যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি আটক ইসমাইল হোসেন চৌধুরীর মুক্তির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ করছেন তার সমর্থকরা। তারা সম্রাটের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।
মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণের ভেতরে থেকে বিক্ষোভরত সম্রাটের সমর্থকদের পুলিশ বের করে দিয়ে আদালতের প্রধান ফটক আটকে দেয়। পরে সম্রাটের সমর্থকরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রায়সাহেব বাজার মোড় পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে।
জানা গেছে, সম্রাটকে আদালতে আনার খবরে যুবলীগের কয়েকশ’ নেতা-কর্মী সকাল থেকেই পুরান ঢাকার আদালত পাড়ায় ভিড় করেন। আদালতের ফটকের বাইরে ও জনসন রোডে জটলা করে তারা স্লোগান তোলেন- ‘সম্রাট ভাইয়ের মুক্তি চাই’, ‘ষড়যন্ত্রকারীদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও—।
২০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার জন্য সম্রাটকে আজ আদালতে হাজির করা হবে এমন খবরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রায়সাহেব বাজার থেকে ঢাকার সিএমএম আদালতের গেট পর্যন্ত অবস্থান নেন ঢাকার যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এদের মধ্যে প্রায় সবাই ক্যাসিনো সম্রাটের সুবিধাভোগী। দুপুর পৌনে ১২টায় সম্রাটকে পুলিশ ভ্যানে করে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় তারা জোরে জোরে স্লোগান দিতে থাকে। তারা সম্রাটের মু্ক্তি চেয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে সম্রাটের রিমান্ড শুনানি হবে বলে এ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম আইনজীবী আজাদ রহমান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ড শুনানি করবেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি আব্দুল্লাহ আবু, একই আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সাজ্জাদুল হক শিহাব, তাপস পাল ও এপিপি আজাদ রহমান।
অন্যদিকে আসামির পক্ষে শুনানি করতে গাজী জিল্লুর রহমান, আব্দুল কাদেরসহ প্রায় ২৫ জনের মত আইনজীবী আদালতে উপস্থিত রয়েছেন।
এর আগে ৯ অক্টোবর সম্রাটকে গ্রেফতার দেখানো পূর্বক ২০ দিনের রিমান্ড শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি থাকায় সম্রাটকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হচ্ছে না বলে আদালতকে চিঠি দেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির চৌধুরী। সম্রাট অসুস্থ থাকায় আদালতে উপস্থিত না করায় ঢাকার মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনসারী এ বিষয় শুনানির জন্য ১৫ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
৮ অক্টোবর সকালে বুকে ব্যথা অনুভব করায় সম্রাটকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তাকে প্রথমে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
১২ অক্টোবর বেলা ১১টা ২০ মিনিটে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয় সম্রাটকে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. মহসিন আহমেদ বলেন, সম্রাটের জন্য গঠিত সাত সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সবাই তাকে দেখেছেন। তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। বোর্ডের সদস্যরা মনে করেন, তার হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন নেই। তাই তাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর অস্ত্র আইনের মামলায় সম্রাটকে গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন রমনা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। একই দিনে মাদক আইনের মামলায় সম্রাটকে গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন একই থানার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মাহফুজুল হক ভূঞা। ওই দিন (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ইয়াসমিন আরা শুনানির জন্য ৯ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
কিন্তু ৯ অক্টোবর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি থাকায় সম্রাটকে আদালতে হাজির করা হয়নি। ফলে বিচারক শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন।
প্রসঙ্গত গত ৭ অক্টোবর (সোমবার) সম্রাটের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যা ব)। উভয় মামলার এজাহারে বলা হয়েছে— মতিঝিল, আরামবাগ, ফকিরাপুল ও পল্টনসহ রাজধানীতে ১০টি ক্লাবে ক্যাসিনো ব্যবসা ছিল সম্রাটের। সবার কাছে সে ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি দলীয় পদের অপব্যবহার করে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করত। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করত তার ক্যাডাররা। সম্রাটের কার্যালয় থেকে র্যা ব অবৈধ অস্ত্র, মাদকসহ নির্যাতন করার জন্য ইলেকট্রিক শকড দেয়ার মেশিন উদ্ধার করেছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
Leave a Reply