শিরোনাম :
সাতক্ষীরায় বিজিবির অভিযানে সাড়ে ৩ লক্ষাধিক টাকার ভারতীয় মাদকসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ সাবেক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অভিযোগে জেলা বিএনপির কাছে লিখিত আবেদন রেমিট্যান্সে রেকর্ড, ২৬ দিনে এলো প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে আদালতের রায় ঈদের ছুটি দীর্ঘ হলেও অর্থনীতিতে স্থবিরতা আসবে না: অর্থ উপদেষ্টা বিকাশ-নগদ-রকেটে দৈনিক ৫০ হাজার টাকা লেনদেন করা যাবে রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনে ভেটো দিয়েছে ১২ দলীয় জোট ভক্তদের ধন্যবাদ জানিয়ে হামজা বললেন, ‘জুনে আবার দেখা হবে’ পর্যটক বরণে প্রস্তুত সাজেকসহ রাঙামাটির পর্যটনকেন্দ্রগুলো ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদনে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়ী করার অভিযোগ সত্য নয়’

সাইফুল্লাহ লস্কর চলে যাওয়ার ১১ বছর

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেটের সময় : শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ১৮৫
সাইফুল্লাহ লস্কর
সাইফুল্লাহ লস্কর

বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি ও সাতক্ষীরা জেলা ভূমিহীন সমিতির প্রধান উপদেষ্টা কৃষকনেতা সাইফুল্লাহ লস্করকে গত ৫ ডিসেম্বর ’ ২০০৯ (৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাত আনুমানিক ৩ টার দিকে) শ্বাসরোধ করে গুপ্তহত্যা করা হয়। স্থানীয় ভূমিদস্যুরা সাতক্ষীরার তৎকালীন পুলিশ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সহায়তায় এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে বলে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অভিযোগ করে আসছে।

স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের রহস্যজনক ভূমিকা, প্রয়াত নেতার স্ত্রী ও তাঁর পরিবারের প্রতি প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের অশোভন ব্যবহার এই বিশ্বাসকে আরো দৃঢ়মূল করে। কৃষক নেতা সাইফুল্লাহ লস্কর হত্যা মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে।

এ দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক মহলে সাইফুল্লাহ লস্কর অতি পরিচিত একটি নাম। সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া লস্কর পাড়ার মৃত সামসুদ্দিন লস্কর -এর ছোট ছেলে সাইফুল্লাহ্ লস্কর ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বিত্ত-বৈভবের মধ্যে জন্মগ্রহণ করলেও ছাত্রজীবন থেকেই তিনি শোষিত-বঞ্চিত, নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের পাশে থেকে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন।

তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগঠন-সংগ্রাম করেছেন। ছাত্রজীবনে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন করেছেন, যৌবনে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ও পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতি করেছেন।

পরবর্তীতে ভাসানী ন্যাপ এবং পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতির উত্তরসূরী হিসাবে ১৯৮০ সালের ২৪ জানুয়ারী বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি কৃষক সংগ্রাম সমিতিকে সংগঠিত করতে অন্যতম নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তিনি এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে গেছেন।

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকারি দলের লোকজন প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে ভূমিদস্যু ঘের মালিকরা সাতক্ষীরা জেলার হাজার হাজার একর খাস জমি দখল করে বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছে। অপরদিকে বিরাট সংখ্যক গরীব মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হারিয়ে ভূমিহীনে পরিণত হয়েছে।

সংগ্রামে আপোষহীন, লড়াইয়ে নির্ভীক, জনগণের প্রতি নিবেদিত প্রাণ কৃষক নেতা সাইফুল্লাহ লস্কর সাতক্ষীরা জেলাতে নিরন্ন, বুভূক্ষ ভূমিহীন মানুষের একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে ভূমিহীনদের মাঝে খাস জমি বিতরণের দাবী তোলেন এবং ভূমিহীন কৃষকদের এ ন্যায্য দাবী প্রতিষ্ঠার জন্য ভূমিহীন কৃষকদের সংগঠিত করে লড়াই-সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন।

