শিরোনাম :
সাতক্ষীরায় বিজিবির অভিযানে সাড়ে ৩ লক্ষাধিক টাকার ভারতীয় মাদকসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ সাবেক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অভিযোগে জেলা বিএনপির কাছে লিখিত আবেদন রেমিট্যান্সে রেকর্ড, ২৬ দিনে এলো প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে আদালতের রায় ঈদের ছুটি দীর্ঘ হলেও অর্থনীতিতে স্থবিরতা আসবে না: অর্থ উপদেষ্টা বিকাশ-নগদ-রকেটে দৈনিক ৫০ হাজার টাকা লেনদেন করা যাবে রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনে ভেটো দিয়েছে ১২ দলীয় জোট ভক্তদের ধন্যবাদ জানিয়ে হামজা বললেন, ‘জুনে আবার দেখা হবে’ পর্যটক বরণে প্রস্তুত সাজেকসহ রাঙামাটির পর্যটনকেন্দ্রগুলো ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদনে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়ী করার অভিযোগ সত্য নয়’

‘শিশুখাদ্যে অরাজকতা চলতে দেওয়া যায় না’

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেটের সময় : রবিবার, ১৫ মার্চ, ২০২০
  • ২১২
‘শিশুখাদ্যে অরাজকতা

গত বছর রমজানে রাজধানীর উত্তরায় একটি ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান তাদের পাঞ্জাবি বেশি দামে বিক্রি করায় জরিমানা করে দেশজুড়ে আলোচনায় এসেছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। জরিমানার ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশাসন ক্যাডারের ২২তম ব্যাচের এই কর্মকর্তাকে বদলি করা হয় খুলনায়। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পরবর্তীতে বদলির আদেশ বাতিল করা হয়। তারপর থেকে একের পর এক নকল প্রসাধনী, ভেজাল খাবার ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে সরকারের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।

আজ বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস। দিবসটি উপলক্ষে কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দেশে শিশুখাদ্যে অরাজকতা চলছে। শিশুখাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। ভবিষ্যত প্রজন্মের সুস্থ শরীর নিশ্চিত করতে শিশুখাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হচ্ছে। এভাবে শিশুখাদ্যে অরাজকতা চলতে দেওয়া যায় না। শিশুখাদ্যে ভেজাল মেশানোর বিরুদ্ধে টানা অভিযান চলবে। কসমেটিকসেও চলছে জালিয়াতি। এই জালিয়াতি বন্ধ করতে কাজ করবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাংলাদেশে আসতে না আসতেই এরইমধ্যে বাজার থেকে মাস্ক ও হ্যান্ডস্যানিটাইজার উধাও হয়ে গেছে। মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার মজুদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এরইমধ্যে রাজধানীর গুলশানে অভিযান করে জরিমানা করা হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানালেন, আমরা যখন কোনো অভিযানে যাই, সেটি ফেসবুকে সরাসরি দেখানোর ব্যবস্থা করি। যাতে করে অভিযানের বিষয়টি কেউ ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দিতে না পারে। কী কারণে জরিমানা করা হচ্ছে কিংবা কি কারণে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে তা সবাই জানতে পারে। ফেসবুকে সরাসরি অভিযান দেখানো আমাদের নতুন উদ্ভাবন। ঘটনা সরাসরি দেখানোর কারণে অনেক দোকান মালিক লজ্জা পায়। চক্ষুলজ্জার ভয়ে অনেক ব্যবসায়ী দোকানে ভেজাল ও নকল প্রসাধনী রাখা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা শুধু অভিযানই পরিচালনা করি না; দোকান মালিক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করি। বৃত্তের বাইরে গিয়ে আমরা কাজ করার চেষ্টা করি। সকাল নয়টা থেকে পাঁচটা আমাদের অফিস সময়। শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ। ছুটির সময়ে আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো, ব্যবসায়ীদেরকে আইন সম্পর্কে অবগত করা। ব্যবসায়ীরা যখন কোনো পণ্য কিনতে যায়, সেটি নকল কি না কিংবা ওই পণ্যের মেয়াদ আছে কি না এসব দেখেই যেন পণ্যটি কেনা হয়, সেসব পরামর্শ দেওয়া হয়। আমরা চকবাজার, মৌলভীবাজার, নিউমার্কেট, কারওয়ানবাজার, উত্তরা, মিরপুরসহ বিভিন্ন বাজারে গিয়ে ব্যবসায়ীদেরকে সচেতন করি।

মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, সব বাজারে আমরা পণ্যের মূল্য তালিকা টাঙ্গানো নিশ্চিত করতে চাই। এটি নিয়ে কাজ চলছে। অনেক বাজারে এরইমধ্যে পণ্যের মূল্য তালিকা টাঙ্গানো হয়েছে। অনেক বাজার বাকি আছে। আমরা সেসব বাজারে মূল্য তালিকা টাঙ্গানোর নির্দেশ দিয়েছি। আমাদের কাজ শুধু বাজার তদারকিই নয়; পণ্যের  দাম কেন বাড়ে আমরা সেটি নিয়েও অনসুন্ধান করি। উাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, হঠাৎ করে দেখা গেল, চিনির দাম বাড়ছে। চিনিরাম কেন বাড়ছে আমরা তা অনুসন্ধান করে সরকারকে জানাই। সম্প্রতি শেষ হওয়া বাণিজ্য মেলার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানালেন, একটি পণ্য কিনলে শটি ফ্রি আমরা এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। ছাড়ে ওেয়া এসব পণ্যের মান ঠিক থাকে না।

আগামী দিনের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে শাহরিয়ার জানালেন, ঢাকায় পাঁচটি বাজারে ডিজিটাল ওজন পদ্ধতি বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। যত তাড়াতড়ি সম্ভব রাজধানীর নিউমার্কেট, কারওয়ানবাজার, মোহাম্ম কৃষি মার্কেট ও টাউন হল মার্কেট এবং উত্তরা বাজারে ডিজিটাল ওজন পদ্ধতি বসানো হবে। কেউ যদি ওজনে কম দেয়, ভোক্তা চাইলে ডিজিটাল ওজন পদ্ধতিতে দেখতে পারবে। আমাদের কাছে অভিযোগ করলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে পারব। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ঢাকা শহরের ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখব।

খাদ্য, পণ্য তৈরি হয় যেসব কারখানাতে আমরা আগামীতে সেসব কারখানায় অভিযান শুরু করব। অবৈধ ও নকল পণ্যের বিরুদ্ধে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান চলবে। আমরা দেখছি, বিউটি পার্লারে অবৈধপথে আনা কসমেটিকস ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেক জায়গায় উৎপাদিত পণ্যের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও তা দোকানে বিক্রি করতে দেখছি। উৎপাদনের তারিখ লেখা থাকে না অনেক পণ্যে। অনেক জায়গায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যদ্রব্য তৈরি করছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ভেজালমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে অবৈধ ও ভেজালচক্রের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স থাকবে। একই সঙ্গে ভোক্তা অধিকার আইন সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হতে হবে। তবে আমাদের জনবলের অভাব আছে। পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় প্রতিনিয়ত বাজার তদারকি করার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। অভিযান পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। আবার কোনো অভিযান পরিচালনা করে আসার পর সেটা হালনাগাদ তথ্য আনা কঠিন হয় জনবলের অভাবের কারণে। ভোক্তার স্বার্থ রক্ষা করতে হলে আমাদের জনবল বাড়াতে হবে। সীমিত জনবল দিয়ে বিশাল কাজ পরিচালনা করা অসম্ভব। ভেজাল ও নকলের বিরুদ্ধে একজন সৈনিকের মতো কাজ করে যাওয়ার কথা জানালেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১
Design and Developed by IT Craft in association with INTENT