সাতক্ষীরায় গ্রেপ্তারকৃত বহুল বিতর্কিত ও অবৈধ ফেসবুক বেইজড সংগঠন ‘বেস্ট টিম সাতক্ষীরা’র কথিত অ্যাডমিন মাদকাসক্ত মোস্তাফিজুর রহমান ও তার স্ত্রী সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য এ্যাড. শাহনেওয়াজ পারভীন মিলির বিরুদ্ধে আইসিটি এ্যাক্টে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মঙ্গলবার সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য মাহফুজা সুলতানা রুবি বাদি হয়ে ‘বেস্ট টিম সাতক্ষীরা’র অ্যাডমিন মাদকাসক্ত মোস্তাফিজুর রহমান ও তার স্ত্রী এ্যাড. শাহনেওয়াজ পারভীন মিলিসহ আরো তিনজনকে আসামী করে সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলাটি (নং-০১) দায়ের করেন।

এদিকে ডোপ টেস্টে মোস্তাফিজুরের মাদকাসক্তির প্রমাণ পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আরো একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

এর আগে মঙ্গলবার (০১ সেপ্টেম্বর) রাত দেড়টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের নিউ মার্কেট মোড় সংলগ্ন বাসা থেকে যৌথ অভিযান চালিয়ে মোস্তাফিজুর ও মিলিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গত শুক্রবার দুপুরে বিতর্কিত ও অবৈধ ওই ফেসবুক বেইজড সংগঠন‘ বেস্ট টিম সাতক্ষীরা’র কথিত অ্যাডমিন মাদকাসক্ত মোস্তাফিজুর রহমান ও তার স্ত্রী এ্যাড. শাহনেওয়াজ পারভীন মিলির নেতৃত্বে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পরানদহা গ্রামে দিনমজুর ও ট্রলি চালক আলমগীরের বাড়িতে তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ও স্বজনদের নিয়ে হামলা চালিয়ে ঘরের তালা ভেঙে নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার, জমির বন্দকী দলিলসহ মুল্যবান কাগজ ও জিনিসপত্র লুটপাট করা হলে সোমবার ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেন বাদি হয়ে মোস্তাফিজুর রহমান, তার স্ত্রী এ্যড. শাহনেওয়াজ পারভীন মিলি ও কুলিয়ার সাবেক ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেনসহ মোট ৫ জনের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলা (নং-৭৮) দায়ের করেন।

মামলা দায়ের পরবর্তী সোমবার সকালে হামলাকারী ও মামলার আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবীতে পরানদহা বাজারে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী। একইসাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘বেস্ট টিম সাতক্ষীরা’র বিরুদ্ধে একের পর এক ভুক্তভোগী ও সাধারণ মানুষের পোষ্টসহ বেস্ট টিমের কথিত অ্যাডমিন মাদকাসক্ত মোস্তাফিজুর রহমানের ইয়াবা সেবনের ভিডিও ভাইরাল হতে থাকলে রাতেই যৌথ অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর থানার এসআই হাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেনের দায়েরকৃত মামলার আসামি হিসেবে ‘বেস্ট টিম সাতক্ষীরা’র অ্যাডমিন মোস্তাফিজুর রহমান ও তার স্ত্রী এ্যাড. শাহনেওয়াজ পারভীনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা আরো বলেন, বেস্ট টিমের অ্যাডমিন মোস্তাফিজুর রহমান ও তার স্ত্রী শাহনেওয়াজ পারভীন মিলিসহ আরো তিনজনকে আসামী করে মঙ্গলবার সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য মাহফুজা সুলতানা রুবি বাদি হয়ে আইসিটি এ্যাক্টে একটি মামলা (নং-০১) দায়ের করেছেন।

তাছাড়া মোস্তাফিজুরের মাদকাসক্তির বিষয়ে নিশ্চিত হতে তার ডোপ টেস্ট করা হয়েছে। ওই টেস্টের রিপোর্টে মোস্তাফিজুর যে মাদকাসক্ত সেটি প্রমাণিত হয়েছে। এবিষয়েও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আরেকটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে এবং তাদের দুজনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

তবে আদালতের একটি নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে, আদালতে নেয়ার সময় মহাপ্রতারক রিজেন্ট সাহেদের মতো নিজেকে বাঁচাতে অসুস্থতার নাটক করেন শাহনেওয়াজ পারভীন মিলি। এসময় তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষা করা হলে তিনি সুস্থ বলে জানান চিকিৎসকরা। একপর্যায়ে তাদের দুজনকে আদালতে নেয় পুলিশ।

এদিকে দীর্ঘদিনের যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়ে বিতর্কিত ‘বেস্ট টিম সাতক্ষীরা’র কথিত অ্যাডমিন মোস্তাফিজুর রহমান ও তার স্ত্রী এ্যাড. শাহনেওয়াজ পারভীন মিলিকে গ্রেপ্তার করায় জেলার সর্বস্তরের মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। এমনকি সদর উপজেলার শিবপুর, পরানদহা, দেবহাটার সখিপুরসহ সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্থানে তাদের গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করেন বেস্ট টিমের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ভুক্তভোগী এলাকাবাসীরা। পাশাপাশি তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশের প্রশংসিত ভুমিকাকে সাধুবাদ ও সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জেলার সকল শ্রেনী পেশার মানুষ।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুক বেইজড ‘বেস্ট টিম সাতক্ষীরা’ নামের ভুঁইফোড় ও অবৈধ সংগঠন বানিয়ে পারিবারিক কলহ, নারী নির্যাতন, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, জমিজমা সংক্রান্ত গোলযোগ মিমাংসার নামে মানুষকে জিম্মি করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি সাতক্ষীরা জেলাব্যাপী দাপিয়ে বেড়িয়ে সাধারণ মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিলো মাদকাসক্ত মোস্তাফিজুর রহমান ও তার স্ত্রী শাহনেওয়াজ পারভীন মিলি।

এছাড়া সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ফেসবুক লাইভে শালিস বিচারের নামে প্রতিনিয়ত মানুষের সম্মানহানি ও আইন হাতে তুলে নেয়ার বহু অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।