সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নিউ মার্কেট থানা ঘেরাও এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস বন্ধ করার কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মেনে নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে বৈঠকের পর সাত কলেজ শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দফতরে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র) মো. খোদা বখস চৌধুরী, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রহমতুল্লাহ, ইডেন মহিলা কলেজের সাদিয়া আফরিন মৌ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মঈনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার আমাদের ছয় দফা দাবির বিষয়ে ইতিবাচক। যেগুলো তাৎক্ষণিক পূরণ করা সেগুলো পূরণ করা হয়েছে। আমরা কর্মসূচি দিয়েছিলাম, ২৪ ঘণ্টা পর সাত কলেজের সামনে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসসহ অন্যান্য বাস চলতে দেবো না এবং নিউমার্কেট থানা ঘেরাওয়ের যে কর্মসূচি দিয়েছিলাম, সেটা আমরা প্রত্যাহার করে নিলাম।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল সকালে একটা সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়েছিল। গতকাল রাতে আমরা ছয় দফা দাবির বিষয়ে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যাতে সমস্যাটা সমাধান হয় সে জন্য ডাকা হয়।’
শিক্ষার্থী মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আমাদের দাবিগুলো এখানে উপস্থাপন করেছি। দাবিগুলো বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মেনে নেওয়া হবে বলে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।’
দাবিগুলো তুলে ধরে এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘সাত কলেজ শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘাতের দায় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যকে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে। আমাদের এখান থেকে বলা হয়েছে, উপ-উপাচার্য এখন থেকে ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজের সংশ্লিষ্ট কোনও কমিটির সঙ্গে থাকবেন না। আর তার পদত্যাগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যে সঙ্গে আলোচনা করে আগানো হবে। এ বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যে সঙ্গে বসবে।’
ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী রাকিবকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলাসহ শিক্ষার্থীদের ওপর নিউমার্কেট থানা পুলিশের যে আক্রমণ সেটার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবির বিষয়ে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘তদন্ত করার জন্য তিন দিন সময় নেওয়া হয়েছে। এই তিন দিনের মধ্যে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আমাদের জানানো হয়। আমাদের নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হয়। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর আগে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আক্রমণ করেছিল, সে জন্য ক্ষমা চাওয়াসহ আমরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির সঙ্গে বসবো সেখানে এ বিষয়টি সমাধান করা হবে। এ বিষয়ে এখান থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস আমাদের দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্তি বাতিলের যে দাবি সেটি গতকাল পূরণ হয়েছে।’
বৈঠকের বিষয়ে মইনুল ইসলাম বলেন, ‘পঞ্চম দাবি ছিল সামগ্রিক বিষয়টি সমাধানের জন্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামসহ সরকারের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বসা। সেটাও আজ আমরা বসলাম। ষষ্ঠ দাবি ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষকে এতদিন ঢুকতে দেওয়া হতো না। আমরা এখন থেকে সিটি করপোরেশনের রাস্তায় সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলাম। আমাদের জানানো হয়েছে, এটা ইতোমধ্যে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘তাদের দাবি ও সমস্যা নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা হয়েছে। আমরা সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেবো।’
এর আগে, সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের অশোভন আচরণের অভিযোগ এনে রবিবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড় ও টেকনিক্যাল মোড়ে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে রাত ১১টার দিকে সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা উপ-উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়েন। এরপর শুরু হয় সংঘর্ষ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলে। রাত সাড়ে ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ফিরে যান।
সংঘর্ষের পর সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে সংবাদ সম্মেলন করে ছয় দফা দাবি জানান সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
Leave a Reply