একটি বাড়ির দাম কত হতে পারে? পৃথিবীতে বিখ্যাত অনেক বাড়ি রয়েছে যার দাম আকাশচুম্বী। তবে সাধারণ সাদাসিধে একটি বাড়ির দাম আর কতই বা হতে পারে। এর মধ্যে যদি বাড়িটিতে না থাকে বিদ্যুৎ সংযোগ। খুব বেশি হলে কয়েক লাখ কিন্তু এ রকম একটি বাড়িরই দাম হাঁকানো হয়েছে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩৪ কোটি টাকা। বাড়িটির দাম এত হওয়ার পেছনের কারণটি বেশ মজার বাড়িটি কিনলে এর সাথে পাচ্ছেন পুরো ৬৬০ একরের একটি দ্বীপ।
স্কটল্যান্ডের ফির্থ অব ক্লাইডে সাউন্ড অব বুটের উত্তরে অবস্থান ইঞ্চমারনক নামের এই দ্বীপটির। সম্প্রতি দ্বীপটি বিক্রি করে দেওয়ার ঘোষণা এসেছে। ৩ লাখ ২৫ হাজার পাউন্ড দাম হাঁকানো এই দ্বীপটি নীল জলরাশির মাঝে সবুজের এক নৈসর্গিক সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছে। দ্বীপটির মাঝখানে রয়েছে পুরনো প্রাসাদের মতো দেখতে একটি বাড়ি। বাড়িটিতে রয়েছে চারটি বেডরুম। অবকাশ যাপনের সুন্দর ব্যবস্থা।
শুধু তাই নয়, চার কিলোমিটার দীর্ঘ এই দ্বীপটিতে একটি বিশাল খামার, নিজস্ব ফেরি এবং ফেরি পারাপারের ঘাট রয়েছে। ফেরিতে করে মূল ভূখণ্ডে যেতে সময় লাগে মাত্র মিনিট দশেক। বাড়িটি দ্বীপের মাঝামাঝি হওয়ায় সমুদ্রের ঝড় থেকে অনেক নিরাপদ। দুটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি দ্বীপসহ বাড়িটি বিক্রির দায়িত্ব পেয়েছে।
দ্বীপটির ইতিহাস বেশ চমকপ্রদ। অষ্টাদশ শতাব্দীতে জলদস্যুদের নিকট বেশ আকর্ষণীয় জায়গা ছিল ইঞ্চমারনক দ্বীপটি। বেশ কয়েকবার আক্রান্ত হয়েছিল এই দ্বীপটি তখন। ধীরে ধীরে অপরাধ জগতের বড় একটি আস্তানা গড়ে ওঠে এই দ্বীপে। তবে স্কটিশ কমান্ডো এবং ফ্রেন্স কানাডিয়ানরা এটিকে মুক্ত করে যুদ্ধের প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করতে শুরু করে অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে।
দ্বীপটির নামকরণের পেছনেও রয়েছে ইতিহাস। স্কটিশ সন্ন্যাসী সেন্ট মারনক এই দ্বীপে দীর্ঘদিন বসবাস করেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। মূলত তার নাম থেকেই এই দ্বীপটির নামকরণ করা হয়েছে ইঞ্চমারনক আইল্যান্ড। এখনো সেলটিক ক্রসের বেশ কিছু ভাঙা টুকরা পাওয়া যায় এই দ্বীপে, যাতে প্রমাণিত হয়ে এখানে এক সময় বড় কোনো গির্জার অবস্থান ছিল। এছাড়াও ব্রোঞ্জ যুগের কবর এবং নানা সময়ের যুদ্ধের চিহ্ন পাওয়া যায় এই দ্বীপে।
ত্রয়োদশ শতকে নরওয়ে এবং স্কটল্যান্ডের মধ্যে সংঘটিত লার্গ যুদ্ধে নিহতদেরে ই দ্বীপেই সমাহিত করা হয়েছিল। গত শতাব্দীতেও এই নেশাগ্রস্তদের সুস্থ করে তুলতে ব্যবহার করা হতো এই দ্বীপটি। তবে ধীরে ধীরে এই দ্বীপে মানুষের সংখ্যা কমে যেতে শুরু করে। ১৯৮৬ সালে বাড়ি বিক্রি করে চলে যান সর্বশেষ বসবাসকারী পরিবারটি। এরপর ১৯৯৯ সালে আরেকটি পরিবার কিনে নেয় পুরো দ্বীপটি কিন্তু তারা এখানে ছুটি কাটানোর জন্যই আসতেন কেবল। এখন তারাও দ্বীপটি বিক্রি করে দিতে চাইছেন।
শুধু ঐতিহ্য বা সৌন্দর্য নয় একটি বিশাল খামার এবং চারণভূমি থাকায় এই দ্বীপটির বেশ চাহিদা রয়েছে। এখানে গবাধিপশু পালন করে দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব। এছাড়া সমুদ্র তীরে রয়েছে মাছ ধরার সুযোগ।
সূত্র : টেলিগ্রাফ
Leave a Reply