করোনা ভ্যাকসিন কেনা, সংরক্ষণ ও সরবরাহ বাবদ চার হাজার ২৩৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। চলমান একটি প্রকল্পের আওতায় এ টাকা অনুমোদন করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে (জুন ২০২১ পর্যন্ত) তিন হাজার ৩০ কোটি টাকা খরচ হবে। প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় হাজার ৭৮৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১৭২ কোটি ৪৫ লাখ এবং বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ইনফ্রাসট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) থেকে ঋণ ছয় হাজার ৬১৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এপ্রিল ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য এটি সংশোধন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজকের (৫ জানুয়ারি) একনেক বৈঠকে প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলে এই টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। মূলত ভ্যাকসিন কেনার জন্যই চলমান প্রকল্পের আওতায় এই অর্থ অনুমোদন দেওয়া হলো। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন। অন্যদিকে শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলনকক্ষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ভ্যাকসিন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে বৈঠকে পরিকল্পনা কমিশনকে অবগত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তবে, কোভ্যাক্স নির্ধারিত আর কোন দেশ থেকে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে তা এখনও জানা যায়নি। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রথম সংশোধিত প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হবে।
প্রকল্প পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটা আমাদের জন্য অন্যতম মাইলফলক। বিশ্বব্যাংক টিকা কেনা প্রকল্পে ৫০ কোটি ডলার দিয়েছে। এটা ইতিবাচক। টিকা কেনা প্রকল্প অনুমোদনের মাধ্যমে দেশের মানুষের মধ্যে ইমিউনিটি সিস্টেম বাড়ছে। টিকা কেনা প্রকল্প অনুমোদনের মাধ্যমে মেঘলা দিন কেটে যাচ্ছে। আমরা আলোর মুখ দেখছি। দেশের অর্থনীতি সচল হবে। আমরা বিশ্বাস করি, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের দেশের অর্থনীতি আগের অবস্থানে ফিরে আসবে। মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হবে এবং করোনাভীতি কেটে যাবে।’
তিনি জানান, ভ্যাকসিন দেওয়ার অনুমোদিত নীতিমালা সর্বসাধারণের বোধগম্যভাবে সারসংক্ষেপ আকারে প্রণয়ন এবং ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়ার একটি সহজবোধ্য ফ্লো-চার্ট ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে। প্রতিটা উপজেলায় ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়ে প্রচারের জন্য ব্যানার, মাইকিং ও প্রকাশনা খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পের আওতায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য একটি করে মোট দুটি মোবাইল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ভ্যানের সংস্থান রাখতে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের দ্বৈধতা পরিহারপূর্বক গঠিত ১০ শয্যার ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এবং ১০টি জেলায় মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
করোনা মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংকের জরুরি ঋণ ঘোষণার পর ২০২০ সালের ১৮ এপ্রিল প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়েছিল। সে সময় প্রকল্পটি খুব জরুরি বিবেচনায় দ্রুত অনুমোদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সমগ্র বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবে আক্রান্ত ও মৃত্যু ক্রমশ বাড়তে থাকায় কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১০ কোটি ডলারের লেন্ডিং করতে সম্মত হয়েছে, যা এ প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যয় করা হবে।
এছাড়া প্রকল্প সংশোধনের প্রধান কারণ হিসেবে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ক্রয় বাবদ কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পটি মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় হাজার ৭৮৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১৭২ কোটি ৪৫ লাখ এবং বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) ঋণ ছয় হাজার ৬১৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এপ্রিল ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রথম সংশোধন করা হবে। ভ্যাকসিন কেনাসহ একনেক সভায় মোট ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।৯
Leave a Reply