কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড়ের পাদদেশের জমিতে করা সবজিক্ষেতে কাজ করতে গেলেই অপহরণের শিকার হচ্ছেন চাষি ও শ্রমিকরা। এভাবে মঙ্গল ও বুধবার অপহৃত ৭ জনসহ আগে অপহৃত আরও তিনজন মিলে ১০ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে দুর্বৃত্তরা। হতদরিদ্র খেটে খাওয়া এসব মানুষ মুক্তিপণ হিসেবে দুই লাখ টাকা দিয়েই বাড়ি ফিরতে পেরেছেন। কিন্তু আবার অপহরণ বা অন্য কোনো ক্ষতির আশঙ্কায় মুখ খুলছেন না কেউ।
বুধবার (২৭ মার্চ) দিনগত মাঝরাতে তারা ফেরত আসেন বলে জানিয়েছেন অপহৃতদের একজন মোহাম্মদ শাকিল মিয়ার বাবা লেদু মিয়া।
অপরদিকে পুলিশের দাবি, অভিযানের চাপের মুখে দুর্বৃত্তরা অপহৃতদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
বোদ্ধামহলের ধারণা, বার বার মুক্তিপণে ফিরে এলেও প্রশাসন তা আড়াল করে তাদের অভিযানে অপহৃতরা ছাড়া পাচ্ছে প্রচার করায় অপরাধীরা উৎফুল্ল মনে অপরাধ কর্ম ঘটাচ্ছে। তাই যাকে পাচ্ছে, তাকেই নিয়ে যাচ্ছে তারা।
ফেরত আসা অপহৃতরা হলেন, টেকনাফের হোয়াইক্যং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের করাচিপাড়ার লেদু মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ শাকিল মিয়া (১৫), বেলালের ছেলে জুনাইদ (১৩), নুরুল আমিনের ছেলে সাইফুল (১৪), শহর আলীর ছেলে ফরিদ (৩৫), নাজির হোছেনের ছেলে সোনা মিয়া (২৪), শহর মুল্লুকের ছেলে গুরা পুইত্যা (৩২) ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের রইক্ষ্যং উত্তর পাড়ার আলী আকবরের ছেলে ছৈয়দ হোসেন ওরফে বাবুল (৩৩), একই গ্রামের কালা মিয়ার ছেলে ফজল কাদের (৪৭), ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কম্বনিয়া পাড়ার ফিরোজের ছেলে মোহাম্মদ নুর (১৬) ও হ্নীলা রোজারঘোনার আমির হোসনের ছেলে অলী আহমেদ (৩২)।
লেদু মিয়া বলেন, মোহাম্মদ শাকিল মিয়াসহ ১০ জনকে গত মঙ্গল ও বুধবার বিভিন্ন সময় পাহাড়ি এলাকা থেকে দুর্বৃত্তরা অপহরণ করে। এরপর দুর্বৃত্তরা তাদের ছাড়তে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। নিরুপায় হয়ে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ হস্তান্তর করার পর তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর আগে ভিকটিমদের উদ্ধারে পুলিশের টিম একাধিকবার পাহাড়ে অভিযান চালায়।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, দিনের পর দিন পাহাড়ি দুর্বৃত্তরা যেহারে অপহরণ বাণিজ্য শুরু করেছে এতে স্থানীয় কৃষক, কাঠুরিয়াসহ কোনো ব্যক্তি গরু-ছাগল নিয়ে পাহাড়ের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে। নিরাপদে চলাচল করা ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে গেছে। দুবৃর্ত্তরা সুযোগ পেলেই মানুষ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। মঙ্গল ও বুধবার ১০ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল। ৭ জনের বিষয়টি সামনে আসে। বাকি তিনজনেরটা প্রকাশই পায়নি।
অপরদিকে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে অপহরণকারী চক্রের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর বুধবার সন্ধ্যা থেকে টেকনাফ থানা, হোয়াইক্যং ও বাহারছড়া ফাঁড়ির পুলিশের পাশাপাশি অভিযানে যোগ দেয় র্যাব সদস্যরাও। অভিযানের এক পর্যায়ে অপহৃত ১০ ভিকটিমকে পাহাড়ে ছেড়ে পালিয়ে যায় অপহরণকারী চক্রটি। এরপর তাদেরকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনার আগে বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) হ্নীলা ইউনিয়নের পানখালিতে ক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে ৫ শ্রমিক অপহরণের শিকার হন। পরে তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উদ্ধার করে বলে দাবি করা হয়। তার আগে শনিবার (৯ মার্চ) মাদরাসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে ৬ বছরের এক ছাত্রকে অপহরণ করা হলেও তাকে এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
গত ২৮ দিনে ৩০ জন অপহরণের শিকার হয়েছে। আর গত তিন বছরে টেকনাফ উপজেলায় দেড় শতাধিক লোক অপহরণের শিকার হয়েছে। অপহরণের পরে মুক্তিপণ দিতে না পারায় ইজিবাইক ও সিএনজিচালকসহ কক্সবাজার থেকে টেকনাফে বেড়াতে আসা তিন যুবকসহ মোট পাঁচজন অপহরণের কবলে পড়েন। পরে দুর্বৃত্তরা মুক্তিপণ না পেয়ে তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে পাহাড়ে রেখে পালিয়ে যায়।
Leave a Reply