চট্টগ্রামে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে ইসকন চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক চন্দন কুমার ধর প্রকাশ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে (৩৮) প্রধান আসামি করে কোতোয়ালি থানায় রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) রাতে নগরীর চান্দগাঁও থানার উত্তর মোহরা এলাকার মো. ফিরোজ খান নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
দায়ের করা মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়। ইতোমধ্যে পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রাজেশ চৌধুরী ও হৃদয় দাশ নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০(খ), ১২৪(ক), ১৫৩(ক), ১০৯ ও ৩৪ ধারায় কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় দুজন গ্রেফতার আছেন। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান আছে।’
মামলার বাকি আসামিরা হলেন- চট্টগ্রামের হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক অজয় দত্ত (৩৪), নগরের প্রবর্তক ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলা রাজ দাশ ব্রহ্মচারী (৪৮), গোপাল দাশ টিপু (৩৮), ডা. কথক দাশ (৪০), প্রকৌশলী অমিত ধর (৩৮), রনি দাশ (৩৮), রাজীব দাশ (৩২), কৃষ্ণ কুমার দত্ত (৫২), জিকু চৌধুরী (৪০), নিউটন দে ববি (৩৮), তুষার চক্রবর্তী রাজীব (২৮), মিথুন দে (৩৫), রুপন ধর (৩৫), রিমন দত্ত (২৮), সুকান্ত দাশ (২৮), বিশ্বজিৎ গুপ্ত (৪২), রাজেশ চৌধুরী (২৮) ও হৃদয় দাশ (২৫)। এ ছাড়াও মামলায় ১৫ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলায় এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা নিউমার্কেট মোড়ে একটি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। গত ২৫ অক্টোবর লালদীঘি ময়দানে সনাতনীদের সমাবেশের দিন ওই পতাকার ওপর ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা স্থাপন করে দেওয়া হয়।
এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, এই ঘটনা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অখণ্ডতাকে অস্বীকারের শামিল। আসামিরা তাদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপর তাদের ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে দেশের ভেতর অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশকে অকার্যকর করার তথা রাষ্ট্রদ্রোহ কাজে লিপ্ত হয়েছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে শ্রেণিবিদ্বেষের জন্ম হয়েছে এবং ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করে নাগরিকদের মধ্যে শ্রেণিবিদ্বেষ ছড়িয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করেছে।
তবে বুধবার রাতে ইসকন প্রবর্তক ধাম অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এক ভিডিও বার্তায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী বলেছেন, ‘এ মামলা সনাতনীদের ৮ দফা দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা। গত ৫ আগস্টের পর সনাতনীদের ওপর চালানো হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদে আমাদের আন্দোলন। এই আন্দোলন বর্তমান সরকার কিংবা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়। আমরা নিরাপদ সহাবস্থান নিশ্চিতের দাবিতে আন্দোলন করেছিলাম। আমাদের আন্দোলন কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষে কিংবা বিপক্ষে নয়। আমরা এই বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে চাই না, আমরা এই দেশের ভূমিপুত্র।’
Leave a Reply