বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক নতুন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পেয়েছেন। নতুন ব্যাকটেরিয়াটি মাটিতে খনিজের ভারসাম্য বজায় রাখে। যা মাটিকে আরো উর্বর ও কৃষি উপযোগী করে তুলবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম অনুসারে নতুন প্রজাতির এই ব্যাকটেরিয়ার নামকরণ করেছে বিশ্বভারতীর গবেষকরা।
বিশ্বভারতী ভারতের একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার বোলপুর শহরে অবস্থিত। ১৯২১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নতুন প্রজাতির এই ব্যাকটেরিয়ার নামকরণ করা হয়েছে ‘প্যান্টোইয়া টেগোরি।
’
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক বোম্বা দাম ও পাঁচ সহকারী গবেষক রাজু বিশ্বাস, অরিজিৎ মিশ্র, সন্দীপ ঘোষ, অভিনব চক্রবর্তী, পূজা মুখোপাধ্যায় পাঁচ বছর ধরে পরিশ্রম করে এই ব্যাকটেরিয়ার খোঁজ পেয়েছেন। গবেষক দল ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ঝরিয়া কয়লাখনি সংলগ্ন এলাকায় সন্ধান চালান। সেখানেই নতুন প্রজাতির ওই ব্যাকটেরিয়ার খোঁজ মেলে। এরপর ওই ব্যাকটেরিয়ার ফেনোটাইপিক ও জেনোটাইপিক পদ্ধতিতে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়।
গবেষকরা বলছেন, নতুন প্রজাতির এই ব্যাকটেরিয়া মাটিতে সঠিক মাত্রায় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম এই তিনের অনুপাত বজায় রাখবে। উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে এই তিন উপাদান অপরিহার্য হলেও, মাটিতে এই উপাদানগুলো সহজে পাওয়া যায় না। ফলে প্রয়োগ করতে হয় রাসায়নিক সার, যা মানুষ এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ এবং অন্যান্য কারণেও মাটি দূষিত হচ্ছে। জৈব সারের ব্যবহার নিয়ে নানা গবেষণা ও অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে উপকারী এই ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পান গবেষকরা।
অ্যাসোসিয়েশন অব মাইক্রোবায়োলজিস্ট অব ইন্ডিয়া বলেছে, এই আবিষ্কারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ঘটনা প্রসঙ্গে বিশ্বভারতীর অধ্যাপক বুম্বা দাম জানান, ‘বিষয়টি অ্যাসোসিয়েশন অফ মাইক্রোবায়োলজিস্ট অফ ইন্ডিয়াতে জানানো হয়েছিল। নভেম্বর মাসের ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মাইক্রোবায়োলজিতে আবিষ্কৃত বিষয়টি প্রকাশিত হয়। এরপরেই সংশ্লিষ্ট সংস্থা নতুন আবিষ্কৃত ব্যাকটেরিয়াকে স্বীকৃতি দেয়।’ তিনি আরো জানান, কৃষি ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদানের কথা মাথায় রেখে আমরা ব্যাকটেরিয়ার নাম দিই ‘প্যান্টোইয়া টেগরী।’
এই আবিষ্কার কৃষিবিজ্ঞানে অবদান রাখবে, তা নিয়ে বেশ আশাবাদী বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সঞ্জয় কুমার মল্লিকও। আশা করা হচ্ছে, ব্যাকটেরিয়াটি মাটিতে জৈব উপাদানের মাত্রা বাড়াবে এবং রাসায়নিকের ব্যবহার কমিয়ে কৃষিকাজের উন্নতি করবে।
সূত্র: এই সময়, দ্য ওয়াল, টাইমস অব ইন্ডিয়া
Leave a Reply