শিরোনাম :
ইনিংস ব্যবধানে হারের লজ্জাই পেলো বাংলাদেশ বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় সাতক্ষীরায় আনন্দ র‌্যালি সাতক্ষীরা সদর মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের মতবিনিময় সভা জাতীয় পতাকার ওপর ইসকনের পতাকা, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচন নিয়ে যা বললেন ভিপি নুর সার্চ কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি বিশ্ব স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস উপলক্ষ্যে সাতক্ষীরায় আলোচনা সভা সাতক্ষীরা বোটানিক্যাল সোসাইটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বৃক্ষরোপন সাকিবের খেলতে না পারার পেছনে বিসিবি জড়িত নয়: ফারুক সাতক্ষীরায় জিপি, পিপি ও নারী-শিশু পিপিসহ ৩৪ আইন কর্মকর্তা নিয়োগ

প্রিয় শিক্ষকের ‘গল্পটা অনুপ্রেরণার’

এস এম শাহিন আলম
  • আপডেটের সময় : শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৯
  • ১৭৩৭
প্রিয় শিক্ষক আবদুস সালামের সাথে ছাত্র মোহাম্মদ নাজমুল গওছ।
বাবা মা দুজনেই ছিল অল্প শিক্ষিত। আমি যখন ২০০০ সালে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হলাম তখন কেউ বলেনি আমার পড়া-লেখা হবে। কারণ আমি বাবা-মায়ের অতি আদরের একমাত্র বাদর ছেলে ছিলাম। আমাকে গাইড করা ছিল অত্যন্ত কঠিন কাজ। আমার রেজাল্টও খুব ভালো হত না। কোনদিন ভালো করার লেশমাত্র চিন্তাও করেনি। রোল থাকত ২০ এর উপরে।

আবদুস সালাম স্যারের হাতে সম্মাননা তুলে দিচ্ছেন অতিথিবৃন্দ।

একদিন শীতের সকালে স্যারেরা বাইরে বসে রোদ পোহাচ্ছিলেন। আমি তখন পাশেই খেলা করছিলাম। স্যার আমাকে ডেকে বললেন, ‘তুই চাইলে কিন্তু ক্লাসে প্রথম হতে পারিস।’ আমি সেদিন মনে-মনে ভেবেছিলাম স্যার বলেকি..? আর স্যারকে বলেছিলাম, স্যার কিভাবে? স্যার বলছিলেন আমি বলে দিব কিভাবে।
স্যারের ওই একটা কথা আর অনবদ্য সাহায্য-সহযোগিতায় আমার পুরো গতিবিধি পরিবর্তন হয়ে যায়। আমাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সেদিন থেকে আর কোনদিন কোন ক্লাসে প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হয়নি। আমি যখন প্রাইমারি স্কলারশীপ দিব খুব ভেঙ্গে পড়েছিলাম। অনেক নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম। আমার খুব মনে পড়ে,পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে স্যার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে-দিতে বলছিলেন আলিপুর থেকে যদি একজনও স্কলারশীপ পায় সেটা তুই পাবি। সেদিন নতুন করে শক্তি পেয়েছিলাম। আমি আল্লাহর রহমতে ঠিকই স্কলারশীপ পেয়েছিলাম।

আবদুস সালাম স্যার।

আমি কোন ক্লাসে কখনো দ্বিতীয় হয়নি, আমার প্রাপ্তির ঝুঁলিতে আছে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর স্কলারশীপ, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত গোল্ডেন এ প্লাস সহ বোর্ড বৃত্তি। এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে গোটাকয়েক বৃত্তি। আর এসবের পেছনে তার অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতার কমতি ছিল না।

আমি যখন ২০১২ সালে এ্যাডমিশন টেস্ট দিতে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকা আসব তখন টিকিটও সালাম স্যারের কেটে দেয়া ছিল।
এভাবেই প্রিয় শিক্ষক আব্দুস সালাম (সিক্স স্যার) থেকে পাওয়া অনুপ্রেরণার গল্প প্রথম আলোর কাছে তুলে ধরেছিলেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলিপুর ইউনিয়নের আবদুল আজিজের ছেলে মোহাম্মদ নাজমুল গওছ। বর্তমানে তিনি ঢাকার ১২০/১,ডিস্ট্রিলারী রোড, মুরগিটোলা, গেন্ডারিয়ায় থাকেন এবং একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
নাজমুল গওছ এর সেই প্রিয় শিক্ষক ‘আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা’ পেয়েছেন। শুক্রবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে তার হাতে সম্মাননা তুলে দেন বাংলাদেশ জাতীয় ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী।
আপনার প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা পেয়েছেন অনুভূতি কেমন? জানতে চাইলে মো. নাজমুল গওছ বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ, এমবিএ শেষ করে আমি নিজেও এখন শিক্ষক কিন্তু আজো সালাম স্যারের সেই ছোট্ট গওছ। আমার ছবি তার কাছে আর তাঁর ছবি এখনও আমার মানিব্যাগে। এখনোও দেখা হলে আমার হাত তার পায়ের ধুলো ছুঁতে ভুল করেনা। আমি সক্রেটিসকে দেখেনি আমি প্লেটোকেও দেখিনি কিন্তু আমি দেখেছি আমার সিক্স স্যারকে (আব্দুস সালাম স্যার)। এর আগে কোনদিন ও তিনি তাঁর কাজের স্বীকৃতি বা পুরস্কার পাননি। কিন্তু আমার কাছে তিনি নোবেলজয়ী। শান্তি ও শিক্ষায় প্রদত্ত আলফ্রেডের নোবেল যদি আমার কাছে থাকত আমি প্রতিবছর আমার সিক্স স্যারকে দিতাম। বেঁচে থাকুক ভালোবাসা, সুস্থ ও সুন্দর থাকুক আমার সিক্স স্যার।
প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা পাওয়া আব্দুস সালাম স্যারের কাছে  প্রিয় শিক্ষক হয়ে ওঠার গল্পটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নিজেই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই আমার ইচ্ছা ছিলো আমি শিক্ষক হবো। কারণ শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর।

আমি ১৯৭৫ সালে যখন আলিপুর প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা জীবন শুরু করি তখন ওই স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো খুবই কম। এর কারণ অনুসন্ধান করতে অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম ওই এলাকার বেশিরভাগ পরিবারই নিন্মবিত্ত। সংসার খরচ চালিয়ে সন্তানদের লেখাপড়া শেখানো তাদের পক্ষে সম্ভব না। বরং সন্তানরা যদি তাদের কাজে সহযোগিতা করে তাহলে তারা কিছু বাড়তি টাকা রোজগার করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে আমি তাদের বারবার বুঝিয়ে বেশ কিছু ছেলে-মেয়েদের স্কুলমুখী করতে সক্ষম হই। এরপরও যারা স্কুলে আসতে পারেনি আমি তাদের স্কুল টাইমের পরে স্কুলের পড়াগুলো করাতে থাকি। এভাবে একসময় আমি আলিপুরের প্রত্যেকটি মানুষের প্রিয় শিক্ষকে পরিণত হই। আলিপুর স্কুলের ষষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে যোগদান করায় সবাই আমাকে সিক্স স্যার বলে ডাকতো। এখনো ওই এলাকার সবাই সিক্স স্যার নামেই আমাকে চেনে।

অবসর নেওয়ার পর এখন এ প্রিয় শিক্ষকের ইচ্ছা একটি বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তোলা। কেউ যেন অক্ষর জ্ঞানহীন না থাকে এটাই তার চাওয়া।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১
Design and Developed by IT Craft in association with INTENT