সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনসহ ক্রিকেট বোর্ডের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী বোর্ড পরিচালক। এই অবস্থায় স্থবির দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে ক্রিকেটের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে নাজমুল হাসান পদ ছাড়তে সম্মত হয়েছেন বলে জানা গেছে। যদিও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া আনুষ্ঠানিক ভাবে পদত্যাগের কিছু জানেন না বলেই মন্তব্য করেছেন। তবে ক্রীড়া উপদেষ্টা নিশ্চিত করেছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিসিবির এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
আজ রবিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন দেশের প্রথম স্পোর্টস ইনস্টিটিউট তৈরির ঘোষণা দেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। এসময় বিসিবি কর্মকর্তাদের পদত্যাগের বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘বিসিবি সভাপতি বা পরিচালকদের পদত্যাগের বিষয় আমি গণমাধ্যমে দেখেছি। এই ব্যাপারে সরাসরি কিছু পাইনি। এই বিষয়ে আমরা আলোচনা করছি বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে একটি সমাধানে পৌঁছানোর জন্য।’
নির্বাচনকে ঘিরে গঠনতন্ত্রে অনেক কিছু থাকলেও সভাপতির শূন্য পদের বিপরীতে তিনি কীভাবে নির্বাচিত হবেন, সেই ব্যাপারে কিছু বলা নেই। ফলে বিসিবির গঠনতন্ত্র ও আইসিসির নিয়মের বাইরে গিয়ে ক্রিকেট বোর্ড পুনর্গঠনে সরকার হস্তক্ষেপ করলে সংকট আরও বাড়বে। অতীতে সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ড আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় পড়েছিল। এ ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে তাদের মতামত ও বর্তমান পরিস্থিতি আইসিসিকে জানিয়েই বিসিবিকে যা করার করতে হবে।
এদিকে, সরকার পতনের পর বিসিবির গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের দাবি করে আসছেন সাবেক ক্রিকেটার, কোচ এবং ক্রীড়া সংগঠকেরা। কেউ যাতে দীর্ঘদিন বোর্ডের ক্ষমতায় থাকতে না পারেন, এই কারণে অনেকেই এমন দাবি তুলেছেন। বিষয়টি নিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেছেন, ‘বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। সমাধানে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত মন্তব্য করতে চাই না। আশা করি, খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে আপনারা সুসংবাদ পাবেন।’
বিসিবিতে কী ধরনের পরিবর্তন আনা হবে এমন প্রশ্নে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আমরা বলেছি সংস্কার করবো সিস্টেমের, ব্যক্তির না। সিস্টেমকে যারা খারাপ করেছে, তাদের ব্যাপারে বদল আসবে এটা সুনিশ্চিত। তবে বোর্ডের ব্যাপারে যেটা হলো, গঠনতন্ত্র আছে। যারা দায়িত্বে আসবে বা পাবে তাদেরকে গঠনতন্ত্র আরও গণতান্ত্রিক করে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি যে অনিয়ম, দুর্নীতিগুলো এতদিন হয়েছে সেগুলো প্রকাশ করতে হবে। অন্য ফেডারেশন যেগুলো আছে সবার ক্ষেত্রে আমাদের একই পরিকল্পনা।’
ক্রিকেট বোর্ডে দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে গণমাধ্যমের করা এক প্রশ্নের জবাবে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা এরই মধ্যে ক্রীড়াক্ষেত্রে যে দুর্নীতি ও অন্যায়ের অভিযোগগুলো রয়েছে এবং আমরা দেখতে পাচ্ছি আপনারা সেগুলো খুঁজে বের করে মিডিয়ায় প্রকাশ করছেন। আপনাদেরও ধন্যবাদ জানাই। এ বিষয়গুলোতে আমরা তদন্ত করবো এবং যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে, সে জন্য আমি এরই মধ্যে বিসিবির সংশ্লিষ্ট এবং ক্রিকেট-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের প্রত্যেক ফেডারেশনের যে গঠনতন্ত্র আছে, সেগুলো (গঠনতন্ত্র) যেন গণতান্ত্রিক হয়, একনায়কতন্ত্র চর্চার সুযোগ না থাকে, সেগুলোও প্রভাবমুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
শুধু ক্রিকেট নয়, বাংলাদেশের সব খেলাকেই রাজনীতিমুক্ত করার অঙ্গীকার করেছেন আসিফ মাহমুদ। ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছেন, ‘খেলাধুলাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার একটা এজেন্ডা আমাদের আছে। সে জন্য একটা সার্চ কমিটি গঠন করে দেবো, যারা প্রতিটি ফেডারেশনের বর্তমান অবস্থা দেখবে। যারা কাজ করছেন, যারা দায়িত্বশীল আছেন, তারা আছেন কি না (দায়িত্বে) এবং তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কী, কিসের ওপর ভিত্তি করে সেখানে আছেন, সেগুলো নিয়ে তারা (সার্চ কমিটি) প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন। যে খেলার সঙ্গে যিনি সংযুক্ত এবং কাজ করে আসছেন, তাদের দিয়েই ফেডারেশনগুলো ঢেলে সাজাবো। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা সর্বোচ্চ কমিয়ে আনার চেষ্টা করবো।’
Leave a Reply