পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাখিমারা খেয়াঘাট থেকে চৌদ্দরশি ব্রীজ পর্যন্ত ১৩.৬ কিলোমিটার রাস্তাটি কেয়ারের রাস্তা নামে পরিচিত। এই রাস্তাটির অবস্থা এতোই নাজুক যে বর্ষা মৌসুমে সাড়ে তেরো কিলোমিটার সড়কের আট কিলোমিটারই পানি-কাদায় চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। আইলার আগে এটি পাকাকরণের জন্য টেন্ডার হয়ে কার্যাদেশ দিলেও ঠিকাদার পূর্ব বাইনতলা-চৌদ্দরশি অংশে সামান্য কিছু মাটি ও ইটের কাজ করেন। আইলার পরও রাস্তাটিতে যৎসামান্য মাটি দেয় হয়। এরপর পেরিয়ে গেছে প্রায় দশ বছর কিন্তু এই রাস্তা সংস্কারের কোন উদ্যোগই নেওয়া হয় নি। জনগুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তার ১৩.৬ কিলোমিটারই এখন বিধ্বস্ত। দু’কিলোমিটার বাদে বাকি সবটাই চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপোযোগী। রাস্তার দু’পাশে বড়-বড় চিংড়ি ঘের। ঘেরগুলোর বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এই রাস্তা। রাস্তাটির চিংড়ি ঘেরের চেয়েও নিচু। রাস্তার ওপর দিয়ে বাঁধ দেয়া হয়েছে। শুষ্ক মওসুমে কোন মতে চলাচল করা গেলেও সামান্য বৃষ্টিতে চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ে।
রাস্তার বেহাল দশার ব্যপারে স্থানীয় বাইনতলা গ্রামের চিংড়ি চাষী রেজাউল গাজী মিঠু বলেন, নির্বাচনের আগে বলল পাশ করলেই রাস্তা করে দেব কিন্তু আবার নির্বাচন আসতে গেলো রাস্তা ঠিক করেনি।
তিনি আরও বলেন, এই এলাকায় আওয়ামী লীগের বড় নেতার বাড়ি। যিনি স্থানীয় চেয়ারম্যানও বটে। অথচ নিজ এলাকার সড়কের এই করুণ অবস্থার উন্নতিকল্পে কোন উদ্যোগ নেন না।
একই গ্রামের সিরাজুল ইসলাম গাজী ও সালাহউদ্দিন গাজী বললেন, এই রাস্তা একবার মেরামত করা হয়েছিল আইলার পরের বছর। তারপর থেকে এখনও এক ঝুড়ি মাটিওে এ রাস্তায় পড়েনি।
পাখিমারা-চৌদ্দরশি সড়কের বেহাল দশা।
পাখিমারা খেয়াঘাট-চৌদ্দরশি ব্রীজ কেয়ার রাস্তাটি পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাখিমারা, বাইনতলা, খুঁটিকাটা, সোনাখালী, চন্ডিপুর, পূর্ব কাশিম, পাতাখালী, পূর্ব পাতাখালী গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে। এই রাস্তার দু’পাশে রয়েছে পাখিমারা উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাখিমারা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাখিমারা মহিলা দাখিল মাদ্রাসা, পদ্মপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ, বি কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাইনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চন্ডিপুর কমিউনিটি ক্লিনিক, পাতাখালী কমিউনিটি ক্লিনিক, পাতাখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং পাতাখালী ফাজিল মাদ্রাসা। একটু বৃষ্টি হলেই বিদ্যালয়ের এই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না।
পাখিমারা মহিলা দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণীর ছাত্রী তামান্না সুলতানা পাখি ও শাহারিয়া আক্তার বলেন, বাইনতলা থেকে মাদ্রাসা পর্যন্ত প্রতিদিন ৪ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে যেতে হয়। যাওয়া-আসায় ৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। বর্ষা হলে এই রাস্তায় আর যেতে পারি না। এই কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি মারাত্মকভাবে কমে যায়।
বাইনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দিপঙ্কর কুমার ঘোষ বলেন, বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি এত কমে যায় যে শতকরা ১০ ভাগ ছাত্র-ছাত্রীও বিদ্যালয়ে আসে না।
রাস্তাটির অবস্থা এতোই বেহাল যে বর্ষাকালে এই এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। দুর্দশার কাহিনী এখানেই শেষ নয়। পাখিমারা খেয়াঘাট-চৌদ্দরশি কেয়ার রাস্তায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। কয়রা উপজেলার গোবরা, কাটাখালী, ১নং কয়রা, ২নং কয়রাসহ ওই এলাকার মানুষ কপোতাক্ষ নদী পার হয়ে পাতাখালী খেয়াঘাটে ওঠে। তারপর এই রাস্তা পাড়ি দিয়ে আসে পাখিমারা খেয়াঘাটে। এই খেয়াঘাট থেকে খোলপেটুয়া নদী পার হয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনতে যান নওয়াবেকী বাজারে। পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চৌদ্দটি গ্রামের মানুষও কেনা-কাটা, ও বেচা-কেনার জন্য নওয়াবেকী বাজারের উপরেই নির্ভরশীল।
এ বিষয়ে পদ্মপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনজীবী এস এম আতাউর রহমান বলেন, আসলে রাস্তাটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতাভুক্ত একটি রাস্তা। আমি রাস্তাটি সংস্কার করার জন্য নিয়মিত সড়ক ও জনপদ বিভাগের সাথে যোগাযোগ রাখছি। আশা করি খুব দ্রুত রাস্তাটি সংস্কার করতে পারবো।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের সাতক্ষীরার এসও কামরুল ইসলাম বলেন, রাস্তাটির সংস্কার ব্যায় ইস্টিমেট আকারে খুলনা বিভাগীয় অফিসে পাঠিয়েছি। খুলনা অফিস থেকে রাস্তাটির ভিডিও ফুটেজ চেয়েছে। আমরা ওই রাস্তার ভিডিও ফুটেজও নিয়েছি আগামিকাল খুলনায় ভিডিও সাবমিট করবো।
Leave a Reply