শিরোনাম :
সাতক্ষীরায় বিজিবির অভিযানে সাড়ে ৩ লক্ষাধিক টাকার ভারতীয় মাদকসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ সাবেক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অভিযোগে জেলা বিএনপির কাছে লিখিত আবেদন রেমিট্যান্সে রেকর্ড, ২৬ দিনে এলো প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে আদালতের রায় ঈদের ছুটি দীর্ঘ হলেও অর্থনীতিতে স্থবিরতা আসবে না: অর্থ উপদেষ্টা বিকাশ-নগদ-রকেটে দৈনিক ৫০ হাজার টাকা লেনদেন করা যাবে রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনে ভেটো দিয়েছে ১২ দলীয় জোট ভক্তদের ধন্যবাদ জানিয়ে হামজা বললেন, ‘জুনে আবার দেখা হবে’ পর্যটক বরণে প্রস্তুত সাজেকসহ রাঙামাটির পর্যটনকেন্দ্রগুলো ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদনে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়ী করার অভিযোগ সত্য নয়’

রাস্তায় দিন কাটানো যুবকের শরীরে এখন কোটি টাকার অলঙ্কার!

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেটের সময় : বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
  • ২১১
রাস্তায় দিন কাটানো যুবকের শরীরে এখন কোটি টাকার অলঙ্কার!

তিনি পেশায় র‌্যাপার। গলায় গোটা তিন হিরার নেকলেস। পায়ে আশি হাজার টাকার জুতা। রোববার মধ্যরাতে ‘বিগ বস’ রিয়্যালিটি শোয়ের বিজেতা হয়েছেন হায়দরাবাদের এমসি স্ট্যান। ট্রফির পাশাপাশি জিতেছেন ৩১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও একটি গাড়ি। তবে এমসি স্ট্যানের জীবন এখন চাকচিক্যময় হলেও তার দু’চোখে এখনও লেগে রয়েছে দারিদ্র্যের গভীর অন্ধকার।

১৯৯৯ সালের ৩০ অগস্ট পুণের একটি বস্তিতে মুসলিম পরিবারে জন্ম এমসি স্ট্যানের। মহারাষ্ট্রের পুলিশ দপ্তরে কাজ করতেন তার বাবা। তাদের পরিবারের আর্থিক পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিল।

কিন্তু এই পরিস্থিতির মধ্যেও গানবাজনার দিকে ঝুঁকেছিলেন স্ট্যান। ১২ বছর বয়স থেকে কাওয়ালি গাইতেন তিনি। ভাইয়ের দৌলতে ভিন্ন স্বাদের গানের সঙ্গে পরিচয় হয় এমসি স্ট্যানের। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন প্রথম বার ইংরেজি ভাষার হিপ-হপ এবং র‌্যাপ গান শোনেন তিনি। গানের ভাব বোঝার জন্য ইংরেজি ভাষা শিখতে শুরু করলেন। স্কুলের পড়াশোনা শেষ না করেই তিনি র‌্যাপ গান লিখতে শুরু করেন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণও করেছিলেন তিনি।

সঙ্গীতশিল্পী এমিনেমকে গুরু মানতেন এমসি স্ট্যান। গুরুভক্তির কারণে নিজের নামও বদলে ফেলেছিলেন তিনি। এমসি স্ট্যানের আসল নাম আলতাফ শেখ। ‘স্ট্যান’ নামে এমিনেমের একটি গান মুক্তি পাওয়ার পর নিজের নাম বদলে ফেলেন আলতাফ। পড়াশোনায় মন না দিয়ে তিনি গানবাজনার দিকে ঝুঁকে পড়ায় স্ট্যানের পরিবার, এমনকি বন্ধুবান্ধবও প্রথম দিকে তাঁর পাশে দাঁড়াননি।পরে সকলে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। গানের জন্য মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি।

পরিবারের এমন অর্থাভাব সহ্য করতে পারতেন না স্ট্যান। বাড়িতে এই নিয়ে অশান্তিও করতেন তিনি। কিন্তু পরে তিনি বুঝতে পারেন যে, এমন পরিস্থিতিতে মেজাজ হারানোর কোনও অর্থ হয় না। বরং এই পরিবেশ থেকে কী ভাবে বেরোতে পারবেন তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে শুরু করেন তিনি।

