ধর্ষণের প্রতিকারে নারীদের শালীন পোশাকে বাইরে বের হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়া অভিনেতা ও প্রযোজক অনন্ত জলিল নতুন আরও একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন।
শনিবার প্রকাশিত ভিডিওতে নারীদের উদ্দেশে কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তার ওই বক্তব্যকে ‘কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য’ অভিহিত করে অভিনেত্রী শাওনসহ চলচ্চিত্র অঙ্গনের বেশ কয়েকজন তারকা সমালোচনা করেন।
রোববার সন্ধ্যায় আবারও নতুন আরেকটি ভিডিও প্রকাশ করেন। ভিডিওজুড়ে মূলত ধর্ষকদের তীব্র সমালোচনা করেই তিনি কথা বলেছেন। শুনিয়েছেন নানা উপদেশ।
ভিডিওর শুরুতে ধর্ষকদের উদ্দেশে অনন্ত জলিল বলেন, ‘আমি আজ কিছু কঠিন কথা বলব। এই যে তোমরা যারা ধর্ষণ করেছ, তোমরা বলব না তোরা বলব? ধর্ষণ করে এই যে সাধারণ দেশে আন্দোলন করে সাধারণ মানুষের যে জীবনযাত্রার বিঘ্ন ঘটাচ্ছো? কেমন লাগছে তোমাদের? হাসি পাচ্ছে? তোমাদের সামনে তোমাদের স্ত্রী-কন্যাকে যদি কেউ ধর্ষণ করে তাহলে কেমন লাগবে তোমার? তুমি তো একটা অমানুষ! তোমার ভালোই লাগবে বোধহয়? না হলে অন্যের মা-বোনকে তো ধর্ষণ করতে পারতে না। তোমার ভালো লাগবে।’
‘তোমার যে মনুষত্ব সেটা তো মরে গেছে। তোর যে মনুষত্ব সেটা মরে গেছে। নিজেকে পুরুষ ভাবো, বীর পুরুষ? কাপুরুষের দল। নিজেকে বীরপুরুষ মনে হয়? কবে নিজেকে মানুষ মনে করবে? তুমি যদি বিয়ে না করে থাকো তবে তো তোমার জীবনে একটা মেয়ে আসবে।’
‘আরে তোর বাবা-মাকে মানুষ কী মনে করে? তোর জন্য তোর বাবা-মা পর্যন্ত কলঙ্কিত। তোর বাবা-মাকে মানুষ কী বলে? তোর যদি লজ্জাবোধ থাকে, তুই একবার চিন্তা কর- তোর বাবা-মা ভাইবোন, যারা রাস্তায় বের হয় তাদেরকে মানুষ কী বলে? আজ মা জাতি কলঙ্কিত কলঙ্কিত তোর জন্য।’
অনন্ত জলিল বলেন, যদি মনে হয় আমার কথাগুলো ঠিক আছে, আর এতে কিছু সংখ্যক মানুষও যদি পরিবর্তন হয়, আমার কথার কারণে যদি কিছুটা হলেও উপকার হয় তাহলে আমি তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।
তিনি বলেন, আমার প্রিয় ভাইয়েরা, একবার চিন্তা করে দেখুন। আপনারা যা করছেন তা ঠিক কিনা? আমি এজন্য তুই-তুমারি বলেছি। আই এম সো স্যরি। একবার চিন্তা করে দেখুন তো এটা ঠিক কিনা? একবার চিন্তা করে দেখেন নিজের বোন যদি, নিজের স্ত্রী যদি এই ধরনের সমস্যায় পড়ে তখন আপনার মাথায় রক্ত উঠবে কিনা?
