শিরোনাম :
সাতক্ষীরায় বিজিবির অভিযানে সাড়ে ৩ লক্ষাধিক টাকার ভারতীয় মাদকসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ সাবেক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অভিযোগে জেলা বিএনপির কাছে লিখিত আবেদন রেমিট্যান্সে রেকর্ড, ২৬ দিনে এলো প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে আদালতের রায় ঈদের ছুটি দীর্ঘ হলেও অর্থনীতিতে স্থবিরতা আসবে না: অর্থ উপদেষ্টা বিকাশ-নগদ-রকেটে দৈনিক ৫০ হাজার টাকা লেনদেন করা যাবে রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনে ভেটো দিয়েছে ১২ দলীয় জোট ভক্তদের ধন্যবাদ জানিয়ে হামজা বললেন, ‘জুনে আবার দেখা হবে’ পর্যটক বরণে প্রস্তুত সাজেকসহ রাঙামাটির পর্যটনকেন্দ্রগুলো ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদনে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়ী করার অভিযোগ সত্য নয়’

প্রভাবশালীর দো’তলা বাড়ি বাঁচাতে মালামালসহ প্রতিবন্ধী পরিবারের ঘর ভেঙে মাটি চাঁপা

কবির হোসেন
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ১০ মার্চ, ২০২০
  • ২৯৮
মালামালসহ প্রতিবন্ধী পরিবারের ঘর ভেঙে মাটি চাঁপা

দেবহাটার পারুলিয়াতে চলমান সাপমারা খাল পুনঃখনন কার্যক্রমে খালের পাশে সরকারি জমিতে থাকা প্রভাবশালীর দো’তলা বাড়ি বাঁচাতে যাবতীয় মালামালসহ ওমর ফারুক (৮) নামের এক প্রতিবন্ধীর পরিবারের বসতঘর স্কেভেটর মেশিন দিয়ে ভেঙে মাটি চাঁপা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে । সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর ওয়ার্ক এ্যাসিসট্যান্ট জাহাঙ্গীর হোসেনসহ খনন কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।

রবিবার দুপুরের পর পারুলিয়া ইছামতি সিনেমা হল টু ক্যাপ্টেন শাহজাহান মডার্ন স্কুলগামী সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাস্তা ও সাপমারা খালের পাড় সংলঘ্ন প্রতিবন্ধী ওমর ফারুকের পরিবারের বসত ঘরটি ওয়ার্ক এ্যাসিসট্যান্ট জাহাঙ্গীরের নির্দেশে যাবতীয় মালামালসহ ভেঙে মাটি চাঁপা দেয়া হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পারিবার ও স্থানীয়দের।

প্রতিবন্ধী ওমর ফারুককে নিয়ে সাপমারা খাল ও সরকারী রাস্তার মধ্যবর্তী স্থানের জমিতে ওই ঘরটিতে বসবাস করতেন পরিবারটি। প্রতিবন্ধী ওমর ফারুকের পিতা আব্দুল হামিদ সরদার ও মা রাবেয়া খাতুন কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, তাদের পরিবারের অন্য কোন বাসযোগ্য জমি না থাকায় দীর্ঘ বহু বছর ধরে সাপমারা খালের পাশ্ববর্তী ওই জমিতে প্রতিবন্ধী ছেলেটিকে নিয়ে তারা বসবাস করে আসছিলেন।

সম্প্রতি খালটির পুনঃখনন কার্যক্রম শুরু হলে বিনা প্রয়োজনে অসহায় মানুষের ঘরবাড়ি না ভেঙে খালটি খনন এবং বাড়ীঘর বাঁচাতে খননকৃত মাটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক সহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে খালপাড়ের কয়েক হাজার মানুষ দাবী তুলে ধরেন।

