ফেরিওয়ালা আকবরের অভাব-অনটনেই প্রাণ গেলে স্ত্রী আরিফা খাতুন (৩২), মেয়ে আকলিমা আক্তার আঁখি (১০) এবং ছেলে আরাফাত রহমানের (৫)। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে রাণীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ভরনিয়া শিয়ালডাঙ্গী গ্রামের বাড়ির পাশে একটি ডোবা থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আঁখি ভরনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী।
ফেরিওয়ালা আকবর আলীর সারাদিনের হাড়ভাঙ্গা খাটুনিতে যে আয় তা দিয়ে যেন চলেই না তিনজনের এই সংসারে। ধার-দেনা আর সারা দিনের আয়ে চলে তাদের। গেল তিন বছর আগে আরো একবার অভাব-অভিযোগ তুলে তার স্ত্রী আরিফা খাতুন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল।
প্রায় ১৩ বছর আগে আরিফা খাতুনের সাথে বিয়ে হয় ওই উপজেলার ভরনিয়া শিয়ালডাঙ্গী গ্রাম আকবর আলীর সঙ্গে। সংসারের চাহিদা মেটানো নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো বলে জানায় স্থানীয়রা।
আরিফার স্বামী আকবর বলেন, আমার বাবা আমার কাছে কিছু টাকা পেত, এ নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় তার সঙ্গে আমার এবং পরে স্ত্রীর ঝগড়া হয়। পরে রাতে স্বামী-স্ত্রী এক বিছানা ও পাশের বিছানায় শুয়ে পড়ে তার দুই সন্তান। গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে স্ত্রী ও সন্তানদের দেখতে না পেয়ে বাড়ির আশপাশে খোঁজাখুঁজি করি। না পেয়ে সকালে ভরনিয়া পূর্বপাড়ায় শ্বশুর বাড়িতে খোঁজ নেই। কিন্তু সেখানেও না পেয়ে বাড়ি ফিরে আসি। পরে বাড়ির সামনে পুকুরে তাদের লাশ দেখতে পাই।
আরিফার বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে প্রায় সময় শুনতাম মেয়ে ও জামাইয়ের মাঝে ঝগড়া হতো। মাঝে-মধ্যে টাকার জন্য জামাই আমাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করত।
আরিফার মামা আলা উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করলে তিনটি মরদেহ ডোবায় গেল কীভাবে? এটা রহস্যজনক। তাই সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষিদের আইনের আওতায় আনার দাবি করেন আরিফার বাবা।
ধর্মগড় ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মাইনুদ্দিন জানান, আরিফার স্বামী এলাকার জিনিসপত্র ফেরি করে সংসার চালাত, তাদের অভাবের সংসার ছিল। আর এ অভাব নিয়েই তাদের সংসার ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকত।
রানীশংকৈল থানার ওসি এসএম জাহিদ ইকবাল বলেন, সকালে আকবর আলীর বাড়ির সামনে একটি ডেবায় তার স্ত্রী ও দুই সন্তানের লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে মাসহ তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
ওসি এসএম জাহিদ ইকবাল বলেন, এ ঘটনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরিফার শ্বশুর সিরাজুল, স্বামী আকবর আলী, দেবর বাবরকে থানায় আনা হয়েছে।
‘রহস্য’ উদঘাটনে জোর চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
রানীশংকৈল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার তোফাজ্জল হোসেন বলেন, মৃতদের নাক ও মুখে দিয়ে ফেনা দেখা গেছে; এটি বিষক্রিয়ার কারণেও হতে পারে। তবে এটা হত্যা না আত্মহত্যা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে আরিফার বাবা নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে ইউডি মামলা দায়ের করবেন বলে জানান রাণীশংকৈল থানার ওসি এসএম জাহিদ ইকবাল। ময়নাতদন্ত এবং জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কোনো আলামত পেলে হত্যা মামলায় রূপান্তর হবে বলে জানান ওসি।
Leave a Reply