বাংলাদেশের তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীন ও ভারতের প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে প্রস্তাব দেশের মানুষের কল্যাণে আসবে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণ নিলে তার রিটার্ন আসবে, তাদের প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের অনেক দিনের তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে…। তাই তারা যদি আমাদের প্রজেক্ট করে দেয় আমাদের সব সমস্যার সমাধানই হয়ে গেলো।
২১-২২ জুন ভারত সফর নিয়ে মঙ্গলবার (২৫ জুন) গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভারত ও চীনের সহায়তার প্রস্তাব নিয়ে দেশে এক ধরনের আলোচনা আছে—আপনি ভারত নাকি চীনের দিকে ঝুঁকে আছেন? চীনের দিকে ঝুঁকলে প্যাঁচে পড়বেন, আর ভারতের দিকে ঝুঁকলে চীন এগোতে দেবে না—এরকম আলোচনা আছে। এটা কীভাবে সরকার মোকাবিলা করবে, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান একজন সাংবাদিক।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- এই পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে একটানা চতুর্থবার এবং আগে ছিল একবার, এই পঞ্চমবার রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। বিরোধী দলের নেতা হিসেবে সংসদে ছিলাম। এ নীতি মেনে চলে যাচ্ছি, এগিয়ে যাচ্ছি। কখনও প্রশ্ন আসেনি কোথায় ব্যালেন্স কম হলো? এটা আসেনি। সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকার যে সুযোগটা দিচ্ছে, সেটা হচ্ছে উন্নয়ন করার সুযোগ দিচ্ছে। আমার কাছে এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশের মানুষের কল্যাণে, দেশের উন্নয়নে কার সঙ্গে কতটুকু বন্ধুত্ব দরকার সেটা করে যাচ্ছি। ভারত আমাদের চরম দুঃসময়ের বন্ধু। আবার চীন যেভাবে নিজেদের উন্নত করেছে, সেখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। সেগুলো সামনে রেখে সম্পর্ক বজায় রেখে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, কেউ মনে করলো এদিকে ঝুঁকলাম নাকি ওদিকে ঝুঁকলাম। এই ঝোঁকাঝুঁকির ব্যাপার আমার নেই। আমার কিন্তু সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নেই। আমাকে অনেকেই জিজ্ঞেস করে, এমনকি বিদেশেও অনেকেই বলে, আপনি কীভাবে ব্যালেন্স করেন? আমি বলি ব্যালেন্স কোনও কথা না। তাদের দুই দেশের (ভারত ও চীন) মধ্যে কী সম্পর্ক, সেটা তাদের ব্যাপার। আমি সেখানে নাক গলাই না। আমি সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ভারতের সঙ্গে ১০টা এমওইউ, সমঝোতা স্মারক রিনিউ করলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিস্তা নিয়ে অনেক প্রস্তাব আসে। যেখান থেকে যে প্রস্তাবই আসুক না কেন, সেটা কতটুকু দেশের জন্য প্রযোজ্য, যে টাকাটা ঋণ নেবো তা শোধ দেওয়ার সক্ষমতা আছে কিনা, যে প্রকল্প নেবো তা সম্পন্ন হওয়ার পর রিটার্ন কী আসবে, সেখান থেকে দেশের মানুষের কল্যাণে কতটুকু কাজে লাগবে– এসব বিবেচনা করে প্রতিটি কাজ করি। ৫৪টি নদীর পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সমস্যা রয়ে গেছে। আবার চীনেরও পানি তুলে নেওয়ার ঘটনা আছে। হিমালয় রেঞ্জের নদীগুলো নিয়ে নানা ধরনের দ্বন্দ্ব আছে, সমস্যা আছে। আবার সমাধানও আছে। সেক্ষেত্রে আমরা যেহেতু তিস্তা পানি নিয়ে দাবি করছি…!
তিনি বলেন, তিস্তা প্রকল্পটি যদি আমরা করি, আমাদের চীন প্রস্তাব দিয়েছে, ভারতও প্রস্তাব দিয়েছে। অবশ্যই আমি বিবেচনা করবো, কোন প্রস্তাবটা দেশের মানুষের কল্যাণ আসবে, আমি সেটাই করবো। সবকিছু বিবেচনা করে করতে হবে। সেক্ষেত্রে ভারত যখন বলছে তারা করতে চায় এবং টেকনিক্যাল গ্রুপ পাঠাবে, অবশ্যই তারা আসবে। আমরা যৌথভাবে সেটা দেখবো। চীনও একটা সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। ভারতও একটা করবে। যেটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য ও লাভজনক, সেটাই করবো। আবার যেহেতু ভারতের সঙ্গে আমাদের অনেক দিনের তিস্তার পানিবণ্টন…। তাই তারা যদি আমাদের প্রজেক্ট করে দেয় আমাদের সব সমস্যার সমাধানই হয়ে গেলো। সেটা আমাদের জন্য সহজ হয়ে গেলো না! ভারতের সঙ্গে যদি তিস্তা প্রজেক্টটা করি তাহলে পানি নিয়ে প্রতিদিন প্যাঁ প্যাঁ করতে হবে না। আমরা সেই সুবিধাটা পাবো। এখানে কোনও সমস্যা দেখি না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন শপথ অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিলেন, গেলাম। এরপর রাষ্ট্রীয় সফরের আমন্ত্রণ জানালেন, আমি রাষ্ট্রীয় সফরও করে এলাম। চীন আমাকে দাওয়াত দিয়েছে, আমি চীনে যাবো। আমি যাবো না কেন? বাংলাদেশ সার্বভৌম দেশ। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়েই চলবো। কার কী ঝগড়া সেটা তাদের সঙ্গে থাক। আমার না। দেশের মানুষের কতটুকু উন্নতি করতে পারি, সেটাই আমার।
Leave a Reply