জেলা নাগরিক কমিটির সাথে প্রাণ সায়র ব্যবসায়ী সমিতি নেতৃবৃন্দের মতবিনিময়

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেটের সময় : বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
  • ৪০২

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেছেন সাতক্ষীরা পৌরসভা প্রাণ সায়ের ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ। দৈনিক পত্রদূত অফিসে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন নাগরিক কমিটির আহবায়ক মোঃ আনিসুর রহিম।

সভায় ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন লস্কর শেলী বলেন, সাতক্ষীরা শহরকে আধুনিক শহর করার লক্ষ্যে সম্প্রতি প্রাণ সায়ের খাল পুণঃখনন ও খাল পাড়ে ওয়াক ওয়ে তৈরির জন্য কিছু বৈধ এবং অবৈধ দোকান বুলড্রেজার দিয়ে ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় দোকান মালিকগণ সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির সাথে দেখা করেন এবং বৈধভাবে লীজ নেওয়া দোকান ঘর ভাঙ্গা বন্দের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন। এমপি মহাদয়ের দিক নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবসায়ীগণ জেলা প্রশাসক মহাদয়ের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাদের যৌতিক দাবির কথা তুলে ধরেন। জেলা প্রশাসক মহাদয় সে সময় ব্যবসায়ীদেরকে আশস্ত করেন যে, বৈধ কোন দোকানঘর ভাঙ্গা হবে না। ব্যবসায়ীদের মৌখিক দাবির পরিপেক্ষিতে খাল পাড়ে দোকানের অতিরিক্ত অংশ দাগিয়ে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে অতিরিক্ত অংশ দোকান মালিকগণ ভেঙ্গে নিয়েছেন। এরপর আবারও পৌরসভা কর্তৃক দোকানঘরের দ্বিতীয় তলা ভেঙ্গে নিতে বলা হয়। তখন আবারও ব্যবসায়ীরা এমপি মহাদয়ের কাছে যান এবং ঐ দিনই এমপি মহাদয় মেয়রসহ কাউন্সিলরদেরকে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক শেষে ব্যবসায়ীদের সবার সামনে পৌর সম্মেলন কক্ষে দোকানঘর ভাঙ্গা হবে না এ মর্মে ব্যবসায়ীদেরকে আশ^স্ত করেন। কিন্তু হঠাৎ ১৫.০৯.২০১৯ তারিখ সকালবেলা জেলা প্রশাসক মহাদয় একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে লাইভ বক্তব্য প্রদান করেন। জেলা প্রশাসক তার বক্তব্যে ব্যবসায়ীদেরকে অবৈধ বললেও, আইনী জটিলতার কথা বলে স্ববিরোধী বক্তব্য প্রদান করেছেন। তিনি বলেছেন সাতক্ষীরাবাসীর দাবি এবং সাতক্ষীরাবাসীর কাছে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ যে তিনি অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করবেন। আমরাও জেলাপ্রশাসক মহাদয়ের সাথে একমত পোষণ করে বলছি অবৈধ স্থাপনা ভাঙ্গার ব্যাপারে আমরাও আপনার সাথে একমত। তাই বলে বৈধ স্থাপনাকে অবৈধ বলে ভাঙ্গার চেষ্টা করলে আমরা সাতক্ষীরাবাসী সেটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিহত করার চেষ্টা করবো এবং আমরা সফল হবো ইনশাল্লাহ।

জাকির হোসেন লষ্কর আরো বলেন, পৌরসভা থেকে লীজকৃত দোকানের পরিমাণ চার শতাধিক এবং এই চার শতাধিক দোকানে আরো অন্তত দুই হাজার কর্মচারী কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সবমিলিয়ে সৌন্দর্য বর্ধণের নামে এই দোকানঘর গুলো ভাঙ্গা হলে ৩৫-৪০ হাজার লোকের সরাসরি রুটি-রুজির উপর আগ্রাসী হামলা হবে।

এছাড়াও এসমস্ত ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে, সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে, মাহাজন থেকে বাকি নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে। দোকানঘর ভাঙ্গা হলে আরো অন্তত নতুন করে ৩’শ ঋণখেলাপির জন্ম হবে। আমি সাতক্ষীরার সর্বস্তরের জনগণকে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে সরাসরি সমার্থন দেওয়ার জন্য উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ. প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিক ভাইয়েরা, সুধি সমাজ, সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি, সাতক্ষীরা নাগরিক অধিকার সমন্বয় বাস্তবায়ন কমিটি, নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ সাতক্ষীরাসহ সকলের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমরা ব্যবসায়ীরা পৌর কর পরিশোধ করি, সরকারের কোষাগারে প্রতিনিয়িত ট্যাক্স, ভ্যাট প্রদান করে পৌরসভার রেকর্ডীয় সম্পত্তি লীজ নিয়ে ব্যবসা করি। আমরা কোন অবৈধ দখলদার নই।

তিনি আরো বলেন, পৌরসভার জমির রেকর্ড ও আমাদের লীজের কাগজপত্র আপনারা দেখতে চাইলে আমরা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো। কিন্তু আপনাদের কাছে আমাদের বিনীত অনুরোধ যে, আপনারা না জেনে কোন সিদ্ধান্ত দিলে বা পক্ষাবলম্বন করলে আড়াই হাজার পরিবার স্বাভাবিক অবস্থা থেকে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হবে।

জাকির হোসেন লষ্কর শেলী আরো বলেন আমরা আশা করবো মানানীয় জেলা প্রশাসক মহাদয় দোকান ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসবেন এবং শহরকে পরিচ্ছন্ন এবং সৌর্ন্দয্য বৃদ্ধির যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন সে উদ্যোগে ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়ে করবেন বলে আমারা আশা রাখি। তাতে ব্যবসায়ীরা যেমন উপকৃত হবে তেমনি জেলা প্রশাসক মহাদয় সাতক্ষীরাকে যে সুন্দর পরিচ্ছন্ন নগরীতে পরিণত করতে চাচ্ছেন সেটিও সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

আমরা ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে কোন আন্দোলনের ডাক দিলে আপনাদের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণের উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি। পরিশেষে আপনাদের সকলের পরিপূর্ণ শারিরিক সুস্থ্যতা, মানসিক শান্তি ও অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা কামনা করে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি।

নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শোনেন এবং ব্যবসায়ীদের ন্যায় সংগত দাবীর প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করা হয়। নাগরিক কমিটির পক্ষে এ সময় উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহবায়ক এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম সদস্য সচিব আলী নুর খান বাবলু, সদস্য লায়লা পারভীন সেজঁতি, প্রভাষক শেখ শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

ব্যবসায়ীদের পক্ষে সমিতির সভাপতি গৌর চন্দ্র দত্ত, আ স ম আব্দুর রব, শেখ মোশারফ হোসেন, এ এস এম মাকছুদ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১
Design and Developed by IT Craft in association with INTENT