চীনে যেভাবে ইসলামের আগমন ও প্রসার ঘটে

ধর্ম ও জীবন ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০২০
  • ১৪০৫
চীনে যেভাবে ইসলামের আগমন ও প্রসার ঘটে

চীনে ইসলামের ইতিহাস অনেক পুরনো। টাং রাজবংশের শাসনামলে চীনে ইসলাম প্রবেশ করে।

তবে চীনে ইসলাম আগমনের সঠিক সময় নিয়ে দুটি মত পাওয়া যায়। কেউ কেউ বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জীবদ্দশায় ৬২০ খ্রিষ্টাব্দে চীনে ইসলাম প্রবেশ করে।

আবার অনেকে বলেছেন, নবীজীর (সা.) মৃত্যুর ২০ বছর পর ৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে সা’দ বিন আবু ওয়াক্কাস (রা.) এর কুটনৈতিক মিশনের মধ্য দিয়ে চীনে ইসলাম আগমন করে। সা’দ বিন আবু ওয়াক্কাস (রা.) ছিলেন প্রথম সারির একজন সাহাবি ও নবীজী (সা.) এর আত্মীয়।

যদিও ধর্মনিরপেক্ষ কোনো ইতিহাসে চীনে সা’দ বিন আবু ওয়াক্কাস (রা.) এর আগমন সম্পর্কে কোনো উল্লেখ নেই; তবু ঐতিহাসিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে একথা নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, সপ্তম শতাব্দীর যেকোনো সময় মধ্যপ্রাচ্য ও চীনের ব্যবসায়িক সম্পর্কের সূত্র ধরে এ অঞ্চলে ইসলামের আগমন ঘটে।

পরবর্তী শতাব্দিগুলোতে মুসলিম বণিকরা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে চীনে আসতে থাকে। চীনের বড় বড় শহরগুলোতে, বিশেষ করে গুয়াংজু, কুয়াংজু ও হাংজু’র মতো উপকূলীয় বাণিজ্যিক নগরীগুলোতে, মুসলিম বণিকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে এসব অঞ্চলে তারা মসজিদ নির্মাণ করতে শুরু করেন।

চীনের গুয়াংজুতে অবস্থিত হুয়েইশেং মসজিদটির বয়স প্রায় ১৩০০ বছর; যদিও এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার মসজিদটির পুনঃসংস্কার করা হয়েছে। বলা হয়ে থাকে, এটিই চীনের সবচেয়ে পুরাতন মসজিদ।

তৎকালে চীনে ইসলাম মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়া থেকে আগত মুসলিমদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো এবং তখন পর্যন্ত চীনের স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ইসলাম ছড়িয়ে পড়েনি।

চীনে যেভাবে ইসলামের আগমন ও প্রসার ঘটে

ইয়ুআন রাজবংশের শাসনামলে (১২৭৯ – ১৩৬৮) চীনে মুসলমানরা কিছুকাল সামাজিক প্রতিপত্তি লাভ করে।

কেননা প্রভাব বিস্তারের দিক থেকে উক্ত শাসনামলে মঙ্গোলীয় শাসকগোষ্ঠীর পরেই ছিল আরব, পারস্য ও তুরস্ক থেকে আগত মুসলিমদের অবস্থান। আর উপজাতীয় বর্ণপ্রথার কারণে স্থানীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ হান চীনাসম্প্রদায় তখনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।

পরবর্তীতে চীনের শাসনভার চলে যায় স্থানীয় হান রাজবংশের কাছে। তারা ১৩৬৮ থেকে ১৬৪৪ সাল পর্যন্ত চীনে শাসন করে।

হান শাসকগোষ্ঠী মঙ্গোলীয় ও মুসলিম সম্প্রদায়কে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চায় এতো পরিমাণে বাঁধা দেয় যে, তারা নামকরণ থেকে শুরু করে ভাষাচর্চা, পোশাকআশাক এমনকি চুল রাখার ধরণেও স্বকীয়তা বজায় রাখতে পারতো না।

এমতাবস্থায় মুসলমানরা চীনের স্থানীয় হান সম্প্রদায়ের লোকদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে তারা চীনা ভাষা রপ্ত করে নেয় ও চীনা নাম ধারণ করে নিজেদেরকে স্থানীয় চীনা সম্প্রদায়ের অঙ্গীভূত করে নেয়।

মূলত এরাই বর্তমান চীনে সর্ববৃহৎ উপজাতীয় হুই জনগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষ।

চীনে বর্তমানে প্রায় ২৫ মিলিয়ন মুসলমানের বসবাস। এদের অধিকাংশই হুই, উইঘুর, কাযাখ ও তাতার জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।

একবিংশ শতাব্দীর পুরোটা জুড়েই মুসলমানগণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানামুখী অত্যাচার ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে এও সত্য যে, অনেক মুসলিম অধ্যুষিত দেশে অন্য ধর্মাবলম্বী ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী নিগ্রহের শিকার হচ্ছে।

মুসলমান হিসেবে অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে আমাদের এমন আচরণ করা উচিত নয় যেমনটি আমরা নিজেদের জন্য পছন্দ করি না।

মনে রাখা উচিত, প্রতিশোধই সবসময় সমাধান নয়। গোটা বিশ্বের সব দেশ যদি এই নীতি মেনে চলতো, তাহলে পৃথিবীটা আরো সুন্দর হতো।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১
Design and Developed by IT Craft in association with INTENT