নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ আরও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন মো. নজরুল (৫০) ও শেখ ফরিদ (২১)। তারা দুজনই লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। এ নিয়ে ওই ঘটনায় ৩১ জনের মৃত্যু হলো। বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শঙ্কর পাল এসব তথ্য জানান।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, নিহত নজরুলের শরীরের ৯৪ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। তার পিতার নাম মো. আব্দুর রাজ্জাক। বরিশালের রাঙ্গাবালী তাদের বাড়ি। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের তল্লা এলাকায় থাকতেন। তিনি শ্রমিক ছিলেন। দুই ছেলে এক মেয়ের জনক তিনি।
মসজিদে বিস্ফোরণ
এদিকে, নিহত শেখ ফরিদের শরীরের ৯৩ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চড়ালদী গ্রামের এমদাদুল হকের ছেলে তিনি। মায়ের নাম খদেজা খাতুন। তিনি গফরগাঁও সরকারি ডিগ্রি কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের ডিসি অফিসে মাস্টার রোলে চাকরি করতেন। বাবা কৃষি কাজ করেন। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়।
তার বাবা জানান, এ মাসের ১৩ তারিখে তার চাকরি স্থায়ী হওয়ার কথা ছিল।
লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার আগে দগ্ধ ফরিদ তার বাবাকে বলেছিলেন, বাবা আমি তো আর বাঁচবো না। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই মারা যান তিনি। শুরুর দিন থেকে বাবাকে সাহস দিয়ে আসছিলেন ছেলে। এতদিন বারবারই বাবাকে বলেছেন, বাবা আমার কিছু হবে না। চিন্তা করো না।
বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আজ লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার আগে আমার সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। তখন বলে কিনা বাবা আর বাঁচবো না।’
আইসিইউ এর সামনে শেখ ফরিদের বাবা
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে এশার নামাজের সময় ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এ বিস্ফোরণ ঘটে। ফরজ নামাজের মোনাজাত শেষে অনেকে সুন্নত ও অন্য নামাজ পড়ছিলেন। তখন ছয়টি এসি বিস্ফোরিত হয়। এ সময় মসজিদের ভেতরে প্রায় ৪০ জনের মতো মুসল্লি ছিলেন। বিস্ফোরণে তাদের প্রায় সবাই দগ্ধ হন।
মৃতদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে তারা হলেন, মসজিদের ইমাম আবদুল মালেক (৬০), মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৮) ও তার ছেলে জুনায়েদ (১৭), দুই ভাই জোবায়ের (১৮) ও সাব্বির (২১), মুন্সীগঞ্জের কুদ্দুস বেপারি (৭২), চাঁদপুরের মোস্তফা কামাল (৩৪), পটুয়াখালীর গার্মেন্টস কর্মী রাশেদ (৩০), হুমায়ুন কবির (৭২), পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর জামাল আবেদিন (৪০), গার্মেন্টস কর্মী ইব্রাহিম বিশ্বাস (৪৩), কলেজ শিক্ষার্থী রিফাত (১৮), চাঁদপুরের মাইনউদ্দিন (১২), ফতুল্লার জয়নাল (৩৮), লালমনিরহাটের গার্মেন্টস কর্মী নয়ন (২৭), নিজাম (৩৪), নারায়ণগঞ্জের রাসেল (৩৪), শরীয়তপুরের নড়িয়ার ইমরান (৩৭), খুলনার কাঞ্চন হাওলাদার (৫০), শিশু জুয়েল (৭), বাহার উদ্দিন (৫৫), নাদিম (৪৫), জুলহাস (৩৫), শামীম (৪৫), হান্নান (৫০), আব্দুস সাত্তার (৪০)। মারা যাওয়া ব্যক্তিরা তল্লা এলাকার বাসিন্দা।
Leave a Reply