সে সময়ে পারুলিয়াতে খাল খনন সম্পর্কিত গণশুনানীতে বক্তৃতাকালে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল গণদাবীটি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী খাল খনন এবং খননকৃত অতিরিক্ত মাটি অসহায়দের বাড়ীঘর বাঁচানোর স্বার্থে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য জনসম্মুখে মৌখিক নির্দেশনা দেন। এরপর থেকে একদিকে ঠিকঠাক খাল খনন চলে আসছিলো এবং অন্যদিকে কিছু অসাধু ব্যাক্তি মাটি সরিয়ে নেয়ার নামে সাপমারা খালের লক্ষ লক্ষ ফুট মাটি অনুমোদন ছাড়াই অবৈধ ভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করতে শুরু করে। সম্প্রতি পনি উন্নয়ন বোর্ড অবৈধভাবে মাটি বিক্রির বিপক্ষে অবস্থান নিলে, খননের যাবতীয় মাটি খালপাড়ের অসহায় মানুষদের বাড়ীঘর এমনকি রাস্তাঘাটের ওপরেও চাপিয়ে দিতে শুরু করেন পাউবোর ওয়ার্ক এ্যাসিসট্যান্ট জাহাঙ্গীর হোসেন এবং খনন কাজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্কেভেটর মেশিনের দায়িত্বে নিয়োজিত আক্কেল আলীসহ অন্যান্যরা।

রবিবার দুপুরের পর ওয়ার্ক এ্যাসিসট্যান্ট জাহাঙ্গীর হোসেনের নির্দেশে খনন কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন স্কেভেটর মেশিন দিয়ে যাবতীয় মালামালসহ তাদের বসতঘরটি ভেঙে মাটি চাঁপা দিয়ে দেয় বলেও জানান প্রতিবন্ধীর পরিবারটি। তারা আরো বলেন, খাল খননের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা সেখানে ছিলো।

কিন্তু তাদের ঘরটির পাশে থাকা একজন প্রভাবশালীর দো’তলা বিশিষ্ট বাড়িটি বাঁচাতে এবং খালের খননকৃত মাটি রাখার জন্যই তাদের ঘরটি ভেঙে মাটির নিচে চাঁপা দেয়া হয়েছে।

এমনকি ঘরের ভিতরের মালামাল সরিয়ে নেয়ার জন্য সময় চাওয়া হলেও ওয়ার্ক এ্যাসিসট্যান্ট জাহাঙ্গীর হোসেনের নির্দেশে সময় না দিয়ে ঘরটি ভেঙে মাটি চাঁপা দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের। এব্যাপারে অভিযুক্ত ওয়ার্ক এ্যসিসট্যান্ট জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একজন সামান্য ওয়ার্ক এ্যাসিসট্যান্ট, আমার সিদ্ধান্তে ঘর ভাঙা সম্ভব নয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুর রহমানসহ উদ্ধর্ত্তন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেই ঘরটি ভেঙে সেখানে মাটি রাখা হয়েছে। তবে মালামাল সরিয়ে নিতে সময় না দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রবিবার সন্ধ্যায় আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিবন্ধী পরিবারটিকে আপাতত আমাদের পারুলিয়াস্থ কলোনিতে বসবাস করতে বলা হয়েছে এবং তাদেরকে খাল খনন পরবর্তী পুনর্বাসনসহ অন্যান্য সহযোগীতা প্রদানের বিষয়ে আশ্বস্থ করা হয়েছে।

এসময় প্রতিবন্ধী পরিবারের ভেঙে দেয়া ঘরের আশেপাশে দো’তলা বাড়ি সহ আরো অনেকের বাড়িঘর, জলিল হাচ্যারী ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বহাল অবস্থায় থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই প্রভাবশালীকে তার দো’তলা বাড়িটি ভেঙে নিতে বলা হলেও তিনি আমাদের কথায় কর্নপাত করছেননা। শীঘ্রই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সাথে নিয়ে প্রত্যেকটি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে বলেও তিনি জানান।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১
Design and Developed by IT Craft in association with INTENT