সারা দেশ যখন পেঁয়াজের ঝাঁঝে অস্থির ঠিক সেই মুহুর্তে সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানীকারকদের নিকট পর্যাপ্ত পেঁয়াজের মজুদ থাকলেও ভারতীয় ব্যবসায়ীদের নিকট অসহায় হয়ে পড়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পেঁয়াজ আমদানি শুল্কমুক্ত হওয়ায় অসাধুচক্র ঝাঁঝ বাড়িয়ে দিচ্ছে পেঁয়াজের।
সরেজিমনে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) ভোমরা স্থলবন্দরে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পণ্য খালাসের অপেক্ষায় বন্দরের ওয়্যারহাউজের মধ্যে পেঁয়াজ বোঝাই ১৪টি ভারতীয় ট্রাক গত ৮ দিন যাবৎ অবস্থান করলেও আমদানীকারক চালানের কাগজপত্র নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে। যার প্রতিটি ট্রাকে সাড়ে ২৫ টন করে পেঁয়াজ রয়েছে বলে জানান ভারতীয় ওই ট্রাকগুলোর চালক সুশান্ত সিং ও ললিন নায়ক সহ অন্যান্যরা।
তারা আরো জানিয়েছেন, ভারতের মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক নিয়ে রাস্তায় ৫ দিন ও বন্দরের ওপারে ঘোজাডাঙ্গায় ৪ দিন এবং ওয়্যারহাউজে ৮ দিন অবস্থান করছেন তারা। এদিকে অনুসন্ধানকালে সরেজমিনে আরো দেখা গেছে, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানীকারক বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা সরাসরি এলসি’র মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানী করে আনতে না পারায় ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে অনেকটাই অসহায় এবং নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কেননা পেঁয়াজের শুল্কমুক্ত থাকায় ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশী ট্রান্সপোর্ট এজেন্সী বাদ দিয়ে নিজেরাই দু’একটি প্রতিনিধি ঠিক করে বন্দরে ঘর নিয়ে কমিশনে ব্যবসা করে। ফলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা যেভাবেই নিয়ন্ত্রণ করছে ঠিক সেই ভাবেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজার।
অনুসন্ধানে দেখা যায় বন্দরের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজের চালান প্রেরণ করে ভারতের ভুট্টো নামের এক ব্যবসায়ী। একই ভাবে পঙ্কজ, খোরশেদ, আজাদ সহ একাধিক ব্যবসায়ী। এসব ব্যবসায়ীরা ভারতে বসেই ইচ্ছেমতো কলকাঠি নেড়ে বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের ইশারাতেই বন্দরে থাকা তাদের প্রতিনিধিরা পেঁয়াজ মজুদ রেখে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি সহ বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছে।
এদিকে এ বিষয়ে ভোমরা সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, পেঁয়াজ শুল্কমুক্ত পন্য। যে কারণে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সাথে ভোমরা স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্টদের কোন সম্পর্ক নেই। তারা নিজেরাই প্রতিনিধি ঠিক করে ইচ্ছা খুশীমতো বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এর হাত থেকে পরিত্রাণের জন্য পেঁয়াজের উপর শুল্ক নির্ধারণ করলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা সিএন্ডএফ এজেন্টসদের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করলে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
তাছাড়া পেঁয়াজের শুল্ক নির্ধারণ করলে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা কমে আসার পাশাপাশি দেশীয় পেঁয়াজের চাঁহিদা অনেকাংশে বেড়ে যাবে। ফলে দেশীয় চাষীরা পেঁয়াজ উৎপাদনে অধিক উৎসাহিত হবে। এদিকে ভোমরা বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা শেখ এনাম হোসেন জানিয়েছেন, পেঁয়াজ আমদানীতে লিখিত কোন নিষেধাজ্ঞা তিনি পাননি। এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামালের নিকট ভোমরা বন্দরে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ থাকার কথা জানানো হলে তিনি জানান, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বন্দরে মজুদকৃত পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ করতে। এর ব্যাত্যয় ঘটলে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply