হোসেন বলেন, এখন কাঠের ব্যবহার কমে গেছে। কিন্তু উপায় নেই। কাঠ না বেচলে পেট চলে না। গরমের মধ্যে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যেতে পারছেন না। দুই কদম হাঁটলে আর পা চলে না।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব বাবুল হাওলাদার বলেন, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে পরিবেশবান্ধব শহর গড়তে হবে। যে শহরে থাকবে পর্যাপ্ত গাছপালা। খুলনা শহর ঘুরে সড়কের পাশে ছায়া পাওয়ার মতো কোন গাছ পাওয়া কঠিন। একসময় শহরে প্রচুর পুকুর ডোবা নালা ছিল। এখন তা খুঁজে পাওয়া যায় না।

এদিকে তীব্র তাপদাহে জনসাধারণকে সচেতন করতে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মাইকিং করে পথচারী ও এলাকাবাসীকে সতর্ক করা হচ্ছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে বাড়িত সতর্কতা অবলম্বন করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, আরও কয়েকদিন এমন তাপদাহ অব্যাহত থাকতে পারে। তবে এখনই এই এলাকায় বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই।

তিনি বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেশি থাকে। চলতি মাসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার ৪০ ডিগ্রির ওপরে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়। এর মধ্যে ৬ এপ্রিল ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাঝখানে কিছুদিন তাপমাত্রা কম ছিল। এরপর ১৬ এপ্রিল থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে।

তিনি বলেন, গত ৪-৫ বছর ধরে চুয়াডাঙ্গায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকে তাপমাত্রা। গত বছর এই সময়ে জেলার তাপমাত্রা ছিল ৪১ থেকে ৪২ ডিগ্রি। চুয়াডাঙ্গায় ২০১৪ সালের ২১ মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এখন পর্যন্ত এ জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

জামিনুর রহমান বলেন, বেশ কয়েকটি কারণে চুয়াডাঙ্গায় এমন তাপমাত্রা রয়েছে। যখন হিট ওয়েভ শুরু হয় তখন যদি এটা দ্রুত রিলিজ হতে না পারে তাহলে সেখানে গরম বেড়ে যায়। তাপ দ্রুত রিলিজ না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, গাছপালা কমে যাওয়া, জলাধার কমে যাওয়া এসব কারণেই মূলত তাপটা রিলিজ হয় না। ফলে তাপমাত্রাটা বাড়তে থাকে।

তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে বিহার, কলকাতা হিট ওয়েভ চলছে। ওখানে যখন তাপমাত্রা বেশি থাকে এখানেও বাড়তে থাকে। এর কারণ ভৌগলিকভাবে চুয়াডাঙ্গা পশ্চিমবঙ্গের কাছাকাছি। পশ্চিমবঙ্গের তাপমাত্রা যখন বেশি থাকে এখানে তাপমাত্রা বেশি থাকবে। আর একটা হিট ওয়েভ যখন পশ্চিমবঙ্গ হয়ে প্রবেশ করে তার একটা অংশ চুয়াডাঙ্গা হয়েও বাংলাদেশে প্রবেশ করে- এটাও অন্যতম কারণ।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিনের প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, একসময় ঈশ্বরদীর আশেপাশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা থাকতো। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে পদ্মায় পানি ছিল না। এখন চুয়াডাঙ্গাতেও একই অবস্থা। একসময় এ অঞ্চলে প্রচুর জলাভূমি ছিল। এ ছাড়া এর আশপাশে হাওর-বাওর ছিল। যা তাপকে শোষণ করতে পারতো। এখন এর পরিমাণ কমে গেছে । মূলত এটাও একটা বড় কারণ তাপমাত্রা বেশি অনুভূত হওয়ার।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১
Design and Developed by IT Craft in association with INTENT