জাতীয় সরকারের রূপরেখা দিলেন আ স ম রব

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেটের সময় : শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৯
  • ২১৩

‘জাতীয় সরকারের’ দাবি জানিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিবৃতির ছয়দিন পর এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত রূপরেখা দিয়েছেন ফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব। শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সকালে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি মিলনায়তনে ‘জাতীয় সরকার’-এর অপরিহার্যতা শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এই রূপরেখা তুলে ধরেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনসহ শীর্ষ নেতারা নেতারা।

আ স ম আবদুর রব তার লিখিত বক্তব্যে জাতীয় সরকারের ৫ দফা রূপরেখা ও করণীয় উল্লেখ করেন। এগুলো হলো—বিদ্যমান ‘অবৈধ’ সরকারের পদত্যাগের পর সাংবিধানিক শূন্যতা ও সংকট পূরণ করবে ‘জাতীয় সরকার’। ‘জাতীয় সরকার’ গঠন করা হবে রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সমাজ ও বুদ্ধিজীবী শক্তিগুলোর সংলাপের মাধ্যমে। ‘জাতীয় সরকার’ রাষ্ট্রের ধ্বংসপ্রাপ্ত তিনটি মৌলিক স্তম্ভকে পুনরুদ্ধার-পুনর্গঠন করার উপায় নির্ধারণ করবে। ‘জাতীয় সরকার’ গণতান্ত্রিক-শাসনতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে সাংবিধানিক সংস্কারের প্রস্তাবনা উত্থাপন করবে। ‘জাতীয় সরকার’ জাতীয় স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার জন্যে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জাতীয় ঐক্য এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ‘মর্যাদাপূর্ণ অংশিদারিত্বের’ নীতি অনুসরণ করবে।

আ স ম রব অভিযোগ করেন, ‘সরকার জোর করে সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে নৈতিকভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে, সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে অক্ষম-অকার্যকর করার পথ তৈরি করছে। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখের আগের রাতে ভোট কেটে নেওয়ার যে জালিয়াতি তা সারা দেশের জনগণ-প্রশাসন সবাই অবহিত কিন্তু এরপরও সরকার যখন জনগণের ভোটে নির্বাচিত বলে হর-হামেশা প্রচার করছে, তখন সত্য রাষ্ট্র থেকে বিদায় নিচ্ছে।’

ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘‘একটি সমাজ ও রাষ্ট্রে সত্যের অনুপস্থিতি, নৈতিকতার অনুপস্থিতি, গণতান্ত্রিক চেতনার অনুপস্থিতিতে কী ধরনের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটবে, তা আমাদের গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। এ বিবেচনায় ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’, ‘জাতীয় সরকার’-এর দাবি জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে।’’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আ স ম রবের রাজনৈতিক সচিব কবি শহীদুল্লাহ ফরায়েজী বলেন, ‘‘গত ২৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ‘জাতীয় সরকার’সহ তিনটি দাবি উত্থাপন করে বিবৃতি দিয়েছিল। আজকে আ স ম আবদুর রব এই বিষয়টির বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।’’

প্রসঙ্গত, এর আগে, ২৮ সেপ্টেম্বর (শনিবার) গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৩টি দাবি তুলে ধরে। দাবিগুলো হলো, বর্তমান ‘অবৈধ’ সরকারকে পদত্যাগ করে জাতীয় সরকার ঘোষণা করা; খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক বন্দির মুক্তিসহ বিদ্যমান রাজনীতি ও শাসনতান্ত্রিক সংকট নিরসনে আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে নিয়ে জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে পথ নির্ধারণ এবং বর্তমান সরকারের ‘গুম-খুন’সহ ‘রাতের অন্ধকারে ভোট ডাকাতি’ ঘটনার পাশাপাশি দুর্নীতি-লুটপাট তদন্তে গ্রহণযোগ্য জাতীয় কমিশন গঠন।

বিএনপির চেয়ারপারসন কার্যালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্রের দাবি, সরকারের নানামাত্রিক অপরাধের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিকে সামনে রেখে সরকারবিরোধী সব দলকেই জাতীয় সরকারের রূপরেখার সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

জেএসডির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভায় ঐক্যফন্টের শরিক নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, নগর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক উপস্থিত ছিলেন।

ফ্রন্টের বাইরে একাধিক বামদলের নেতারা জানিয়েছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে জাতীয় সরকারের রূপরেখা দিলেও এর মূলশক্তি বিএনপির কোনও অবস্থান এখনও তারা জানতে পারেননি। বিশেষ করে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপি আগামী দিনে রাজনৈতিকভাবে ঠিক কী ধরনের অবস্থান নেবে, এ বিষয়টি এখনও পরিষ্কার করা হয়নি।

জেএসডির জাতীয় সরকারের রূপরেখা নিয়ে জানতে চাইলে বামমোর্চার নেতা সাইফুল হক বলেন, ‘আমি সভায় বলেছি, অতীতের সরকারগুলোর আচরণও আমাদের আলোচনায় রাখতে হবে। বিশেষ করে সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণের জবাবে আমরা তো আবার অগণতান্ত্রিক কিছুকে সায় দিতে পারি না। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো কী কর্মসূচি দেয়, কী চিন্তা নিয়ে সামনের দিকে এগুবে, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।’

সাইফুল হক আরও বলেন, ‘এই সরকার ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এর বিরুদ্ধে গণসংগ্রামের কোনও বিকল্প নেই। নিশ্চিতভাবেই আমরা এই দুঃশাসনকে সরিয়ে আরেক দুঃশাসন আনতে চাই না। সেজন্যই জাতীয় সরকারের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।’

আ স ম আবদুর রব তার লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, ‘বিদ্যমান অবৈধ সরকারের পতনের মাধ্যমে বিপন্ন রাষ্ট্রকে সাংবিধানিক চেতনায় পুনঃপ্রতিষ্ঠাসহ জাতীয় ঐক্যের রাজনীতির অনুসন্ধান করতে হবে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার গঠিত না হলে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদ বিনষ্টের আশঙ্কা থেকে যায়।’

তিনি আশা প্রকাশ করেন, ‘নৈতিক ও মানবিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে আমাদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। সময়ক্ষেপণ না করে অবিলম্বে এসব প্রস্তাবনা নিয়ে রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে ব্যাপক সংলাপ-প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।’ সমাজের মধ্য থেকেই রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন, সমাজ উপযোগী শাসন ব্যবস্থার রাজনৈতিক প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১
Design and Developed by IT Craft in association with INTENT