এমসি স্ট্যান গান লেখার সময় নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতেন। ২০১৮ সালে প্রথম গান মুক্তি পায় তাঁর। গানের নাম ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’। এই গানের মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত জীবন ফুটিয়ে তুলেছিলেন তিনি। তার পরিবারের আর্থিক দশা থেকে শুরু করে তিনি ধীরে ধীরে কী ভাবে নেশার দিকে ঝুঁকে পড়েন— তার উল্লেখ করেছিলেন গানে। এমনকি, মায়ের সঙ্গে অনেক সময় দুর্ব্যবহার করতেন এমসি স্ট্যান। ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ গানের মাধ্যমে এই ঘটনার উল্লেখ করে তার মায়ের কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলেন তিনি। ইউটিউবে পোস্ট করার পর প্রচুর মানুষের মন ছুঁয়ে যায় এই গানটি।

কিন্তু স্ট্যান জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তার দ্বিতীয় গান ‘ওয়াটা’র মাধ্যমে। জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন দেখে তার সমসাময়িক র‌্যাপার এমিওয়ে বান্টাই র‌্যাপ গানের মাধ্যমেই এমসি স্ট্যানকে কটাক্ষ করতে শুরু করেন। স্ট্যানও বাদ যাননি। পাল্টা র‌্যাপ তৈরি করে তিনিও এমিওয়েকে জবাব দেন। গানের মাধ্যমে ঝগড়া চলতে থাকে এমসি স্ট্যান এবং এমিওয়ের। এমিওয়ের বিরুদ্ধে গান বানানোর অপরাধে হাজতবাস করতে হয় স্ট্যানকে। জেলে থাকার সময়ও থেমে থাকেননি তিনি। একের পর এক গান লিখে গিয়েছেন জেলে বসেই।

জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ২০১৯ সালে এমসি স্ট্যানের ‘খুজা মত’ গানটি মুক্তি পায়। ইউটিউবে পোস্ট করার পর এই গানটিও ভাল সাড়া পায়। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন যে, এমিওয়ের সঙ্গে তাঁর ঝামেলা পেশার জন্যই। তাঁদের মধ্যে ব্যক্তিগত কোনও সমস্যা নেই। সম্পর্কে এমসি স্ট্যানের তুতো ভাই হন এমিওয়ে। তবে, বিতর্কের সঙ্গে এমসি স্ট্যানের সম্পর্ক অনেক দিনের। প্রাক্তন প্রেমিকা আজমা শেখ তাঁর বিরুদ্ধে মুম্বইয়ের অন্ধেরি থানায় হেনস্থার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। আজমার দাবি, দীর্ঘ দিন সম্পর্কে থাকার পর তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

বিচ্ছেদের পর আজমা এবং এমসি স্ট্যান দু’জনেই একে অপরের বাড়ির ঠিকানা নিজেদের নেটমাধ্যমে পোস্ট করেন। এই ঘটনার পরেই এমসি স্ট্যান তাঁর ম্যানেজারকে আজমার বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে সেই ম্যানেজার তাঁকে মারধর করেন বলে দাবি করেন আজমা। র‌্যাপসঙ্গীতের জগতে প্রথম সারির গায়ক রফতার। শোনা যায়, এমসি স্ট্যানকে একটি উপহার দিয়েছিলেন রফতার। কিন্তু রফতারের দেওয়া উপহার সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন স্ট্যান।

উঠতি র‌্যাপ গায়কদের উপহার দিয়ে অনুপ্রেরণা দেন রফতার। এই প্রথা তিনি বরাবর মেনে এসেছেন। সঙ্গীতজগতের অনেকেই এই বিষয়ে জানতেন। কিন্তু স্ট্যান এই বিষয়ে অবগত ছিলেন না। রফতার যখন উপহার হিসাবে এমসি স্ট্যানকে একটি মাইক দিতে যান, তখন তা ফিরিয়ে দেন তিনি। উল্টে রফতারকে বলেন, ‘আমার কাছে মাইক রয়েছে। আর আলাদা করে লাগবে না।’ এই নিয়েও চর্চায় এসেছিলেন এমসি স্ট্যান।

