সাতক্ষীরার তালার দক্ষিণ নলতা এলাকায় মুজাম শেখ (৭০) নামে এক বৃদ্ধ রহস্যজনকভাবে আত্মহত্যা করেছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সুরোতহাল রিপোর্ট শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছে। মুজাম ঐ এলাকার মৃত জসিম শেখ’র ছেলে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ছেলে-মেয়েদের নামে তার জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়ার কথা ছিল। তার আগে রাতেই তার লাশ উদ্ধার হয়।
পারিবারিক সূত্র জানায়, বৃদ্ধ মুজাম নানা রোগ-শোকে দীর্ঘ দিন যাবৎ অসুস্থ্য ছিলেন। এমনকি ভালভাবে চলাফেরাও করতে পারতেন না। ঘুমাতেন বাড়ির বারান্দায়। তার বড় ছেলে আজিজুর (৫০) জানায়, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনু: সাড়ে ৩ টার দিকে তিনি বাইরে এসে বারন্দায় পিতাকে দেখতে না পেয়ে খোঁজা-খুঁজির এক পর্যায়ে সামনের গরু রাখার একচালা গোয়ালের দিকে তাকাতেই তার বাবাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। এসময় তার চিৎকারে প্রথমে তার ছোট ভাই লুৎফরসহ অন্যান্যরা এগিয়ে এসে তার লাশ উদ্ধার করে নিচে নামান।
ঘটনায় পরিবারের দাবি,বৃদ্ধ মুজাম গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে আত্মহত্যার স্থান থেকে শুরু করে সম্পর্কযুক্ত লক্ষণ দেখে নানা প্রশ্নের উদেগ্রেকের পাশাপাশি সন্দেহ দানা বেঁধেছে। আসলে কি তিনি আত্মহত্যা করেছেন? নাকি তাকে কেউ হত্যা শেষে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে?
তবে এলাকাবাসী বলেন,তারা কেউ তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেননি। তাদের আসার আগেই তার ছেলেরা লাশ নামিয়ে ফেলে। মৃত মুজামের ছেলে-মেয়রা জানায়,তাদের পিতা প্রায় ১২ বিঘা সম্পত্তির মালিক। বছর দু’য়েক আগে দু’ছেলের নামে ৮ বিঘা জমি লিখে দিয়েছিলেন। বাকি ৪ বিঘা জমি সব ছেলে-মেয়েদের নামে বৃহস্পতিবার সকালে রেজি: করে দিতে যাওয়ার কথা ছিল। তার আগেই তার লাশ উদ্ধার হয়। তিনি আত্মহত্যা করলে, তার কারণই বা কি? তবে রেজিস্ট্রিতে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বন্টন প্রক্রিয়া নিয়ে কি তার দ্বিমত ছিল? নাকি মতই ছিলনা। জমি রেজিস্ট্রির আগের দিন আত্মহত্যা বিষয়টিকে ঠিক ভাল চোখে দেখছেননা মহল বিশেষ। ধারণা করা হচ্ছে,তার মৃত্যুর পেছনে গভীর রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। তাই আত্মহত্যা কিংবা হত্যা, যেভাবেই তার মৃত্যু হোক না কেন!
এলাকাবাসী জানায়,বছর দুয়েক আগে পিতা মুজাম মেয়েদের ফাঁকি দিয়ে কেন দু’ছেলেকে ৮ বিঘা জমি লিখে দিতে গেলেন। আসলে তিনি কি স্ব-ইচ্ছায় ঐ জমি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছিলেন? নাকি ছেলেরা কৌশলে লিখে নিয়েছিলেন? তাছাড়া বাকি ৪ বিঘা সম্পত্তি তো মুজাম শেখ’র মৃত্যুর পর তার ছেলে-মেয়েরাই পাবে,তাহলে তা ফের লিখে নেওয়ার কারণ কি? ধারণা করা হচ্ছে, বাকি জমির একটি বড় অংশ তিনি মেয়েদের লিখে দিতে চেয়েছিলেন। যা কেউ হয়তো চাননি। তাছাড়া বাকি জমির বড় অংশ মেয়েদের লিখে দিলে লোকসান কাদের ছিল? ইত্যাদি নানান প্রশ্ন বার বার এলাকাবাসীকে বিদ্ধ করছে। তাকে যদি হত্যা করা হয় তবে রেজিস্ট্রিতে ক্ষতিগ্রস্থরাই জড়িত থাকতে পারে।
অন্যদিকে আত্মহত্যা করলে তাতেও পিতার দ্বিমতের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট। রেজিস্ট্রি কার্যক্রমে সন্তানদের কোন পক্ষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। যা বৃদ্ধ বয়সে মুজাম সহ্য করতে পারেননি। হয়তো মৃত্যুর মধ্যেই সন্তানদের সমতা রক্ষা করে গেলেন। এমন নানা প্রশ্ন সচেতন মহলে বার বার ঘুর-পাক খাচ্ছে।
এব্যাপারে তালা থানার অফিসার ইনচার্জ মেহেদী রাসেল বলেন, আত্মহত্যার খবরে থানার এসআই শাহাজান ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে সুরোতহাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে বিষয়টি হত্যা না আত্মহত্যা তা ময়না তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত ঠিক বলা যাচ্ছেনা। এব্যাপারে তালা থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে।
Leave a Reply