বিশ্বজয়েও এমন আনন্দ হয় কি না সন্দেহ আছে, যে আনন্দটা রশিদ খান আর ইবরাহিম জাদরানরা করলেন! মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা একটি দেশ প্রথম মোকাবেলায় ১৯ বছর টেস্ট খেলা একটি দেশকে এভাবে হেলায় হারাতে পারলে তো বিশ্বজয়ের আনন্দ হবেই। রশিদ খানরা আনন্দ-উল্লাসে জানিয়ে দিলেন টেস্ট ক্রিকেটকেও শাসন করতে আসছেন তারা, কারও করুণা পেতে নয়।
বৃষ্টির কারণে সারাদিন মাঠ থেকে কভারটাও সরানো যাচ্ছিল না। শেষ বিকেলে মাত্র এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের জন্য খেলার সুযোগ করে দিলো বৃষ্টি। খেলা হবে কেবল ১৮.৩ ওভার। হাতে ৪ উইকেট। সাকিব আল হাসান এবং সৌম্য সরকার। টাইগার ভক্তরা ভেবেছিল অনায়াসেই হয়তো এই কয়টা ওভার কাটিয়ে দিতে পারবেন সাকিব-সৌম্য।
কিন্তু পারলেন না তারা। আর মাত্র ১০ মিনিট টিকতে পারলেই ম্যাচ ড্র। কিংবা আর মাত্র ৩ ওভারেরও কম। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা পারলেন না। ২২৪ রানের বিশাল পরাজয়ের লজ্জাই বরণ করতে হলো টাইগারদের। বাংলাদেশে এসে অবিস্মরণীয় এক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লো আফগানিস্তান।
তবে আফগানদের এই জয়ে অবদান আছে আম্পায়ারেরও। একটি দল যখন চরম লজ্জার মুখোমুখি। তখন আম্পায়ারের এমন ভুলও কি মেনে নেয়া যায়? তাইজুল ইসলামকে করা রশিদ খানের বলটি ডিফেন্স করলেন ব্যাটসম্যান। ব্যাটে লেগে প্যাডে গেলো বল। কিন্তু আম্পায়ার আঙ্গুল তুলে দিলেন। রিভিউ বাকি ছিল না বাংলাদেশের। ফলে দুর্ভাগ্যই বরণ করতে হলো টাইগারদের। বিদায় হলো ৯ম উইকেটের।
হার এমনিতেই অবধারিত ছিল যেন। বৃষ্টি সেটাকে বিলম্বিতই করলো শুধু। শেষ বিকেলে ১৮.৩ ওভার খেলার সুযোগ করে দিলো বৃষ্টি। তাতেও লজ্জার হার থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারলো না বাংলাদেশ। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে সৌম্য সরকার আউট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যেন লজ্জায় অধোবদন হলো বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের কাছে হেরে গেলো ২২৪ রানে।
শেষ দিনে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৭৪ রানের। হাতে চার উইকেট। জয়টা একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু টাইগারদের মনে আশা ছিল অন্তত ম্যাচটাও যদি বাঁচা যায়! বৃষ্টি সেই আশা বাড়িয়ে দিয়েছিল কয়েকগুণ। মাঝে একবার মাঠে গড়িয়েছিল খেলা। কিন্তু ১৩ বল পর আবারও বৃষ্টি নামায় খেলা বন্ধ হয়ে যায়।
শেষ পর্যন্ত বিকাল সাড়ে ৩টা নাগাদ বৃষ্টি থামে এবং ৪টা ২০ মিনিটে খেলা শুরু হয়। দিনের বাকি সময়ের মধ্যে ১৮.৩ ওভার খেলতে হবে সাকিব আল হাসানদের। সেই ১৮.৩ ওভারই খেলতে পারলো না তারা। হারিয়ে ফেলেছে চারটি উইকেটই।
আগেরদিন বড় গলায় সাকিব বলেছিলেন, তিনি আর সৌম্য মিলে ম্যাচটা জিতেই ফেলবেন। সাকিব নিজে ১৫০ আর সৌম্য করবেন ১২০ রান। যদিও কথাটা ছিল হাসিচ্ছলে। কিন্তু বিষয়টা মোটেও ঠাট্টা-বিদ্রুপের ছিল না। টাইগার ভক্তদের আশাবাদী মন কিন্তু তাতেও আশা রেখেছিল।
অন্যদিকে আফগান অধিনায়ক রশিদ খান আশায় ছিলেন এক ঘণ্টা খেলা হলেও তারা জিতে যেতে পারবেন। আফগান মিডিয়া ম্যানেজার সৈয়দ সাদাত হোসেন প্রেসবক্সে এসে এই আশাবাদের কথা জানান। শেষ পর্যন্ত আফগানরাই পেরেছে। ১ ঘণ্টা ১০ মিনিটের সুযোগ পেয়েছে তারা এবং ১ ঘণ্টার মধ্যেই তুলে নিয়েছে বাকি চার উইকেট।