একই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ভূমিহীনদের সংগঠিত, ঐক্যবদ্ধ করতে ভূমিহীন সমিতি গড়ে তোলেন। ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালে এই সংগঠনের নেতৃত্বে ভূমিহীন কৃষক সাতক্ষীরাতে বীরোচিত সংগ্রাম গড়ে তোলে। ভূমিহীন নেত্রী জাহেদার আত্মত্যাগ এই সংগ্রামকে আরও দুর্বার করে তোলে। সরকার, প্রশাসনের কাছে বারবার দাবী জানিয়ে ভূমিহীন কৃষকেরা খাস জমি না পেয়ে অব্যাহত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিজেরাই নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে।

সাইফুল্লাহ লস্কর তার সারা জীবনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ আমাদের দেখিয়েছেন। যেখানে অত্যাচার-নিপীড়ন, শোষণ-বঞ্চনা সেখানেই লড়াইয়ে সাইফুল্লাহ্ লস্কর অগ্রসেনানীর ভূমিকা পালনে পিছপা হননি।

বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা হাওড় অঞ্চলে ভাসান পানিতে মাছ ধরার অধিকার, কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার দাবী, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, অপরিকল্পিত ও অবৈধ চিংড়ি ঘের উচ্ছেদ, ওয়াপদা বাঁধ উচ্ছেদ করে নদীতে অবাধ জোয়ার-ভাটার দাবী, ১৯৮৮ সালে বিল ডহুরী, ১৯৯০ সালে বিল ডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, বিল পাথরা, আগরহাটি-ভায়না বিলের জোয়ার-ভাটার আন্দোলন, ভৈরব নদ অবমুক্তকরণ, কপোতক্ষ নদ খননের দাবীতে আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

তিনি বিশ্বাস করতেন প্রচলিত এই শোষণমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের মুক্তি আসবে না। মানুষের মুক্তির জন্য প্রয়োজন শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে শ্রমিক-কৃষকের মৈত্রীর ভিত্তিতে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করা।

যুগে যুগে শোষক গোষ্ঠির বিরুদ্ধে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের পক্ষে যে সব সংগ্রামী মানুষেরা বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদেরকে নির্যাতন-নিপীড়নসহ হত্যা করতে প্রচলিত সমাজের কর্ণধার, রাষ্ট্র, সরকার ও শোষকগোষ্ঠী পিছ পা হয়নি। তাদের স্বীয় স্বার্থে, শ্রেণী স্বার্থে জনগণের এ সকল নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, নির্যাতনসহ হত্যা করে চলেছে।

রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় শোষকগোষ্ঠির চক্রান্তে হত্যা করা হয়েছে কৃষক সংগ্রাম সমিতির স্বাপ্নিক শেখ মাহমুদুল হক মনিপীর, কৃষক সংগ্রাম সমিতির সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সাইফুল্লাহ্ লস্কর, কোষাধ্যক্ষ ও ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি জিন্নাত আলী বরুন, রাজবাড়ী জেলা সভাপতি আতিয়ার রহমান, সাতক্ষীরা তালা থানার কৃষকনেতা রওশন আলী, তারাপদ, ডহুরী আন্দোলনের নেতা গোবিন্দ দত্ত, গোবিন্দ সরকার, খুলনা পাইকগাছা থানার করুনাময়ীদের মত সৎ-সংগ্রামী-লড়াকু নেতাদের।

জনগণের নেতাদের হত্যা-খুন-গুম এর মধ্য দিয়ে কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী নিজেদের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ ও শোষণের ধারা অব্যাহত রাখতে চায়। এ কারণে বার বার হত্যাকা- সংঘটিত হয়। হত্যা করে ব্যক্তি সাইফুল্লাহ্ লস্করদের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয়া যায়, কিন্তু জনগণের সংগ্রাম স্তব্ধ করা যায় না। এই সংগ্রাম বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত চলবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১
Design and Developed by IT Craft in association with INTENT