প্রথম ইনিংসে রানের দেখা পেলেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অধিনায়ক রিয়াদের ব্যাটে এলো ৫১ রান, ইমরুল করেন ৪০ রান। দীর্ঘদিন পর খেলতে নেমে ঠিক মানিয়ে নিতে পারেননি দলের বাকি ব্যাটসম্যানরা, আউট হয়েছেন অল্প রানে।
এ ধারা অব্যাহত ছিলো নাজমুল হোসেন শান্ত একাদশের ইনিংসেও। লক্ষ্য মাত্র ১৯৭ রানের হলেও টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় চাপে পড়ে গিয়েছিল নাজমুল একাদশ। তবে দেখেশুনে খেলে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন দুই তরুণ ব্যাটসম্যান ইরফান শুক্কুর ও তৌহিদ হৃদয়।
এ দুই ব্যাটসম্যানের জোড়া ফিফটিতে প্রেসিডেন্টস কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ একাদশকে ৪ উইকেটে হারিয়ে শুভসূচনা করেছে নাজমুল শান্ত একাদশ। ব্যাটিংয়ে আলো ছড়ালেন তৌহিদ ও শুক্কুর। এর আগে বোলিংয়ে নিজেদের সামর্থ্যের জানান দেন তিন পেসার তাসকিন আহমেদ, আল-আমিন হোসেন ও মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ।
রান তাড়া করতে নেমে ইতিবাচক শুরু করেছিলেন নাজমুল একাদশের সাইফ হাসান ও সৌম্য সরকার। দুজনের কেউই ইনিংস বড় করতে পারেননি। সাইফ ১৭ ও সৌম্য ২৭ রান করেন। তিন নম্বরে অধিনায়ক নাজমুল শান্তর ইনিংস থামে ২৮ রানে। কিছুই করতে পারেননি অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহীম (১) ও সম্ভাবনাময় তরুণ আফিফ হোসেন ধ্রুব (৪)।
মাত্র ৭৯ রানের মধ্যে শুরুর পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চরম বিপদে পড়ে যায় নাজমুল একাদশ। মনে হচ্ছিল, হয়তো সহজ জয়ই পেতে চলেছে মাহমুদউল্লাহ একাদশ। তখনই প্রতিরোধ গড়েন তৌহিদ ও শুক্কুর। দলের জয় নিশ্চিত করা জুটিতে দুজন মিলে যোগ করেন ১০৫ রান। ব্যক্তিগত ফিফটি করেন দুজনই।
দলীয় ১৮৪ রানের সময় লেগস্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের বোলিংয়ে আউট হন তৌহিদ, খেলেন ৬৭ বলে ৫২ রানের ইনিংস। যেখানে ছিল দুটি করে চার ও ছয়ের মার। তৌহিদ ফিরে গেলেও অপরপ্রান্তে অবিচল থাকেন শুক্কুর। নাঈম হাসানকে নিয়ে ম্যাচ শেষ করে হাসিমুখেই ডাগআউটে ফেরেন তিনি।
শেষপর্যন্ত ৭৮ বলে ৬ চারের মারে ৫৬ রান করে অপরাজিত থাকেন শুক্কুর। ইনিংসের ৪২তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মেরে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন নাঈম হাসান। তিনি অপরাজিত থাকেন ৭ রান করে।
এর আগে টস হেরে প্রথম ব্যাট করতে যাওয়া রিয়াদের দল করলো ৮ উইকেট হারিয়ে ১৯৬ (৪৭.৩ ওভার)। সর্বোচ্চ স্কোরার অধিনায়ক রিয়াদ (৮২ বলে ৫১)। দ্বিতীয় সর্বাধিক ৪০ রান আসলো ইমরুল কায়েসের ব্যাট থেকে।
উপরের এই তথ্য-উপাত্তই বলে দিচ্ছে, রান যা করার করেছেন দুই পরিণত ও অভিজ্ঞ পারফরমার। তরুণ, উদীয়মান ও সম্ভাবনাময় পারফরমারদের কারো ব্যাট কথা বলেনি। ওপেনার নাইম শেখ (১১), লিটন দাস (৯), মুমিনুল (০), নুরুল হাসান সোহান (১৪) আর সাব্বির (২৮ বলে ২১)- কেউই তিরিশের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি।
এ কারণেই স্কোর বোর্ড মোটা তাজা হয়নি রিয়াদ একাদশের, যা হয়েছে তাকে লড়াকু পুঁজিও বলা যায় না। শেরেবাংলার উইকেট আর পরিসংখ্যানের আলোকে রীতিমতো কম রান।
এমন নয় যে, উইকেট বোলিং ফ্রেন্ডলি ছিল। সীমিত ওভারের ক্রিকেটের জন্য যেমন আদর্শ ব্যাটিং পিচ থাকে, শেরেবাংলার আজকের পিচ তেমন ছিল না। বাউন্স খুব কম না থাকলেও বল ব্যাটে এসেছে ধীরগতিতে। ফ্রি স্ট্রোক প্লে, হাত খুলে খেলা একটু কঠিনই ছিল।
