মাশরাফি বিন মুর্তাজার নেতৃত্বের পরশ পাথর বদলে দিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। ২০১৪ সালে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে টেনে তুলেছেন তিনি। দিন বদলের নেতা বলা হয় তাকে। দেশের সর্বকালের সেরা অধিনায়কের তকমাও তার নামের পাশে শোভা পাচ্ছে। লাল-সবুজ জার্সিতে ছেলের অর্জন মা হামিদা মর্তুজার মনকে গর্বের আনন্দে ভরিয়ে তোলে।
বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে ছেলে মাশরাফির শেষ ম্যাচ দেখতে গতকাল সকালেই নড়াইল থেকে সিলেটে উড়ে গেছেন বাবা গোলাম মর্তুজা স্বপন। ছোটো ভাই মোরসালিন মর্তুজা ও নড়াইল থেকে মাশরাফির বন্ধুরাও হাজির হয়েছিলেন সিলেটের গ্যালারিতে। নড়াইল শহরের মহিষাখোলার ডুপ্লেক্স বাড়িতে বসে টিভি স্ক্রিনে চোখ রাখছিলেন হামিদা মর্তুজা।
গতকাল বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকার সময়টাতে মুঠোফোনে পাওয়া গেল মাশরাফির মা হামিদা মর্তুজাকে। ফোনের ওপ্রান্তে কণ্ঠটা একটুও ভারী মনে হয়নি। কোনো ধরনের আড়ষ্টতাও ধরা পড়েনি। বরং প্রকৃতির নিয়মের মতোই অধিনায়ক হিসেবে ছেলের বিদায়কে বরণ করলেন তিনি।
মাশরাফিকে নিয়ে যখন কেউ গল্প করে তখন মা হিসেবে ছেলেকে নিয়ে গর্ব হয় হামিদা মর্তুজার। মুঠোফোনে বলছিলেন, ‘আসলে এটা তো আপনারাও জানেন, ও ক্রিকেটকে কি দিছে, না দিছে। নিজের জন্য কখনোই খেলেনি। সবসময় দেশের জন্য খেলছে। আর ক্রিকেটকে কতদূর এগিয়ে এনেছে, এটা তো সারা বাংলাদেশের মানুষই জানে। যখন মানুষের মুখে ওর কথা শুনি, তখন অবশ্যই গর্ব হয়। মা হিসেবে মাথাটা উঁচু হয়ে যায়।’
গত ৫ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি বলেছিলেন, ঘুম থেকে উঠেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেবেন। এবং দুপুরে জানিয়ে দিয়েছেন। এমনকি আগের দিনও পরিবারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেননি। গতকাল হামিদা মর্তুজার কথায়ও যার সত্যতা পাওয়া গেল।
মাশরাফির মা বলছিলেন, ‘সে ঘুম থেকে উঠেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, সে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেবে। প্রত্যেক দিনই আমাকে বলে যায় যে, আম্মা আমি মাঠে যাচ্ছি। আমার জন্য দোয়া করো। কালকেও (৫ মার্চ) সে একই নিয়মে বলছে যে আম্মা আমি অধিনায়কত্ব থেকে অবসর নেব। আমি মাঠে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আজকে বলে দেব। তুমি দোয়া করো। এটুকুই আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। তাছাড়া আর কোনো কথা হয়নি। এবং আমাকে, ওর আব্বাকে, ওর মামাকে, ওর বন্ধু-বান্ধব সবাইকেই বলছে যখন এই সিদ্ধান্ত ও নিছে যে, অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেবে। সবাইকে বলছে।’
মাশরাফির নেতৃত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে হামিদা মর্তুজা বলেছেন, ‘কেন স্বাগত জানাব না? নতুন অধিনায়ক আসুক। ২০২৩ সালে বিশ্বকাপ, নতুন অধিনায়কের হাত ধরে খেলবে বাংলাদেশ। ওরটা তো ছাড়তেই হবে, আজকে হোক, কালকে হোক ছাড়তেই হবে। আগেই ছেড়ে দিল। সম্মানের সঙ্গে ছাড়াটাই সবচেয়ে উত্তম। নিজের সম্মান নিয়ে সরে দাঁড়ানোটাই সবথেকে উত্তম। সেটাই করছে।’
উল্লেখ্য, অধিনায়ক হিসেবে শেষ ওয়ানডে ম্যাচটি রাঙিয়ে গেলেন মাশরাফি। তার নেতৃত্বে তিন ম্যাচ সিরিজে টানা জয়ে বাংলাদেশের কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো জিম্বাবুয়ে। শেষ ম্যাচটি যেনো স্মরণীয় হয়ে থাকবে ম্যাশের কাছে।
Leave a Reply