একবার চিন্তা করে দেখুন, আপনার যদি একটু মনুষত্ব থাকে তবে কী অবস্থা হবে আপনার তখন? মনে হবে না, সারা দেশে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিই। আপনার তো শক্তি আছে। কিন্তু যাদের শক্তি নাই, নিরীহ। তারা চুপেচাপে কান্না করে।
অনন্ত জলিল বলেন, মরতে আপনাকে হবেই। যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, সারা পৃথিবী- আসমান, জমিন যার তিনি হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা। এই যে, আপনি এখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবেন সেখানে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে না তার নিশ্চয়তা কী? অ্যাকসিডেন্ট হয়ে পড়ে থাকবেন পঙ্গু হাসপাতালে। তাদের মধ্যে কেউ না কেউ আপনার মতো ছিল। তখন আপনার জীবনটা কেমন হবে? এজন্য আপনি যতদিন বাঁচবেন ততদিন ভালো কাজ করে বাঁচার চেষ্টা করুন। মরার পরও যাতে আপনি অমর হয়ে থাকেন- বাকি জীবনে এমন কিছু করে যান।
ভিডিওর শেষাংশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে অনন্ত জলিল বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আকুল আবেদন, আপনিই আমাদের অভিভাবক। আপনাকেই শক্ত হাতে এসব অমানুষের মৃত্যুদণ্ডে আইন ও এর বাস্তবায়নে সুব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, আপনার দিকেই সবাই তাকিয়ে আছে। আপনি কখন নির্দেশনা দেবেন। এই দেশ আমাদের সবার। কোনো ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন। সবাই ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। খোদা হাফেজ।’
ফেসবুকে যুক্ত করা ভিডিওর ক্যাপশানে অভিনেতা অনন্ত জলিল বলেন, গতকালের ভিডিওতে আমি মূলত মেয়েদেরকে শালীনতা বজায় রাখার জন্য বলতে চেয়েছি। অনেকেই বিষয়টিকে পজিটিভভাবে নিয়েছেন আবার অনেকেই নেগেটিভ ভাবে নিয়েছেন, আমি কোনো বিতর্কে জড়াতে চাই না। কেউ ভুল বুঝে থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। তাই আমি উক্ত বিষয়টি কারেকশন করে দিলাম।
দেশের আলোচিত অভিনেতা অনন্ত জলিল বলেন, নারী-পুরুষ উভয়েই পরিবার ও সমাজের জন্য অনিবার্য। পরিবার টিকিয়ে রাখার জন্য যেমন নারী-পুরুষের সম্মিলিত উদ্যোগ, পরিকল্পনা, ত্যাগ ও সংযমের প্রয়োজন। একজনকে উপেক্ষা করে বা বাদ দিয়ে কেবল পুরুষ কিংবা নারীর পক্ষে বেশিদূর এগোনো সম্ভব নয়। তাই আমরা চাই নারী-পুরুষের সৌহার্দ্যপূর্ণ সমঝোতামূলক সম্পর্ক, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্ক ।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধর্ষণ, বিশেষ করে শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার মতো ঘৃণ্য অপরাধ বেড়েই চলেছে। এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত অপরাধীর দ্রুততম সময়ে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার বিকল্প কিছু নেই। পরিবারের দায়িত্ব নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা।
যে বক্তব্যের কারণে বিতর্ক
ধর্ষণের জন্য নারীদের খোলামেলা পোশাককে দায়ী করে অভিনেতা অনন্ত জলিল বলেছেন, এ ধরনের পোশাকের কারণে মানুষ আপনার মুখের পরিবর্তে আপনার শরীর দেখে। তারা অশ্লীল মন্তব্য করে এবং ধর্ষণের কথা চিন্তা করে।
শনিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করেন অনন্ত জলিল। ৬ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে নারীদেরকে নিজের ‘ভাই হিসেবে’ কিছু পরামর্শ দিতে শোনা যায় এই অভিনেতাকে।
