ঝড় কিংবা টর্নেডো মোকাবেলায় এবং বজ্রপাতজনিত মৃত্যুর হার কমানোর প্রধান সহায়ক হলো তালগাছ। এছাড়াও কথায় আছে তালগাছ মানেই গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। আকাশ ছুঁই ছুঁই সারি সারি তালগাছ সেই আদিকাল থেকে গ্রামবাংলার শোভা বৃদ্ধিতে অকৃত্রিমভাবে ভূমিকা রেখে চলছে। সারি সারি তালগাছ দেখে মানুষের মন জুড়াত।
গ্রামবাংলার ঐতিহ্য রক্ষায় এবং শোভা সৃষ্টিতে যে তালগাছের জুড়ি মেলে না। সেই তালগাছ প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। নিকট অতীতেও যে তালগাছ শোভা ছড়াতো গ্রামবাংলায় এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করত।
বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রক্ষায় সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ চোখে পড়ার মতো হলেও গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের বাহক আর নানা উপকারী এই তালগাছ রক্ষায় তেমন কোনো পদক্ষেপ না থাকায় ক্রমেই এটি হারিয়ে যাচ্ছে।
এক সময় দেবহাটা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের আনাচে কানাচে আর বিভিন্ন সড়ক আর মহাসড়কের পাশে সারি সারি তালগাছ শোভা পেতে দেখা গেছে কিন্তু সেই চিরচেনা দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। এখন হঠাৎ কোনো কোনো গ্রামে দুচারটি তালগাছ চোখে পড়ে কিন্তু সেসব তালগাছ আবার কারও লাগানো নয়। এমনিতেই এসব তালগাছ ঝোপ ঝাড়ে বা জঙ্গলে বেড়ে উঠেছে। কেউ তাল খেয়ে তালের বীজ ফেলে রেখে গেছে সেই বীজ থেকেই মূলত হয়ে উঠেছে এসব তালগাছ।
অতীতে অপরিচিত মানুষের বাড়ি, জমি, পুকুর, মাঠ, মসজিদ, মন্দির, মঠ, গির্জা, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা সহ বিভিন্ন স্থান চেনানোর জন্য সে ক্ষেত্রে বলা হতো উঁচু ওই তালগাছটির পাশে। এমনকি সরকারি ও বেসরকারি কাজে নানান দিক নির্দেশনার ক্ষেত্রেও তালগাছের সহায়তা নেওয়া হতো।
তালের পিঠা, তালের গুড় আর তালের রস সব মানুষের নিকট খুবই মজাদার খাবার। অতীত সময়গুলোতে তালপিঠা ছাড়া গ্রামবাংলায় আত্মীয়তা কল্পনাই করা যেত না। এছাড়াও তালগাছের পাতায় তৈরি করা হয় নানা রঙের বা বিভিন্ন ডিজাইনের হাতপাখা।
কিন্তু গ্রামবাংলা থেকে ক্রমেই তালগাছ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় গ্রামবাংলার পরিবারগুলোতে নেই সেই তালপাতার পাখা ও তাল পিঠা দিয়ে আত্মীয়তা। সেই তালগাছ আজ প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
Leave a Reply