জেনে নিন মুসুর এর আধুনিক চাষ পদ্ধতি

কৃষি ও সম্ভাবনা ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০১৯
  • ১০৮২
মুসুর ডাল

মাছে ভাতে বাঙ্গালী বলা হলেও মাছের তুলনায় বাঙ্গালির খাদ্য তালিকায় ডালের কিন্তু চাহিদা কম নয়। বিশেষ করে ডালের বিভিন্নরকম পদ খাবারে আনে ভিন্ন স্বাদ। বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকার ডালের চাষাবাদ হয়। আজ আমরা জানবো মুসুর এর আধুনিক চাষ পদ্ধতি।

চাষ পদ্ধতিঃ

মাটি: সুনিষ্কাশিত দোআঁশ/বেলে দোআঁশ/এঁটেল দোআঁশ মাটি মসুর চাষের জন্য উত্তম।

জমি তৈরি: একক ফসল হিসেবে আবাদের ক্ষেত্রে জমিতে সুনিষ্কাশিত ও উপর্যুক্ত রস থাকলে ৩-৪ টি গভীর চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। মসুর আমন ধান কাটার পূর্বে রিলে ফসল হিসেবে আবাদ করা হলে চাষের প্রয়োজন হয়না।

বপনের সময়: কাক্ষিত ফলনের জন্য সঠিক সময়ে বীজ বপন করা প্রয়োজন। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের ২য় সপ্তাহ পর্যন্ত (কার্তিকের ২য় সপ্তাহ – কার্তিকের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত) বীজ বপনের উত্তম সময়। গবেষণায় দেখা যায় বপনের সময় প্রতি ১০ দিন বাড়ার সাথে সাথে ফলন ২০ ভাগ হারে কমতে থাকে। তবে বারি মসুর-৮ নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত বোনা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ফলন কিছুটা কমলেও রোগের কারণে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশংকা কম।

বীজ শোধন: ডাল জাতীয় ফসল বীজ বপনের পূর্বে শোধন করলে মাটি ও বীজ বাহিত অনেক জীবাণুর আক্রমণ হতে রক্ষা পাওয়া যায়। তাই মসুর বীজ বপনের পুর্বে অবশ্যই প্রোভেক্স-২০০ ডব্লিউ পি (কার্বোজিন+থিরাম) ২.৫ গ্রাম হারে প্রতি কেজি বীজে মিশিয়ে শোধন করলে শুরুতে গোড়া পচা রোগের প্রকোপ কমে যায়।

বপন পদ্ধতি: ছিটানো ও সারি এই দুই পদ্ধতিতে মসুরের বীজ বপন করা যায়। সারিতে বীজ বপন করলে গাছ সমানভাবে বৃদ্ধি পায়। এছাড়া বিভিন্ন রকম অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা যেমন- আগাছা দমন, রোগ ও পোকা দমন, সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা এবং পরিশেষে ফসল সংগ্রহ সহজ হয়। তাই সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৫ সেন্টিমিটার দেয়া ভালো।

বীজের হার: বীজের হার ৩০-৩৫ কেজি/হেক্টর। ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে বীজের পরিমাণ সামান্য বেশি দিতে হয়। তবে বারি মসুর-৩ এর বেলায় হেক্টরপ্রতি ৩৫-৪০কেজি বীজ ব্যবহার করতে হবে। বারি মসুর-৯ জাতের ক্ষেত্রে বীজ হার ৭০-৮০ কেজি/হেক্টর। তবে আমন ধানের সাথে সাথী ফসল (রিলে ক্রপ) হিসাবে আবাদ করলে ৫০-৬০ কেজি/ হেক্টর বীজ প্রয়োজন হয়।

সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি: যে জমিতে পূর্বে মসুর চাষ করা হয় নাই সেখানে প্রতি কেজি বীজের জন্য ৫০ গ্রাম হারে অনুমোদিত অণুজীব সার বীজের সাথে মিশিয়ে বপন করতে হবে। ইনোকুলাম ব্যবহার করলে সাধারণত ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে হয় না। একক ফসলের জন্য অনুর্বর জমিতে হেক্টরপ্রতি নি¤œলিখিত সারগুলি জমি শেষ চাষের সময় ব্যবহার করতে হবে।

সারের নাম    সারের পরিমাণ/হেক্টর(কেজি)   সারের পরিমাণ/বিঘা (কেজি)

ইউরিয়া                 ৪০-৪৫                      ৫-৬

টিএসপি                 ৮০-৯০                ১০-১৩

এমপি                    ৩০-৪০                   ৪-৫

জিপসাম                 ৫০-৫৫                      ৭-৮

বোরন (প্রয়োজনবোধে) ৭-১০                    ১-১.৫

অণুজীব সার (প্রয়োজনবোধে)সুপারিশমতো     সুপারিশমতো

অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা: জমিতে আগাছা থাকলে বপনের ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে নিড়ানী দ্বারা একবার আগাছা দমন করা প্রয়োজন। অতিবৃষ্টির ফলে জমিতে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে মাটিতে রসের অভাবে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হলে গাছ গজানোর ৩০-৪০ দিনের মধ্যে একবার হালকা সেচ দিতে হবে।

ফসল সংগ্রহ: বীজ বপনের ১১০-১১৫ দিন পর মসুর সংগ্রহ করা যায়। (মধ্য-ফাল্গুন থেকে মধ্য-চৈত্র (মার্চ) মাসে ফসল সংগ্রহ করা যায়)। বারি মসুর-৯ জাতটি স্বল্প জীবনকাল হওয়ায় ৮৫-৯০ দিন পর মসুর সংগ্রহ করা যায়।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১
Design and Developed by IT Craft in association with INTENT