অথচ, এই লজ্জা এড়াতে পারতেন সাকিব আল হাসান। যদি না তিনি শেষ মুহূর্তে মাঠে নেমেই শটটা খেলতে না যেতেন! দেখে-শুনে খেলে বলগুলো কাটিয়ে দিলেই হয়তো বাঁচানো যেতো এই টেস্ট। বৃষ্টির কল্যাণে পাওয়া সুযোগটাকে হেলায় হারিয়ে ফেললেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।
জয়ের দারুণ হাতছানি আফগানিস্তানের সামনে। স্লো উইকেট। লেগ স্পিনার। দু’জনই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। উইকেট নেয়ার জন্য স্ট্যাম্পের চারপাশেই ফিল্ডার দাঁড় করিয়ে দিলেন আফগান অধিনায়ক রশিদ খান।
খেলা হবে অন্তত ১৮.৩ ওভার। এ কারণে তাদের চেষ্টা প্রথম বল থেকেই উইকেট তুলে নেয়ার। সাকিবের চেষ্টা ছিল ঠেকিয়ে রাখার। কিন্তু মাঠে নামার পর প্রথম বলটি আফগান লেগি জহির খান রাখলেন একেবারে অফ স্ট্যাম্পের ওপর। সাকিব ঠেকানোর চেষ্টাই করলেন না। প্রথম বলেই মারার চেষ্টা। যেন, টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। মারতেই হবে। না হয় জেতা যাবে না। সাকিবের মানসিকতাটাই ছিল যেন এমন!
কিন্তু জহির খানের বলটিকে খেলতেই পারলেন না সাকিব। ব্যাটের উপরের কানায় চুমা দিয়ে বলটি গিয়ে আশ্রয় নিল উইকেটরক্ষক আফসার জাজাইয়ের গ্লাভসে। উইকেট পাওয়ার আনন্দে প্রথম বলেই মেতে উঠলো আফগানরা। আর বাংলাদেশকে চরম বিপদে রেখে উইকেট ছেড়ে গেলেন দলনায়ক। ৫৪ বলে ৪ বাউন্ডারিতে গড়া তার ৪৪ রানের ইনিংসটির অপমৃত্যু তাতেই।
চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনই টস নামক ভাগ্যে জয় এসেছিল আফগানিস্তানের। টস জিতেই ব্যাট করতে নামে আফগানরা। বাংলাদেশের বোলারদের কাঁচকলা দেখিয়ে প্রথম ইনিংসে তারা সংগ্রহ করে ৩৪২ রান। সেঞ্চুরি করেন রহমত শাহ। আসগর আফগান ৯২ এবং রশিদ খান করেন হাফ সেঞ্চুরি।
জবাব দিতে নেমে মাত্র ২০৫ রানে অলআউট বাংলাদেশ। যে উইকেট আফগানরা ব্যাটিং করার সময় দেখা যাচ্ছিল পুরোপুরি ব্যাটিং বান্ধব, সেই উইকেটই কি না বাংলাদেশের সামনে হয়ে পড়লো বোলিং বান্ধব। আফগান স্পিনার রশিদ খান, মোহাম্মদ নবি কিংবা জহির খানদের মোকাবেলা করে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা উইকেট হারিয়েছে অকাতরে।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে আবারও উইকেট হয়ে গেলো ব্যাটিং বান্ধব। আফগানরা এবার তুললো ২৬০ রান। আফগানদের মোট লিড দাঁড়ালো ৩৯৭। জয়ের জন্য ৩৯৮ রানের লক্ষ্যে খেল নেমে চতুর্থ দিন ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে বৃষ্টির কল্যাণে কয়েক ওভার খেলা কম হওয়ায় চতুর্থ দিনে আর ম্যাচ শেষ হলো না।
গড়ালো পঞ্চম দিনে। আজ সারাদিন তো বৃষ্টির এমন অবস্থা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিল, ম্যাচই হবে না কিন্তু শেষ বিকেলে এসে মাত্র ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট সময় পেয়েই বাজিমাত করে দিল আফগানরা। বাংলাদেশকে অলআউট করে দিলো ১৭৩ রানে।
সাকিব আল হাসান আউট হওয়ার পর মেহেদী হাসান মিরাজ মাঠে নামেন ২৮ বল মোকাবেলা করে এলবিডব্লিউর শিকার হন ১২ রান করে। তাইজুল তো রানের খাতাই খুলতে পারেননি। সৌম্য আউট হলেন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৫ রান করে।
রশিদ খান একাই নিলেন ৬ উইকেট। দুই ইনিংস মিলে ১১ উইকেট। নিজের প্রথম অধিনায়কত্বে প্রথম ম্যাচেই জয় উপহার দিলেন তিনি। একই সঙ্গে মোহাম্মদ নবিকে দিলেন বিদায়ী উপহার। রশিদ খান ছাড়াও ৩ উইকেট নেন জহির খান।
Leave a Reply