আলোচিত ওই ভিডিওতে দেয়া বক্তব্যে অনন্ত জলিল বলেন, ‘নারীরা (বাংলাদেশে) অশালীন পোশাক পরেন অন্য দেশের নারী, সিনেমা, টেলিভিশন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে। এ ধরনের পোশাকের কারণে মানুষ আপনার মুখের পরিবর্তে আপনার শরীর দেখে। তারা (নারীদের সম্পর্কে) অশ্লীল মন্তব্য করে এবং ধর্ষণের কথা চিন্তা করে।’
‘আপনারা কি (নারীরা) নিজেকে আধুনিক বলে গণ্য করেন? আপনি যে পোশাকটি পরছেন তা কি আধুনিক নাকি অশ্লীল? একটি আধুনিক পোশাক বলতে কেবল আপনার মুখ দেখানো এবং শালীন পোশাক দিয়ে আপনার শরীর আবৃত থাকা বুঝায় যেটিতে আপনাকে সুন্দর দেখায়। মুখ ব্যতীত পুরো শরীর আবৃত হয় না এমন যেকোনো পোশাকেই নারীদের ‘অত্যন্ত খারাপ’ দেখায়।
ঢাকাই চলচ্চিত্রের এই অভিনেতা আরও বলেন, ‘ছেলেদের মতো টি-শার্ট পরে আপনি রাস্তায় নামবেন এবং যখন সেখানে অসম্মানিত বা ধর্ষিত হয়ে ঘরে ফিরে আসবেন তখন হয় আপনি আত্মহত্যা করতে পারেন অথবা প্রকাশ্যে আপনি মুখ দেখাতে পারবেন না।’
‘শালীন’ পোশাক ধর্ষণ সম্পর্কে চিন্তাভাবনা নিবৃত করবে উল্লেখ করে অনন্ত বলেন, ‘আপনি যদি শালীন পোশাক পরেন তাহলে মানুষ আপনাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখবে।’
ওই ভিডিওর শুরুতে ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধেও কথা বলেন অনন্ত জলিল। ধর্ষণ করার আগে পুরুষদের দুবার ভাবার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যদি আপনার স্ত্রী, বোনের সঙ্গে একই ঘটনা ঘটে তাহলে আপনি কী করবেন?’
অনন্ত জলিলের নতুন চলচ্চিত্র দিন দ্য ডে
ঢাকাই ছবির জনপ্রিয় অভিনেতা ও প্রযোজক অনন্ত জলিল অভিনীত নতুন ছবি ‘দিন: দ্য ডে’ ২০ অক্টোবর ছবির শেষ লটের শুটিং শুরু হবে। শুটিংয়ের উদ্দেশে ১৮ অক্টোবর ইউনিট নিয়ে তুরস্কে যাবেন অনন্ত। ইউনিটে স্ত্রী চিত্রনায়িকা বর্ষাসহ ছোট্ট একটি টিমও থাকবে। স্বাভাবিক সময়ে বিশাল বহর নিয়ে শুটিং করলেও করোনার কারণে এবারের তুরস্ক সফরে টিম ছোট করতে হয়েছে।
এ ছবির শুটিং চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ নাগাদ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশ, ইরান, আফগানিস্তানে আলোচিত ওই ছবির শুটিং হয়েছে। ইতিমধ্যে ছবির ৮০ শতাংশ কাজও শেষ হয়েছে। বাকি শুটিং তুরস্ক ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে করার পরিকল্পনা করোনার কারণে ভেস্তে গেছে। তবে তুরস্কের অংশটুকু ওই চলচ্চিত্রে থাকবে।
অভিনেতা অনন্ত জলিল যুগান্তরকে বলেন, আমরা ইস্তাম্বুল, আনাতোলিয়াসহ কয়েকটি লোকেশনে শুটিং করব। ফাইট, চেজিং ও গানের শুটিংয়ের জন্য প্রস্তুতি আছে। সবমিলিয়ে এবারের লটে ছবির শতভাগ কাজ শেষ করার ইচ্ছা আছে।’ শুটিং করতে তুরস্কে ১৫ দিন অবস্থান করবেন বলে জানিয়েছেন অনন্ত।
ইরানের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এ ছবিটি পরিচালনা করছেন ইরানি নির্মাতা মোস্তফা অতাশ জমজম। ছবিতে অনন্ত একজন দেশপ্রেমিক আন্ডারকভার লইনফোর্সমেন্ট এজেন্ট হিসেবে অভিনয় করছেন।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার প্রসার ও প্রতিরোধ নিয়ে এ ছবির গল্প তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে প্রেম ও বিরহের গল্প। ছবিতে অনন্ত-বর্ষা ছাড়াও লেবানন, ইরান ও হলিউডের বেশ ক’জন শিল্পী অভিনয় করছেন। কাজ শেষ করে ছবিটি আগামী বছরের শুরুর দিকে মুক্তি দেয়ার কথা জানিয়েছেন অনন্ত।
Leave a Reply