শুদ্ধি অভিযান এবার পুলিশে

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেটের সময় : শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
  • ১৪৬

দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্যাসিনো ও জুয়া থেকে টাকা নেওয়া এবং সহযোগিতার অভিযোগের ঘটনায় চাপের মধ্যে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সুবিধাভোগীরা। একারণে পুলিশে শুদ্ধি আভিযান হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ঠ সূত্র।

সূত্র জানায়, ক্যাসিনো কান্ডে গ্রেপ্তার হওয়া ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের থানা পর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে ঊর্ধ্বতনদের নাম বেরিয়ে আসছে। গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িত সদস্যদের নামের তালিকা করা হচ্ছে। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এরই মধ্যে দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্তসহ দুজনকে বদলি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ (ডিএমপি)।

এদিকে, তেজগাঁওয়ের ফু-ওয়াং ক্লাবে পুলিশের নিষ্ফল অভিযানের দুই দিন পর র‌্যাবের বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ, খালেদের মামলা র‌্যাবে হস্তান্তর এবং ক্যাসিনা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নেপালি নাগরিকদের পালাতে সহযোগিতা করায় চরম অস্বস্তিতে রয়েছেন পুলিশের কর্তা-ব্যক্তিরা। তবে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তির আওতায় আনতে কাজ করা হচ্ছে বলে ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ক্যাসিনোর মামলাগুলোর তদন্তকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেসব সদস্যের নাম পাওয়া যাচ্ছে, তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। মহানগরের মতিঝিল, রমনা, তেজগাঁও, মিরপুর, গুলশান ও উত্তরা বিভাগের সাবেক ও বর্তমান অনেক পুলিশ কর্মকর্তার নাম গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করছে পুলিশের একটি বিশেষ টিম। এরপর ওই তথ্য ডিএমপির সদর দপ্তর এবং পুলিশ সদর দপ্তর হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তালিকা ধরে তদন্ত করবে পুলিশের বিশেষ টিম। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত এবং সুবিধাভোগী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পেলে তাকে মামলার আসামি করা হবে।

ডিএমপি উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, পুলিশের কোনো সদস্য অপরাধ করলে তাকে আইনেই আওতায় আনা হয়। পুলিশের অপরাধ খতিয়ে দেখতে ডিএমপিতে আলাদা বিভাগ রয়েছে। ক্যাসিনো ও জুয়ার সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকলে, তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। তবে সাম্প্রতিক ঘটনায় ক্যাসিনোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের ব্যাপারে তদন্ত করতে কোনো আলাদা কমিটি গঠন করা হয়নি। ডিএমপির কর্মকর্তারা জানান, ক্যাসিনোসহ অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দুই সদস্যকে গেল বুধবার তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে। এদের একজন পুলিশ পরিদর্শক, আরেকজন সহকারী উপ-পরিদর্শক। এছাড়া ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির ঘটনায় জড়িত নেপালি নাগরিকদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করায় বৃহস্পতিবার ডিএমপির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) গোলাম হোসেন মিঠু ও রমনা থানার কনস্টেবল দীপংকর চাকমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, অধিকাংশ অবৈধ ক্যাসিনো চলত পুলিশের সহযোগিতায়। শুধু পুলিশই নয়, গোয়েন্দা সংস্থার অনেক সদস্যও এ অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তদন্তে থানা পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নামও বেরিয়ে আসছে। ঢাকা মোহামেডান ক্লাবের আয়-ব্যয়ের এক হিসাবে দেখা গেছে, অবৈধ ক্যাসিনো চালানোর সুযোগ করে দিয়ে প্রতিদিন নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পেত পুলিশ। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। তারপরও ক্যাসিনোগুলো বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেয়নি পুলিশ।

ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে যেসব পুলিশ সদস্য জড়িত প্রমাণিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে পুলিশ তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। দ্রুতই ফল পাওয়া যাবে। অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

কর্মকর্তারা বলেন, যুবলীগের খালেদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অস্ত্র ও মাদক মামলার তদন্তভার ডিবি থেকে র‌্যাবে হস্তান্তর করায় ডিএমপির ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তা নিজের নাম প্রকাশ পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। পুলিশ মামলা তদন্ত করলে প্রভাবশালী ওই কর্মকর্তারা নিজেদের আড়াল করতে পারতেন। কিন্তু মামলা র‌্যাবে যাওয়ায় সেই সুযোগও কিছুটা হাতছাড়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১
Design and Developed by IT Craft in association with INTENT