আট বছর বয়সে বাংলাদেশের বিস্ময় বালক ফাহিম বাবা নূরে আলমের সঙ্গে ফ্রান্সের প্যারিসে চলে যায়। বিস্ময়কর বলার কারণ তার দাবা প্রতিভা। এই খেলাই তাকে ফ্রান্স থেকে বিতাড়িত হতে দেয়নি। সেই ফাহিমকে নিয়ে নির্মিত হচ্ছে ফরাসি চলচ্চিত্র ‘ফাহিম’।
সব কাজ শেষে এটি এখন মুক্তির জন্য প্রস্তুত। আগামী ১৬ অক্টোবর প্রেক্ষাগৃহে আসবে এই ছবি। গত ২৩ আগস্ট এলো ছবিটির ট্রেলার। এতে ফাহিম ও তার বাবার সংগ্রাম তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি ছিল দাবায় সম্পৃক্ত হওয়ার টুকরো চিত্র। ট্রেলারটি ওয়াইল্ড বাঞ্চ ডিস্ট্রিবিউশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
এ ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আহমেদ আসাদ। নূরে আলম চরিত্রে থাকছেন মিজানুর রহমান। দু’জনই প্রবাসী। ছবিটির অভিনয়শিল্পী খুঁজতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বাংলাদেশি কমিউনিটি ইন ফ্রান্স (বিসিএফ) পেজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল।
ফাহিমের কোচ জাভি পারমন্টিয়েরের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন খ্যাতিমান ফরাসি অভিনেতা জেহার্দ দেপারদ্যু। পিয়ের-ফ্রাঁসোয়া মার্তা-লাভাল পরিচালিত ছবিটির শুটিং হয়েছে প্যারিস, কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তর-চব্বিশ পরগনার পর্যটন কেন্দ্র টাকিতে।
২০০০ সালে ঢাকার ডেমরায় জন্ম ফাহিম মোহাম্মদের। আট বছর বয়সে বাবা নূরে আলমের সঙ্গে ফ্রান্সের প্যারিসে চলে যায় সে। সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করলেও দুই বছর পর তা ‘চূড়ান্তভাবে’ প্রত্যাখ্যান করা হয়। এরপর অবৈধ অভিবাসী তকমা নিয়ে কাটতে থাকে তাদের ফেরারি জীবন।
নূরে আলম দাবা অনুরাগী। তাই দুঃসময়ের মধ্যেও ছেলেকে তালিম দিয়ে যেতে থাকেন। অনূর্ধ্ব-২০ টুর্নামেন্টে জয়ী হওয়ার পর স্থানীয় এক দাবা প্রশিক্ষকের নজরে পড়েন ফাহিম। তার পরামর্শে প্যারিসের ক্রিটেই এলাকার দাবা ক্লাব টমাস দু বুর্গেনেফে ছেলেকে নিয়ে যান নূর আলম। সেখানে ফাহিমের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়। ক্লাব সংলগ্ন খালপাড়ে তাঁবু গেড়ে বসবাস শুরু করেন তারা।
এরপর বিভিন্ন পরিবারের সঙ্গে রাতে থাকার ব্যবস্থা হয় ফাহিমের। ফ্রান্সের জাতীয় দাবা দলের সাবেক প্রশিক্ষক জাভি পারমন্টিয়েরের প্রশিক্ষণে সে একে একে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার শিরোপা জিততে থাকে। ফ্রান্সের জাতীয় জুনিয়র (অনূর্ধ্ব -১২) দাবায় অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলে তাকে ঘিরে আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে ফরাসি গণমাধ্যমে।
ছেলের সাফল্যের সুবাদে ২০১২ সালের ১১ মে তিন মাসের অস্থায়ী ওয়ার্ক পারমিট পান নূরে আলম। ফাহিম ভর্তি হয়ে যায় স্কুলে। ২০১৩ সালে গ্রিসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব দাবা স্কুল চ্যাম্পিয়নশিপে অনূর্ধ্ব-১৩ বিভাগে সেরা হয়েছে সে।
ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপেও খেলেছেন ফাহিম। বিশ্ব জুনিয়র দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। বিপর্যয়ের মুখেও ভেঙে না পড়ে লড়াকুর মতো অসীম দৃঢ়তা দেখিয়েছেন ফাহিম ও তার বাবা। দাবার বোর্ডে জীবনকে জয় করেছে সে। ফ্রান্সের দাবা ফেডারেশন ও ফরাসি ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের চেষ্টায় তাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়। এই বিস্ময় বালক শুধু খেলায় নয়, ফরাসি ভাষা শিক্ষায় সবার আগে এগিয়ে যায়। কম বয়সী কেউ এত অল্প সময়ে ফরাসি ভাষা রপ্ত করতে পারেনি কখনও।
ফাহিম এখন ১৯ বছরের তরুণ। দাবা খেলে ফরাসি নাগরিকত্ব পাওয়া বাংলাদেশের এই ছেলের রূপকথার মতো জীবনের গল্প নিয়ে ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয়েছে একটি বই। ‘অ্যা ক্ল্যানডেস্টাইন কিং’ নামের গ্রন্থটি অবলম্বনে চলচ্চিত্র তৈরি হলো ফ্রান্সে। এর নাম ‘ফাহিম’।
Leave a Reply