তবে, ইনস্টাগ্রামে এমসি স্ট্যানের অনুরাগী সংখ্যা যেন কোনও বাধ মানে না। প্রতিনিয়ত তা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েই চলেছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার অনুরাগীর সংখ্যা ৮৮ লাখ।

অনুরাগীর সংখ্যা প্রচুর হলেও স্ট্যান নিজে ইনস্টাগ্রামে কাউকে ‘ফলো’ করেন না। বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায় যে, রণবীর সিংহ ইনস্টাগ্রামে হায়দরাবাদের এই র‌্যাপারকে ‘ফলো’ করেন। কিন্তু ‘পদ্মাবত’-এর এই অভিনেতাকেও ‘ফলো ব্যাক’ করেননি এমসি স্ট্যান।

এক সাক্ষাৎকারে এমসি স্ট্যান জানান যে, তার বাড়িতে কোনো টিভি ছিল না। তিনি ‘বিগ বস’-এ অংশগ্রহণ করার পর এমসি স্ট্যানের মা ৭০ হাজার টাকার একটি টিভি কিনে এনেছিলেন। স্ট্যান বলেন, ‘মা যে দিন ৭০ হাজার টাকা দিয়ে টিভি কিনে নিয়ে এল, আমার পায়ে ৮০ হাজার টাকার জুতোই ছিল।’

নামী ব্র্যান্ডের জামাকাপড়, জুতো পরে ঘুরে বেড়াতে ভালবাসেন। তবে হিরার নেকলেসের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে এমসি স্ট্যানের। ইংরেজি হরফে ‘হিন্দি’ লেখা একটি হিরার নেকলেস রয়েছে তার। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, এই নেকলেসের দাম প্রায় দেড় কোটি টাকা। হিপহপ তারকাদের মধ্যে তাঁর কাছেই সবচেয়ে লম্বা হিরের নেকলেস রয়েছে বলে একাংশের দাবি। এ ছাড়া ‘রুপি’ চিহ্ন দেওয়া হিরের একটি পেনডেন্ট রয়েছে এমসি স্ট্যানের। সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা যায় যে, ৬০ ক্যারাট হিরে দিয়ে এই পেনডেন্টটি বানানো হয়েছে।

‘বিগ বস’-এর অন্য প্রতিযোগীরা এমসি স্ট্যানের বিলাসবহুল জীবন নিয়ে তির্যক মন্তব্য করেছিলেন। সকলে তাকে নিয়ে যে এমন মজা করেন, তা বলার সময় নাকি কেঁদেও ফেলেছিলেন তিনি।তবে, ‘বিগ বস’-এর মতো প্ল্যাটফর্মে যে এমসি স্ট্যান জিতে যাবেন তা ভাবতে পারেননি তাঁর সহপ্রতিযোগীরাও। ‘অযোগ্য বিজেতা’র তকমা দিয়ে তাঁকে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি অনেকে।

প্রত্যুত্তরে এমসি স্ট্যান বলেছেন, যারা হিংসেয় জ্বলেপুড়ে মরছে তাদের বলছি, এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। মানুষের সহজাত আবেগ। ঈর্ষাপরায়ণ মানুষদের আমার ভালও লাগে। সবাই তো আর জিততে পারে না! এটা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় কী বলুন! আমিও অবাক হয়েছি বাকিদের মতো, কিন্তু ভিতর থেকে এ-ও মনে হচ্ছে যে, আমিও এই সম্মানের যোগ্য।

তবে, এখানেই পথ চলা শেষ নয় এমসি স্ট্যানের। তিনি জানিয়েছেন যে, এক সময় অর্থের অভাবে রাস্তাতেও দিন কাটাতে হয়েছে। এখন আর টাকাপয়সা নিয়ে ভাবতে হয় না তাকে।

এমসি স্ট্যানের ঝুলিতে আশিটি এমন গান রয়েছে, যা এখনও মুক্তি পায়নি। এর পরে আরও গান লিখবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। র‌্যাপ সঙ্গীতজগৎ ছেড়ে এত সহজে চলে যাওয়ার পাত্র নন বলেও জানিয়েছেন স্ট্যান।

সূত্র: আনন্দবাজার

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১
Design and Developed by IT Craft in association with INTENT