আয়োজনটা এখন আর সাদামাটা নেই। প্রাইজ মানি প্রায় ৩৭ লাখ টাকার। সকালে করোনা আক্রান্তদের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালনের পর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও হলো; কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর প্রথম পর্বের ব্যাটিংটা আর যাই হোক আকর্ষণীয় এবং উপভোগ্য হয়নি।
এক কথায় অনুজ্জ্বল ও সাদামাটা ব্যাটিংয়ে শুরু হলো বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ। অভিজ্ঞ রিয়াদ হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। তবে অনেক স্লো খেলে (৮২ বলে ৫২)। সে তুলনায় ইমরুলের ৪০ রানের (৫০ বলে) ইনিংসটি ছিল বেশ সাবলীল।
শুরুই হয় রান আউট দিয়ে। পয়েন্টে বল ঠেলে সিঙ্গেলস নিতে গিয়ে রান আউট হয়েছেন নাইম শেখ। লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের সরাসরি থ্রো ভেঙ্গে দেয় উইকেট। এরপর দু’ দুটি প্লেইড অন। প্রথমে লিটন দাস (তাসকিনের বলে) থার্ডম্যানে চপ করতে গিয়ে আর মুমিনুল (বোলার আল আমিন) ড্রাইভ খেলতে গিয়ে ব্যাটের ভিতরের কানায় লেগে বোল্ড।
এরপর ইমরুল বেশ স্বচ্ছন্দে খেলেছেন খানিকক্ষণ। নাইম হাসানকে স্লগ সুইপ খেলে ছক্কা হাঁকিয়েছেন। দেখে মনে হয়েছে যেন স্বর্ণ সময়ের ইমরুল। তবে আউট হয়েছেন নিজের ভুলে। যাকে অবলীলায় ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন, সেই অফস্পিনার নাইমের বলে আউট হয়েছেন ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে। নাইমের ওই বলটি ঠিক ততটা শর্ট ছিল না, তারপরও টেনে পুল খেলতে গিয়ে ধরা খেয়েছেন ইমরুল। বল ব্যাটের ওপরের অংশে লেগে ক্যাচ হয়ে যায় সীমানার ৫ গজ আগে।
এরপর অধিনায়ক রিয়াদের ধীর গতির ইনিংসটি শেষ হয় মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধর বলে। স্লগ করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেট আর স্কোয়ার লেগের মাঝামাঝি জায়গায় ক্যাচ তুলে দেন।
মুগ্ধর ওই ওভারেই রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাব্বির হমান রুম্মন। লেগকাটার টাইপের ডেলিভারি ছিল। সাব্বির অনসাইডে খেলতে গিয়ে সোজা ক্যাচ তুলে দেন ফলো থ্রু‘তে দৌড়ে মাটিতে শরীর ফেলে তা ধরে ফেলেন মুগ্ধ।
এরপর সোহান আশা জাগিয়েও কিছু করতে পারেননি। অধিনায়ক রিয়াদের সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন এ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। আর তাতেই রিয়াদ বাহিনীর স্কোরলাইন ছোট হওয়া নিশ্চিত হয়ে যায়।
রিয়াদ বাহিনীর ব্যাটসম্যানরা ভাল খেলেননি, এটা যেমন সত্য একই সাথে নাজমুল হোসেন শান্তর দলের বোলিংটাও কিন্তু খারাপ হয়নি। তিন পেসার তাসকিন (১০-০-৩৭-২), আল আমিন হোসেন (১০-১-৪০-২) আর মুগ্ধ (৯-০-৪৪-২) সবাই যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন। প্রত্যেকের ঝুলিতে দুটি করে উইকেটও পেয়েছেন। এছাড়া অফস্পিনার নাইম হাসানের ঝুলিতে জমা পড়েছে এক উইকেট (১০-১-৩৯-১)।
লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন (৮-০-৩৩-০) উইকেট পাননি। তবে বলে তেমন ধারও ছিল না। টার্নও পাননি। বৈচিত্র্যও ছিল না তেমন। বরং শেষ দিকে তিন বলে এক উইকেট শিকারী স্লো মিডিয়াম পেসার সৌম্য সরকার।
Leave a Reply