শিরোনাম :
ইনিংস ব্যবধানে হারের লজ্জাই পেলো বাংলাদেশ বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় সাতক্ষীরায় আনন্দ র‌্যালি সাতক্ষীরা সদর মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের মতবিনিময় সভা জাতীয় পতাকার ওপর ইসকনের পতাকা, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচন নিয়ে যা বললেন ভিপি নুর সার্চ কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি বিশ্ব স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস উপলক্ষ্যে সাতক্ষীরায় আলোচনা সভা সাতক্ষীরা বোটানিক্যাল সোসাইটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বৃক্ষরোপন সাকিবের খেলতে না পারার পেছনে বিসিবি জড়িত নয়: ফারুক সাতক্ষীরায় জিপি, পিপি ও নারী-শিশু পিপিসহ ৩৪ আইন কর্মকর্তা নিয়োগ

গোলাপ যৌনতার প্রতীক! ইংল্যান্ডে হয়েছিল ‘গোলাপের যুদ্ধ’

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
  • ৫৫৫

প্রেমে বার বার ঘুরে ফিরে আসে গোলাপ ফুলের নাম। সভ্যতায় সব থেকে আলোচিত ফুল বোধ হয় গোলাপ। কবিরা বার বার গোলাপের উপমায় ফিরে গিয়েছেন তার কাঙ্ক্ষিত নারীর রূপ বর্ণনায়। আবার গোলাপ নিয়ে কম বিসংবাদও হয়নি ইতিহাসে। গোলাপ থাকলে কাঁটাও থাকে— এই আপ্তবাক্য মেনে নিলে দেখা যাবে, গোলাপকে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে এমন সব ঘটনা ঘটে গেছে, যা কখনো কৌতুকের, কখনো বা ভাবগম্ভীর প্রেমের, আবার কখনো বা যৌনতার অনুষঙ্গবাহী। ৭ ফেব্রুয়ারি গোলাপ দিবস। প্রেমের সপ্তাহের এক বিশেষ দিন। এই অবকাশে দেখা যেতে পারে গোলাপ-বৃত্তান্ত।

 

প্রাচীন গ্রিস এবং রোমে গোলাপকে প্রেমের দেবী আফ্রোদিতে বা ভেনাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে ভাবা হত। গোলাপ আর প্রেমের সম্পর্ক বোধ হয় সেই সময় থেকেই কল্পিত হয়ে আসছে। (সঙ্গের ছবিটি ইংরেজ চিত্রকর দান্তে গাব্রিয়েল রোসেত্তির ১৬৮৮ সালে আঁকা গোলাপ পরিবেষ্টিত ভেনাসের।

 

খ্রিস্টধর্মের উদ্ভবের কালে গোলাপকে যীশুর জননী মেরির সঙ্গে তুলনা করা হত। ‘রোজ’ থেকেই খ্রিস্টীয় জপমালা ‘রোজারি’-র উদ্ভব। (সঙ্গের ছবিটি জার্মান চিত্রকর আলব্রেখট ড্যুররের ১৫০৬ সালে আঁকা ‘দ্য ফিস্ট অফ রোজারি’। এখানে মেরিকে গোলাপে তৈরি মুকুট বিতরণ করতে দেখা যাচ্ছে।

ইসলামেও গোলাপ সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে বার বার উপস্থাপিত। বসরাই গোলাপের কথা ‘আরব্য রজনী’-র গল্পে অসংখ্য বার এসেছে। গজলের বাণীতে গোলাপের উপস্থিতি অনিবার্য। আর গোলাপজল বা গোলাপ থেকে তৈরি আতরের বিষয়টি তো অনিবার্য ভাবে ইসলামি সংস্কৃতির অবদান।

 

গোলাপ যে সর্বদাই এমন খোলামেলা প্রতীকে বা চরিত্রে বিরাজ করেছে, তা নয়। গোলাপের অন্তরালে কখনো ঘনিয়ে উঠেছে গুপ্ত সমিতি। কখনো বা পতাকায় গোলাপের ছবি লাগিয়ে ঘটে গিয়েছে যুদ্ধ। ফলে গোলাপকে কখনই হালকা ভাবে নেওয়া ঠিক হবে না বলে মনে করেন চিহ্নতাত্ত্বিকরা।

 

বিশ্বের এক বড় অংশের মানুষ বিশ্বাস করেন যে, ম্যাগডালেনই পবিত্রতম নারী। তাকে এবং যীশু খ্রিস্টকে একত্রে বোঝাতে ‘রোজ অ্যান্ড ক্রস’-এর বিশেষ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়।

 

গোলাপকে গুপ্ত জ্ঞানের প্রতীক হিসেবেও দেখেন পশ্চিমের গোপন ধর্মীয় উপাসক সম্প্রদায়ের একাংশ। পাপড়ির পরতের পর পরত পার হয়ে অন্তঃস্থলে পৌঁছতে হয়, যেভাবে একের পর এক পর্দা সরাতে সরাতে জ্ঞান উন্মোচিত হয়, সে ভাবেই তারা দেখতে চান গোলাপকে।

