নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরা’র নেতৃবৃন্দের সাথে সাতক্ষীরা পৌরসভা প্রাণ সায়ের ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির পুরাতন ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরা’র সভাপতি অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু।
ব্যবসায়ীদের পক্ষে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন লস্কর শেলী বলেন, সাতক্ষীরা শহরকে আধুনিক শহর করার লক্ষ্যে সম্প্রতি প্রাণ সায়ের খাল পুনঃখনন ও খালের সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য কিছু বৈধ এবং অবৈধ দোকান সম্প্রতি ভেঙে দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় দোকান মালিকগণ সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির সাথে দেখা করেন এবং বৈধভাবে ইজারা নেওয়া দোকান ঘর উচ্ছেদ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন। সংসদ সদস্যের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবসায়ীগণ জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাদের যৌক্তিক দাবির কথা তুলে ধরেন। জেলা প্রশাসক সে সময় ব্যবসায়ীদেরকে আশ্বস্ত করেন যে, বৈধ কোন দোকানঘর ভাঙা হবে না। ব্যবসায়ীদের মৌখিক দাবির পরিপেক্ষিতে খাল পাড়ে দোকানের অতিরিক্ত অংশ মার্কিং করে দেওয়া হয় এবং অতিরিক্ত অংশ দোকানের মালিকগণ ভেঙে নেন।
এরপর আবারও পৌরসভা কর্তৃক দোকানঘরের দ্বিতীয়তলা ভেঙে নিতে বলা হয়। তখন আবারও ব্যবসায়ীরা স্থানীয় সাংসদের কাছে যান এবং ঐ দিনই তিনি মেয়রসহ কাউন্সিলরদেরকে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক শেষে ব্যবসায়ীদের সবার সামনে পৌর সম্মেলন কক্ষে দোকানঘর ভাঙা হবে না -এ মর্মে ব্যবসায়ীদেরকে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু হঠাৎ ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে বক্তব্য প্রদান করেন।
তিনি তার বক্তব্যে ব্যবসায়ীদেরকে অবৈধ বললেও, আইনি জটিলতার কথা বলে স্ব-বিরোধী বক্তব্য প্রদান করেছেন। তিনি বলেছেন, সাতক্ষীরাবাসীর দাবি এবং সাতক্ষীরাবাসীর কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে তিনি অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করবেন। আমরাও জেলা প্রশাসকের সাথে একমত পোষণ করে বলছি, অবৈধ স্থাপনা ভাঙার ব্যাপারে আমরাও আপনার সাথে একমত। তাই বলে বৈধ স্থাপনাকে অবৈধ বলে ভাঙার চেষ্টা করলে আমরা সাতক্ষীরাবাসী সেটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিহত করার চেষ্টা করবো এবং আমরা সফল হবো- ইনশাল্লাহ। জাকির হোসেন লস্কর আরো বলেন, পৌরসভা থেকে লিজকৃত দোকানের পরিমাণ চার শতাধিক এবং এই চার শতাধিক দোকানে আরও অন্তত দুই হাজার কর্মচারী কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সবমিলিয়ে সৌন্দর্য্য বর্ধনের নামে এই দোকানঘরগুলো ভাঙা হলে ৩৫-৪০ হাজার মানুষের সরাসরি রুটি-রুজির উপর প্রভাব পড়বে। এছাড়াও এসমস্ত ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে, সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে, মাহাজন থেকে বাকি নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেন। দোকানঘর ভাঙা হলে আরও অন্তত নতুন করে ৩’শ ঋণখেলাপির জন্ম হবে। আমরা সাতক্ষীরার সর্বস্তরের জনগণকে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে সরাসরি সমর্থন দেওয়ার জন্য উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিক ভাইয়েরা, সুধি সমাজ, সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চসহ নাগরিক সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমরা ব্যবসায়ীরা পৌর কর পরিশোধ করি, সরকারের কোষাগারে প্রতিনিয়িত ট্যাক্স, ভ্যাট প্রদান করে পৌরসভার রেকর্ডীয় সম্পত্তি লিজ নিয়ে ব্যবসা করি। আমরা কোন অবৈধ দখলদার নই।
তিনি আরো বলেন, পৌরসভার জমির রেকর্ড ও আমাদের লিজের কাগজপত্র আপনারা দেখতে চাইলে আমরা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো। কিন্তু আপনাদের কাছে আমাদের বিনীত অনুরোধ যে, আপনারা না জেনে কোন সিদ্ধান্ত দিলে বা পক্ষাবলম্বন করলে আড়াই হাজার পরিবার স্বাভাবিক অবস্থা থেকে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হবে।
জাকির হোসেন লষ্কর শেলী আরো বলেন, আমরা আশা করবো জেলা প্রশাসক দোকান ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন এবং শহরকে পরিচ্ছন্ন এবং সৌর্ন্দয্য বৃদ্ধির যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন সে উদ্যোগে ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়ে করবেন বলে আমারা আশা রাখি। তাতে ব্যবসায়ীরা যেমন উপকৃত হবে তেমনি জেলা প্রশাসক মহাদয় সাতক্ষীরাকে যে সুন্দর পরিচ্ছন্ন নগরীতে পরিণত করতে চাচ্ছেন সেটিও সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরা এর নেতৃবৃন্দ ব্যবসায়ীদের বক্তব্যে বিপরীতে বলেন, আমরা সাতক্ষীরাবাসীর ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করি। আমরা আমাদের বক্তব্যে সুস্পষ্টভাবে বলে আসছি যে, আমরা সাতক্ষীরা জেলা সকল নদী-খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদের পক্ষে এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছি। প্রাণ সায়র খালের প্রাণ ফিরিয়ে আনাও সাতক্ষীরাবাসীর প্রাণের দাবি। আমরা যেমন সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পক্ষে, তেমনি কোন বৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিপক্ষে। কোন বৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হলে আইনি প্রক্রিয়া মেনে এবং যথাযথ পুনর্বাসন নিশ্চিত করেই তা করতে হবে। একই সাথে যেসকল ভূমিহীন দরিদ্র পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে তাদেরকে রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী খাস জমির বন্দোবস্ত দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছি।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, যেসকল ব্যবসায়ী বৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে।
নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরা’র পক্ষে বক্তব্য রাখেন, সভাপতি অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু, সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সুভাষ সরকার, সুধাংশু শেখর সরকার, প্রকৌশলী আবেদুর রহমান, শেখ ওবায়দুস সুলতান বাবলু, সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুম, যুগ্ম-সম্পাদক রওনক বাসার, সাংগঠনিক সম্পাদক সায়েম ফেরদৌস মিতুল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমির হোসেন খান চৌধুরী, আইন সম্পাদক অ্যাড. সালাউদ্দীন ইকবাল লোদী প্রমুখ।
ব্যবসায়ীদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আ স ম আব্দুর রব, শেখ মোশারফ হোসেন, এ এসএম মাকছুদ খান, অ্যাড. শেখ রায়হান আলী, অসীম দাশ সোনা, মীর সুমন, তুহিন, রতন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply