ফাইন লেগের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করলেন জো বার্নস। দলের জয় তো হচ্ছেই, সেই সঙ্গে টেস্ট ক্যারিয়ারে আরেকটি ফিফটি যোগ হয়ে থাকলে প্রাপ্তির আনন্দ আরও বাড়বেই। ওই ছক্কায় বার্নসের হাফসেঞ্চুরির সঙ্গে নিশ্চিত হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার জয়টাও। অ্যাডিলেডের যে টেস্টে ভারতকে হারাতে স্বাগতিকদের লেগেছে আড়াই দিনের একটু বেশি সময়। দ্বিতীয় ইনিংসে বিরাট কোহলিদের মাত্র ৩৬ রানে গুটিয়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়া পেয়েছে ৮ উইকেটের জয়।
ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসের পরই আসলে একরকম জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। জশ হ্যাজেলউড ও প্যাট কামিন্সের বিষাক্ত পেসে যখন ৩৬ রানে অলআউট হলো ভারত, তখন জিততে অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য ঠিক হয় মাত্র ৯০ রানের। বার্নসের অপরাজিত ৫১ ও ম্যাথু ওয়েডের ৩৩ রানে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে দিবারাত্রির টেস্ট জিতে নেয় তারা তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনেই। এতে চার ম্যাচের সিরিজ ১-০তে এগিয়ে গেলো স্বাগতিকরা।
৯০ রানের লক্ষ্যে উদ্বোধনী জুটিতেই অস্ট্রেলিয়া পেয়ে যায় ৭০ রান। ঋদ্ধিমান সাহার রান আউটে ওয়েড ফিরলে স্বাগতিকরা হারায় প্রথম উইকেট। ৫৩ বলে খেলা ৩৩ রানের ইনিংসটি সাজান তিনি ৫ বাউন্ডারিতে। ওয়ান ডাউনে নামা মার্নাস লাবুশেন অবশ্য খেলা শেষ করে আসতে পারেননি, ১০ বলে ৬ রান করে ফেরেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনের শিকার হয়ে। এরপর বাকি কাজটা সেরেছেন বার্নস চার নম্বরে নামা স্টিভেন স্মিথকে নিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক ১ রানে অপরাজিত থাকেন। আর বার্নস ৬৩ বলে তার হার মানা ৫১ রানের ইনিংসটি সাজান ৭ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায়।
ব্যাটসম্যানরা শুধু জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন মাত্র, এর আগে জয়ের পথ তৈরি করে দিয়েছিলেন আসলে হ্যাজেলউড-কামিন্স। এই দুই পেসারের তোপেই লণ্ডভণ্ড ভারত। হ্যাজেলউড ৫ ওভারে ৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ৫ উইকেট। আর কামিন্স ২১ রান খরচায় পেয়েছেন ৪ উইকেট।
তাদের তোপে ৪৬ বছরের পুরনো লজ্জার রেকর্ডের খাতা খোলে ভারতের। ১৯৭৪ সালে লর্ডসে সবচেয়ে কম রানে ইনিংস শেষ করার লজ্জায় ডুবেছিল তারা। সেবার অলআউট হয়েছিল ৪২ রানে। টেস্ট ইতিহাসে সর্বনিম্ন ইনিংসের রেকর্ডটা আজ (শনিবার) নতুন করে লেখে বিরাট কোহলিরা।
মোহাম্মদ সামির ডান হাতে প্যাট কামিন্সের বল আঘাত করার পর বেশ খানিক সময় মাঠেই চিকিৎসা চললো। আঘাত যে খুব জোরে লেগেছে, সেটি বুঝতে সময় লাগলো না। মাঠ ছেড়ে উঠে গেলেন এই পেসার। এরই সঙ্গে লজ্জার সাগরে ডুবে গেলো কোহলি অ্যান্ড কোং। সামি শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে রিটার্ড হার্ট হয়ে যখন মাঠ ছাড়লেন, ভারতের স্কোর তখন ৩৬। এতেই হয়ে গেলো সবচেয়ে কম রানে ইনিংস শেষ হওয়ার লজ্জার রেকর্ড।
অথচ ৬২ রানের লিড ও ৯ উইকেট হাতে নিয়ে অ্যাডিলেডের দিবারাত্রির টেস্টের তৃতীয় দিন শুরু করেছিল ভারত। কিন্তু ঐতিহাসিক ভরাডুবিতে লক্ষ্য দিতে পারে মাত্র ৯০ রানের। ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিয়ে টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো একটি দৃশ্য দেখে ফেললো ক্রিকেট বিশ্ব। অ্যাডিলেড টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের কোনও ব্যাটসম্যানই যেতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘরে, কোনও অতিরিক্ত রান না থাকায় সেটার দুই অঙ্কে যাওয়ার প্রশ্নই উঠছে না। ১৯২৪ সালে ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টের পর প্রথমবার ইনিংস স্কোরে নেই ‘ডাবল ফিগার’!
দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের ব্যাটসম্যানদের রান টেলিফোন ডিজিটের মতো- ৪, ৯, ২, ০, ৪, ০, ৮, ৪, ০, ৪, ১। সর্বোচ্চ ৯ রান এসেছে মায়াঙ্ক আগারওয়ালের ব্যাট থেকে। সর্বোচ্চ বলও খেলেছেন তিনি, ৪০টি। আর ভারতের ইনিংসের দৈর্ঘ্য ছিল ২১.২ ওভারের।
ভারতের সবচেয়ে কম রানে ইনিংস শেষ হয়ে যাওয়াটা আবার টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের সপ্তম সর্বনিম্ন ইনিংসের রেকর্ড। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাদের সর্বনিম্ন স্কোরের রেকর্ডটা ছিল ৫৮ রানের। ব্রিসবেনের ওই টেস্টটি ছিল ভারতের স্বাধীনতা পাওয়ার পরপরই, ১৯৪৭ সালের নভেম্বরে।
বল হাতে হ্যাজেলউড-কামিন্স আগুন ঝরালেও ম্যাচসেরা কিন্তু টিম পেইন। প্রথম ইনিংসে দলের বিপর্যয়ে হার না মানা ৭৩ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক। তার ওই ইনিংসেই অস্ট্রেলিয়া পেয়েছিল ১৯১ রানের সংগ্রহ। আর ভারত তাদের প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ২৪৪।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২৪৪ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ২১.২ ওভারে ৩৬ (আগারওয়াল ৯, বিহারি ৮, পৃথ্বি শ ৪, কোহলি ৪, ঋদ্ধিমান ৪; হ্যাজেলউড ৫/৮, কামিন্স ৪/২১)।
অস্ট্রেলিয়া: ১৯১ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ২১ ওভারে ৯৩/২ (বার্নস ৫১*, ওয়েড ৩৩, লাবুশেন ৬, স্মিথ ১*; অশ্বিন ১/১৬)।
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: চার ম্যাচের সিরিজ অস্ট্রেলিয়া ১-০তে এগিয়ে।
ম্যাচসেরা: টিম পেইন।
Leave a Reply