গোলাপকে অনেকেই লালসা ও যৌনতার প্রতীক হিসেবে দেখেন। লাল গোলাপের রং লালসাকে বর্ণনা করে আর গোলাপের গঠন হয়ে দাঁড়ায় যোনির প্রতীক। তবে ভাষাতাত্ত্বিকরা বলেন যে, যৌনপ্রতীক হিসেবে গোলাপের ব্যবহার মূলত ছিল মৌখিক ঐতিহ্যে। পরে তাকে সাহিত্যে বা চিত্রকলায় তুলে আনা হয়।

 

মানচিত্রে বা কম্পাসে দিক নির্দেশ করতে যে বিশেষ প্রতীকের ব্যবহার করা হয়, তা দেখতে অনেকটা তারকাচিহ্নের মতো লাগলেও সেটির নাম ‘কম্পাস রোজ’। বিশেষজ্ঞদের মতে ভৌগোলিক আবিষ্কারের যুগে বেশির ভাগ নাবিক তথা অভিযাত্রীই ছিলেন রোজিক্রুশিয়ান বা তার সহায়ক গুপ্ত সমিতির সদস্য। তাই নাবিকী চিহ্নে গোলাপ স্থান পায়।

 

ইংরেজ কবি, নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়রের কাব্যে এবং নাটকে বার বার এসেছে গোলাপের প্রসঙ্গ। ‘গোলাপকে যে নামেই ডাকা হোক না কেন, সে তার সুগন্ধ বিতরণ করবেই’-এর মতো উক্তি বা তার লিখিত চতুর্দশপদীগুলির বিভিন্ন পঙ্ক্তিতে ছড়িয়ে থাকা গোলাপের উপমা থেকে অনেকেই রোজিক্রুশিয়ানদের দলে ঠেলে দেন। ড্যান ব্রাউনের সূত্র ধরে অনেকে তো আবার শেক্সপিয়রকে ম্যাগডালেন উপাসক হিসেবেও ধরে নেন। তবে আপাতদৃষ্টিতে শেক্সপিয়রের রচনায় গোলাপ কখনও সুন্দর, কখনও লালসা আবার কখনও রহস্যময় অনুষঙ্গ নিয়ে আসে। আর তা ছাড়া শেক্সপিয়রের জীবনের প্রথম ভাগটি কেটেছিল টিউডর বংশীয় রানি প্রথম এলিজাবেথের আমলে। টিউডরদের প্রতীক ছিল লাল গোলাপ।

 

ইংল্যান্ডে দীর্ঘকাল ধরে চলেছিল ‘গোলাপের যুদ্ধ’। সে দেশের দুই অভিজাত গোষ্ঠী ইয়র্কিস্ট এবং ল্যাঙ্কাস্ট্রিয়ানদের মধ্যে বত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে দুই পক্ষই তাদের পতাকায় গোলাপের চিহ্ন বহন করেছিল। ইয়র্কিস্টদের পতাকায় ছিল সাদা গোলাপ আর ল্যাঙ্কাস্ট্রিয়ানদের পতাকায় ছিল লাল গোলাপের ছবি। যুদ্ধ শেষ হয় দুই পক্ষের মধ্যে এক বিবাহ সম্পাদনের মধ্যে দিয়ে। নতুন রাজবংশ হিসাবে টিউডররা আত্মপ্রকাশ করে। তখন রাজকীয় প্রতীকে গোলাপই থাকে কিন্তু লাল গোলাপের অন্তঃস্থলে সাদা অংশ রাখা হয়।

 

আজও গোলাপ সমান ভাবে আকর্ষণীয় কবি-সাহিত্যিক-গান রচয়িতা-চিত্রকরদের কাছে। গোলাপের অনুঙ্গে মনে পড়তেই পারে যে, ব্রিটিশ সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব স্যর এলটন জন ১৯৭৪ সালে রেকর্ড করেন তাঁর বিখ্যাত গান ‘ক্যান্ডল ইন দ্য উইন্ড’। গানটির রচয়িতা তিনি নিজে ও আর এক সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব বার্নি টউপিন। সেই গানের কথা বদলে তা যুবরানি ডায়ানার অন্ত্যেষ্টিতে পরিবেশন করেন এলটন। সেখানে তিনি গানটি শুরু করেন “গুডবাই ইংল্যান্ড’স রোজ”— এই সম্বোধন দিয়ে। সৌন্দর্য, প্রেম, প্যাশন, রাজসিকতা ও শোক একই সঙ্গে ঝলসে উঠেছিল এলটন জনের কণ্ঠে, পিয়ানোবাদনে। গোলাপের এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে? (সঙ্গের ছবিতে যথাক্রমে প্রিন্সেস ডায়ানা ও এলটন জন।

সূত্র: আনন্দবাজার

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১
Design and Developed by IT Craft in association with INTENT